শনিবার, ১৮ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

হঠাৎ ঝড়ের তাণ্ডব প্রাণ গেল ৯ জনের

ভাঙল বায়তুল মোকাররমের প্যান্ডেল

নিজস্ব প্রতিবেদক

হঠাৎ ঝড়ের তাণ্ডব প্রাণ গেল ৯ জনের

হঠাৎ ঝড়ে গতকাল সন্ধ্যায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ পাশে মুসল্লিদের নামাজ আদায়ের জন্য তৈরি প্যান্ডেল বিধ্বস্ত হয় -বাংলাদেশ প্রতিদিন

হঠাৎ ঝড়ের কবলে পড়ে রাজধানীসহ সারা দেশে অন্তত ৯ জনের প্রাণহানি হয়েছে। এ ঘটনায় ভেঙে গেছে রাজধানীর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ পাশের মুসল্লিদের নামাজ আদায় করার জন্য তৈরি করা প্যান্ডেল। এ সময় শফিকুল (৩৮) নামে এক মুসল্লি নিহত হন। আহত হয়েছেন অন্তত ৩২ জন। এদের মধ্যে ২৭ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরে যান বলে জানা গেছে।

গতকাল সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঝড় শুরু হলে এসব হতাহতের ঘটনা ঘটে। রাতে আহতদের দেখতে ঢামেক হাসপাতালে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধি দল যায় বলে জানা যায়। বায়তুল মোকাররমের দুর্ঘটনাসহ রাজধানীতেই মারা গেছেন ৪ জন। আহত হয়েছেন ৩৬ জন। ঝড়ের সময় বাড্ডা লিংক রোডে প্রাণ-আরএফএল ভবনের পাশের একটি দেয়াল ভেঙে চাপা পড়ে চারজন আহত হন। তাদের ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে ঢামেক ও পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাদের মধ্যে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।  নিহতদের মধ্যে- বুলবুল বিশ্বাস (২৭)। তিনি বাসের চেকার। বাড়ি নড়াইলের নরাগাথী উপজেলার মহাজন গ্রামে। অপরজন তপন (২৮)। তিনি চা দোকান কর্মচারী। তার বাড়ি নীলফামারীর সোনাপুরী উপজেলায়। তবে পঙ্গু হাসপাতালে মারা যাওয়া অপর ব্যক্তির পরিচয় জানা যায়নি। মোহাম্মদপুরে এবং গুলশান-১ এ যাত্রী ছাউনির নিচে গাছ ভেঙে চাপা পড়ে আহত হয়েছেন ৪ জন। তাদেরও ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয় বলে জানা গেছে।  এদিকে বায়তুল মোকাররমে ঝড়ে প্যান্ডেল ভেঙে যাওয়ার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সচিবের নেতৃত্বে এই কমিটিকে আগামী মঙ্গলবারের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকার বাইরে নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীতে বজ্রপাতে আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। নীলফামারী ও নোয়াখালীতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অর্ধশত ঘরবাড়ি এবং সহস্রাধিক গাছপালা।

প্রত্যক্ষদর্র্শী সূত্রে জানা গেছে, রমজান উপলক্ষে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ পাশে মুসল্লিদের নামাজ আদায়ের জন্য বাঁশ, ত্রিপল ও তাঁবু দিয়ে অস্থায়ী কাঠামোর প্যান্ডেল তৈরি করা হয়। গতকাল ইফতারের পর ওই প্যান্ডেলের নিচে অন্তত ৫০০ লোক নামাজে দাঁড়ান। এর কিছু সময় পরই হঠাৎ ঝড় শুরু হলে ভেঙে পড়ে প্যান্ডেলটি। এমন পরিস্থিতিতে মানুষজন দিগি¦দিক ছোটাছুটি করে আশপাশে চলে যান। তখনো ভেঙে পড়া প্যান্ডেলের নিচে অন্তত ৫০ জন লোক আটকে পড়ে। পরে মসজিদের ভিতরের এবং আশপাশের দোকানদাররা ছুটে এসে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেন। এ সময় তারা ৩২ জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করেন। তাদের ঢামেক হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক শফিকুলকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ছাড়া আরও ৭-৮ জনের অবস্থা গুরুতর বলে জানিয়েছেন উদ্ধার কাজে সংশ্লিষ্টরা। ফায়ার সার্ভিসে খবর দিলে দুটি ইউনিট উদ্ধার তৎপরতায় যোগ দেয়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সার্চ অভিযান শেষে রাত ৯টা ১০ মিনিটে উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত করে। শফিকুলের শ্যালক সাইফুল ইসলাম জানান, তারা রাজধানীর কদমতলী পোস্তগোলা এলাকার একটি টায়ার কারখানায় কাজ করেন এবং সেখানেই থাকেন। এ দিন তারা বায়তুল মোকাররম মসজিদে ইফতার শেষে মাগরিবের নামাজে দাঁড়ান। সে সময় ঝড় শুরু হলে প্যান্ডেলটি ভেঙে পড়ে। এতে তারা দুজনই আহত হন।

গুরুতর আহতদের মধ্যে রয়েছেনÑ পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) শরিফুল ইসলাম, মুসল্লি বদিউজ্জামান রুবেল, বিপ্লব, আবদুল কুদ্দুস, জানে আলম, শফিকুর রহমান সবুজ, মনির হোসেন, তারেক রহমান, মাসুদ, জহিরুল ইসলাম, সজীব, আজগর হোসেন, আরিফুল ইসলাম, হেলাল উদ্দিন। তাৎক্ষণিকভাবে বাকিদের পরিচয় জানা যায়নি।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদর দফতরের ডিউটি অফিসার মাহফুজ জানান, খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে সার্চ অভিযান শুরু করে। তবে এ সময় কোনো আহত কিংবা নিহত কাউকে পাওয়া যায়নি। তার আগেই উদ্ধার হওয়া একজনের মৃত্যু হয়েছে এবং আহত ৩২ জনের মধ্যে ২৭ জন ঢামেক হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছে। 

আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা জানানÑ 

নওগাঁয় বজ্রপাতে দুই শ্রমিকের মৃত্যু : গতকাল বিকালে নওগাঁর পোরশা উপজেলার গানোইর বিলে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে হাসান (৩০) ও শফিনুর (২৮) নামে দুই শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। আর এ ঘটনায় বুলবুল আহমেদ (৩২) নামে একজন আহত হয়েছেন। নিহত হাসান পোরশা উপজেলার গানোইর গ্রামের মতিউর রহমানের ছেলে। শফিনুর চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার বিটলিটোলা গ্রামের আজাদ হোসেনের ছেলে। রাজশাহীতে ঝড়ের কবলে পড়ে জেলার বানেশ্বরে সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুস সোবহান সরকারের মৃত্যু হয়েছে।  এ ছাড়া নীলফামারী ও নোয়াখালীর কবিরহাটে হঠাৎ ঝড়ে অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি ও সহস্রাধিক গাছপালা উপড়ে পড়েছে। ক্ষয়ক্ষতি হয় বিভিন্ন ফসলের।

   স্থানীয়রা জানান, নীলফামারীতে প্রথমে শীলাবৃষ্টির পর প্রচ  ঝড়ো হাওয়া শুরু হয়। এর ফলে বেশ কিছু ঘর ভেঙে পড়ে ও টিনের চালা উড়ে যায়। উপড়ে পড়ে অসংখ্য গাছপালা। বেশি ক্ষতি হয়েছে পাকা ধান, কাঁচামরিচ, আম, কাঁঠাল ও লিচুর। এতে কয়েকটি বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে যায়। কয়েকটি গাছ তারের ওপর পড়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার ধানসিঁড়ি ইউনিয়নে হঠাৎ ঝড়ের তা বে অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি ও সহস্রাধিক গাছপালা ভেঙে পড়ে। এতে নারী-শিশুসহ আহত হয়েছে অন্তত ১০ জন। 

সর্বশেষ খবর