বুধবার, ২২ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

ঢাকা ওয়াসার পানি ৩৪ পয়েন্টে দুধ পরীক্ষা হবে সারা দেশে

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর ৩৪টি পয়েন্ট থেকে ঢাকা ওয়াসার পানির নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। পানি পরীক্ষার জন্য আদালতের নির্দেশে গঠিত চার সদস্যের কমিটিকে ২ জুলাইয়ের মধ্যে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। অন্যদিকে সারা দেশ থেকে দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্যপণ্য এবং পশুখাদ্যের নমুনা বাজার থেকে সংগ্রহ করে তা পরীক্ষার প্রতিবেদন ২৩ জুন আদালতে দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। গতকাল হাই কোর্টের পৃথক দুটি বেঞ্চ ভিন্ন ভিন্ন মামলায় এসব নির্দেশনা দেয়। পানি পরীক্ষার ব্যয় সংকোচন ও সার্বিক চিত্র পাওয়ার বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. সাবিতা রিজওয়ানা রহমান আদালতে তার মতামত তুলে ধরার পর গতকাল বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ ৩৪ পয়েন্ট থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার নির্দেশ দেয়। এদিন আদালতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু। রিটকারীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তানভীর আহমেদ। হাই কোর্ট বলেছে, আইসিডিডিআরবি, বুয়েটের ব্যুরো অব রিসার্চ, টেস্টিং অ্যান্ড কনসোলেশন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের ল্যাবে ওয়াসার পানির ওই নমুনা পরীক্ষা করতে হবে। প্রতিটি নমুনা পরীক্ষায় ৫ হাজার টাকা খরচ ধরে মোট ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা ওয়াসাকে দিতে বলা হয়েছে। আর স্থানীয় সরকার সচিবকে বলা হয়েছে ওয়াসার কাছ থেকে এ টাকা আদায় করে দিতে। আদেশে আদালত চারটি উৎস (বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, ভূগর্ভস্থ ও ভূমিস্থ), ১০টি বিতরণ জোন (যা মডস জোন নামে পরিচিত) এবং গ্রাহকদের অভিযোগের ভিত্তিতে ১০টি ঝুঁকিপূর্ণ ও দৈবচয়নের ভিত্তিতে ১০টি স্থান থেকে নমুনা সংগ্রহ করতে বলেছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পক্ষে বৃহস্পতিবার একটি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। গত তিন মাসে ওয়াসার হটলাইনে পাওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে ১০টি মডস জোনের ৫৯টি এলাকার পানিতে ময়লা থাকার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি বলে সেখানে উল্লেখ করা হয়। ওয়াসার ১০টি জোনের প্রতিটি এলাকা থেকে ৩৫৫টি নমুনা সংগ্রহ করে তিনটি ল্যাবরেটরিতে রোগজীবাণু ও ভৌত রাসায়নিক পরীক্ষা করতে মোট ৭৫ লাখ ৬১ হাজার ৫০০ টাকা খরচ হবে বলে সেদিন হিসাব দিয়েছিল ওয়াসা। দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য এবং পশুখাদ্য পরীক্ষার নির্দেশ : সারা দেশ থেকে দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্যপণ্য এবং পশুখাদ্যের নমুনা বাজার থেকে সংগ্রহ করে তা পরীক্ষার প্রতিবেদন ২৩ জুন আদালতে দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। বিএসটিআই ও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে এ প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ল্যাবের পরিচালক প্রফেসর ড. শাহনীলা ফেরদৌসীর আদালতে দেওয়া বক্তব্য লিখিতভাবে এক মাসের মধ্যে জমা দিতে বলা হয়েছে। গতকাল বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়। আদালতে প্রফেসর ড. শাহনীলা ফেরদৌসী বলেন, ‘আমাদের পরীক্ষার ফলাফল সঠিক আছে কি না তা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যাচাই করা হয়। পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়ার পরই তা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রকাশ করা হয়। এ ক্ষেত্রেও সেটা করা হয়েছে।’ শুনানিকালে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ল্যাবে নমুনা সংগ্রহ ও তা পরীক্ষা নিয়ে বিএসটিআই প্রশ্ন তোলায় বিএসটিআইর প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করে আদালত।

আদালত বলেছে, ‘জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ল্যাব আন্তর্জাতিক চুক্তির আওতায় প্রতিষ্ঠিত। এ প্রতিষ্ঠান তার পদ্ধতিতে এবং আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্যপণ্য এবং পশুখাদ্য পরীক্ষা করেছে।’ আদালত বিএসটিআইর আইনজীবী সরকার এম আর হাসানকে উদ্দেশ করে বলে, ‘অন্যের পরীক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন আপনারা, নিজেরা কেন পরীক্ষা করেন না। আপনারা কেন এত দিনেও পরীক্ষা করে রিপোর্ট দিতে পারলেন না। আপনারা কাজ করার দায়িত্ব নিয়েছেন কিন্তু দায়িত্ব পালন করছেন না। আপনাদের পরীক্ষায় সত্য উদ্ঘাটন হচ্ছে না কেন? শুধু এসি রুমে বসে থাকবেন, তা হবে না।’ আন্তর্জাতিক পরীক্ষায় পাওয়া যাচ্ছে কিন্তু আপনারা পারছেন কেনÑ এ প্রশ্ন রাখে আদালত। এ পর্যায়ে বিএসটিআইর আইনজীবী যৌথ টিম গঠন করে বাজার থেকে নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষার নির্দেশনা চান।

সর্বশেষ খবর