শুক্রবার, ২৪ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

ইতিকাফ

মোহাম্মদ আবদুল মজিদ

ইতিকাফ

মাহে রমজানের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো ইতিকাফ। ইতিকাফের শাব্দিক অর্থ অবস্থান করা। শরিয়াতের পরিভাষায় ‘ইতিকাফ’ বলা হয়-, পুরুষের জন্য নিয়তসহ এমন মসজিদে অবস্থান করা যেখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। আর মহিলাদের রমজান মাসের শেষ দশ দিনের জন্য ইতিকাফ হলো, নিয়তসহ ঘরের ভিতর নামাজের জন্য নির্দিষ্ট কোনো স্থানে অবস্থান করা। রসুল (সা.) রমজান মাসের শেষ দশ দিনে ইতিকাফ করতেন। ইতিকাফ করা সুন্নতে কেফায়া। সবার পক্ষ থেকে একজন আদায় করলে সুন্নত আদায় হয়ে যাবে। আর একজনও না করলে মহল্লার সবাই গোনাহগার হবে। রমজান মাসের ২০ তারিখ আসরের নামাজের পর হতে মসজিদে প্রবেশ করতে হয়, সুন্নতে মোয়াক্কাদা। ২৯ বা ৩০ তারিখ শাওয়ালের চাঁদ দেখার পর মাগরিবের পূর্বে ইতিকাফ শেষ করতে হয়। ১০ দিন ইতিকাফ করা সম্ভব না হলে শেষের একদিন ইতিকাফ করা যায়। ইতিকাফ সহিহ হওয়ার শর্ত হলো, মুসলমান হওয়া, জ্ঞানবান হওয়া, জানাবাত এবং হায়িজ ও নিফাস থেকে পবিত্র হওয়া। ইতিকাফের অবস্থায় নেকের কথা ছাড়া অপ্রয়োজনীয় কথা না বলা। ইতিকাফের অবস্থায় কোরআন মজিদ তিলাওয়াত করা, হাদিস পাঠ করা, ইলম শিক্ষা করা ও শিক্ষা দেওয়া, রসুলুল্লাহ (সা.) ও অন্যান্য নবীর সিরাত পাঠ করা ও ধর্মীয় গ্রন্থাদি লেখা। ইতিকাফকারী ব্যক্তি আল্লাহর নৈকট্য লাভের নিমিত্তে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে তার ইবাদতে নিয়োজিত রাখবে এবং দুনিয়াদারি কাজকর্ম থেকে দূরে থাকবে। এ সময় স্ত্রী সংস্রবও নিষিদ্ধ। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নির্দেশ- ‘ওয়ালা তুবাশিরু হুন্না ওয়া আনতুম আকিফুনা ফিল মাসজিদ’ অর্থাৎ আর তোমরা যখন মসজিদে ইতিকাফ করবে তখন স্ত্রীদের সঙ্গে সহবাস করবে না। (২ সূরা আল বাকারা আয়াত ১৮৭) হজরত সৈয়দ কুতুব শহীদ তার তাফসির ‘ফি যিলালিল কোরআন’ এ নির্দেশনা সম্পর্কে ব্যাখ্যায় বলেছেন, (ইতিকাফের) সময়টি একান্তভাবে আল্লাহর সান্নিধ্যলাভের জন্যই নির্দিষ্ট, আর এ কারণে রোজার মাসে অন্য সময়ে রাতে স্ত্রী সমম্ভোগ বৈধ হলেও ইতিকাফের সময় স্ত্রীর সঙ্গে মেলামেশাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যাতে করে পরিপূর্ণভাবে এই সময়ে নিজেকে আল্লাহর কাছে সমর্পণ করা যায়।

ইতিকাফের জন্য নিয়ত করা ইতিকাফের শর্ত। বিনা নিয়তে ইতিকাফ করলে সহিহ হবে না। এমন মসজিদে ইতিকাফ করা উচিত যেখানে নামাজের জামায়াত হয়। ইতিকাফ এর জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ স্থান হলো মসজিদুল হারাম, এরপর মসজিদে নববী (সা.), তারপর বায়তুল মোকাদ্দাস, তারপর জামে মসজিদ এবং এরপর যে মসজিদে মুসল্লির সংখ্যা বেশি। মসজিদে ইতিকাফ-এর নিয়তের সঙ্গে অবস্থান করাই উত্তম। বিনা কারণে মসজিদ হতে বের হলে ইতিকাফ ভঙ্গ হবে। বিনা ওজরে দিনে বা রাতে সামান্য সময়ের জন্য মসজিদ হতে বের হলেও, ইচ্ছা কিংবা ভুল করে, ইতিকাফ ভঙ্গ হবে। একইভাবে মহিলা তার ঘরের নির্ধারিত স্থান থেকে বের হবে না। তবে পেসাব, পায়খানা ও জুমার নামাজ আদায় ইত্যাদি ওজরের কারণে মসজিদ হতে বের হওয়া যাবে। ইতিকাফের স্থানেই ঘুম ও পানাহার বিধেয়। এর জন্য মসজিদ থেকে বের হওয়ার প্রয়োজন নেই। মসজিদ ভেঙে যাওয়ার কারণে কিংবা জোরপূর্বক বের করে দেওয়ার কারণে ইতিকাফকারী ব্যক্তি যদি মসজিদ হতে বের হয়ে অন্য মসজিদে সঙ্গে সঙ্গে চলে যায়, তবে এর ফলে ইতিকাফ ফাসিদ বা ভঙ্গ হবে না। জান বা মালের ক্ষতির আশঙ্কা হলে একই বিধান প্রযোজ্য হবে। অসুস্থ ব্যক্তির সেবা করার জন্য, কোনো মৃত ব্যক্তিকে দেখার উদ্দেশ্যে কিংবা তার জানাজা আদায়ের জন্য ইতিকাফ হতে বের হলে ইতিকাফ ফাসিদ হয়ে যাবে। তবে কেউ ইতিকাফের নিয়তের সময় যদি রোগীর সেবা, জানাজার নামাজ ও ইলমের মজলিসে যাওয়ার মানত করা হয় তাহলে এসব তার জন্য জায়িজ হবে। ইতিকাফকারী ব্যক্তি মুয়াজ্জিন হোক বা আর অন্য কেউ হোক মিনারায়, এমনকি মিনারা মসজিদের বাইরে হলেও, আরোহন করলে ইতিকাফ ফাসিদ হবে না।

লেখক : সাবেক সচিব ও এন বি আরের সাবেক চেয়ারম্যান।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর