শনিবার, ২৫ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

মন্ত্রিসভা গঠনের প্রস্তুতি মোদির

দলে পদত্যাগের প্রস্তাব রাহুলের, বামদের জামানত বাজেয়াপ্ত, চলছে ফল বিশ্লেষণ

নয়াদিল্লি ও কলকাতা প্রতিনিধি

মন্ত্রিসভা গঠনের প্রস্তুতি মোদির

নিরঙ্কুশ জয়ের পর উৎফুল্ল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বিজেপি প্রেসিডেন্ট অমিত শাহ -এএফপি

আগামী সপ্তাহেই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ফের শপথ নিতে পারেন নরেন্দ্র মোদি। অবশ্য এখনো দিনক্ষণ ঠিক করা হয়নি। ইতিমধ্যেই গতকাল সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠক করেছেন মোদি। সেখানে নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের প্রস্তাবও পাস হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদিসহ মন্ত্রিসভার সদস্যরা রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র তুলে দিয়েছেন। আজ নয়াদিল্লির সেন্ট্রাল হলে বৈঠকে বসবে বিজেপির সংসদীয় কমিটি। তবে সবকিছু ছাপিয়ে জল্পনা-কল্পনা চলছে কারা থাকছেন মন্ত্রিসভায় সেটা নিয়েই।

জানা যায়, শুক্রবার বিকালেই সাউথ ব্লকে ক্যাবিনেট মন্ত্রীদের নিয়ে শেষ বৈঠকে বসেন মোদি। বৈঠকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সব সদস্যের উপস্থিতিতে বর্তমান ১৬তম লোকসভা ভেঙে দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। পরে তা প্রস্তাব আকারে পেশ করা হয় রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের কাছে। বৈঠক শেষে রাষ্ট্রপতি ভবনের উদ্দেশে রওনা দেন মোদি। সেখানে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে দেখা করে মন্ত্রিসভা ভেঙে দেওয়ার প্রস্তাব পেশের পাশাপাশি বর্তমান মন্ত্রিসভার সদস্যদের ইস্তফা পত্র তুলে দেন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিজের ইস্তফা পত্রও তুলে দেন মোদি। রাষ্ট্রপতি তা গ্রহণও করেন এবং নতুন মন্ত্রিসভা গঠন না হওয়া পর্যন্ত কার্যভার চালিয়ে যাওয়ার অনুরোধ জানান ।

ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর, সবকিছু ঠিক থাকলে ৩০ মে দ্বিতীয়বারের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে পারেন বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদি। ৬৮ বছর বয়সী মোদি হবেন দেশটির ১৫তম প্রধানমন্ত্রী। ওইদিন রাষ্ট্রপতি ভবনে বিকাল ৪টার পর হতে পারে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান। শপথবাক্য পাঠ করাবেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। মোদি ছাড়াও আরও বেশ কিছু মন্ত্রী শপথ নিতে পারেন। যদিও মোদির শপথগ্রহণ নিয়ে সরকারিভাবে বিজেপির তরফে কিছুই ঘোষণা করা হয়নি। খুব শিগগিরই দলের তরফে শপথের দিন ঘোষণা হতে পারে। এদিনের ক্যাবিনেট বৈঠকে নতুন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার আয়তন নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়। সূত্রের খবর, নতুন মন্ত্রিসভায় মোদির বিশ্বস্ত সেনাপতি বিজেপি সভাপতি অমিত শাহকে অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে। বাংলায় একলাফে ১৮ আসনে জয়ের পর এ রাজ্য থেকেও একাধিক ব্যক্তিকে মন্ত্রিসভায় আনা হতে পারে বলে খবর। তবে মন্ত্রিসভার ‘বিগ-৪’ অর্থাৎ স্বরাষ্ট্র, অর্থ, পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা-এই চার মন্ত্রণালয়ের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। শারীরিক অসুস্থতার কারণে এবার অব্যাহতি দেওয়া হতে পারে অরুন জেটলি ও সুষমা স্বরাজকে। এ কারণেই চলতি নির্বাচনে লড়াইয়ের ময়দানে দেখা যায়নি তাদের। অন্যদিকে রাহুল গান্ধীকে হারানোর পুরস্কার পেতে পারেন স্মৃতি ইরানি। বস্ত্র মন্ত্রণালয় থেকে তাকে দেওয়া হতে পারে আরও কোনো গুরুত্বপূর্ণ দফতর।

শপথ নেওয়ার আগে ২৯ মে গুজরাটে গিয়ে মা হীরাবেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন মোদি, মায়ের কাছ থেকে আশীর্বাদ নেবেন ছেলে। এর আগে ২৮ মে বারানসি সফর করবেন মোদি। সেখানে একটি বিশাল বিজয় মিছিলও করতে পারেন।

দলের তরফে নতুন সরকারের শপথ গ্রহণের দিন নিয়ে কিছু বলা না হলেও জোর তৎপরতা শুরু হয়েছে। ২০১৪ সালের মে মাসে মোদির শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সার্কভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর প্রতিনিধিরা। ভারতের বার্তা ছিল ‘প্রতিবেশী আগে’। কিন্তু এবার কি তেমন ছবি দেখা যাবে? ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও রাষ্ট্রপতি ভবন সূত্রে খবর, এখন পর্যন্ত তেমন কোনো পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি। তবে একটি সূত্র বলছে, চলতি মাসের গোড়াতেই দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানেই প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রধানদের আমন্ত্রণ জানানো হবে কিনা এবং অন্য কোনো বিদেশি রাষ্ট্রনেতাদের আমন্ত্রণ করা হবে কিনা- তা নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়। ২০১৪ সালে কেন্দ্রে প্রথমবারের জন্য ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদির প্রথম বিদেশ সফর ছিল ভুটান। জল্পনা চলছে এবারও তার প্রথম বিদেশ সফর হতে পারে সার্কভুক্ত দেশ ভুটান। বৃহস্পতিবার বিপুল জয়ের পর বিদেশ থেকে মোদিকে উদ্দেশ করে প্রথম অভিনন্দন বার্তা আসে ভুটান থেকেই। নতুন প্রধানমন্ত্রী লোটে থেশরিং টেলিফোনে মোদিকে ফোন করে সে দেশে যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানান। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পরই আগামী জুনে দুটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সামিটে যোগ দিতে পারেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। ১৩-১৪ জুন সাংহাই করপোরেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) সামিটে যোগ দিতে পারেন, যেখানে রাশিয়া, চীন, পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং মধ্য এশিয়ার দেশগুলো অংশ নেবে। ওই বৈঠকের ফাঁকেই পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গেও বৈঠকের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। জুনের শেষ সপ্তাতে জাপানের ওসাকা শহরে জি-২০ সামিটেও যোগ দেবেন মোদি। আগস্টের মাঝামাছি ফরাসি প্রধানমন্ত্রী ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর আমন্ত্রণে জি-৭ বৈঠকে থাকতে পারেন।

বৃহস্পতিবার ভারতের সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল বের হয়। লোকসভার ৫৪৩ আসনের মধ্যে (ভোট হয় ৫৪২টি আসন) বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট পায় ৩৫২টি আসন, কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোট ৯১টি এবং অন্যরা ৯৮টি আসনে জয় পায়।

প্রথমেই আদভানি-জোশির বাড়িতে মোদি : বিশাল জয়ের পর গতকাল নরেন্দ্র মোদি তার দিন শুরু করলেন বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আদভানি এবং মুরলিমনোহর জোশির বাড়িতে গিয়ে। এই দুই নেতার সঙ্গে বৈঠক করে নিজের কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। আর বললেন, গুরুজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও আশীর্বাদ নেওয়াটাই ভারতীয় জনতা পার্টির পরম্পরা। প্রথমে নয়াদিল্লিতে বিজেপির প্রতিষ্ঠাতা লালকৃষ্ণ আদভানির বাড়িতে যান নরেন্দ্র মোদি ও বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। আদভানির বাড়িতে গিয়ে তার আশীর্বাদ নেন তারা। পরে নিজেই সেই ছবি টুইট করে মোদি বলেন, আদভানিজির সঙ্গে কথা বলেছি আমি। বিজেপির আজকের সাফল্য সম্ভব হয়েছে তার মতো মহান ব্যক্তিদের অবদানের জন্যই। দশকের পর দশক ধরে পরিশ্রম করে তারা এই দল তৈরি করেছেন। এরপরই তিনি যান আরেক বর্ষীয়ান নেতা মুরলিমনোহর জোশির বাড়িতে। সেই সাক্ষাতের কথা জানিয়ে টুইটারে মোদি বলেন, ডক্টর মুরলিমনোহর তার অবদান স্মরণীয়। বিজেপিকে শক্তিশালী করতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন। অনেক সংগঠককেও তিনি নিজে হাতে তৈরি করেছেন, যার মধ্যে আমিও একজন।

রাহুলের পদত্যাগের প্রস্তাব, সোনিয়ার না : ভারতে লোকসভা নির্বাচনে ভূমিধস জয় পাওয়া ক্ষমতাসীন এনডিএ জোটের বিপরীতে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোট পেয়েছে মাত্র ৯২ আসন। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে এটি দ্বিতীয় পরাজয়। তাই ব্যর্থতার দায় নিয়ে কংগ্রেস সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগের প্রস্তাব দিয়েছেন রাহুল গান্ধী। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে অনুষ্ঠেয় কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সভায় বিষয়টি তোলা হবে। সেখানেই বিষয়টি ফয়সালা হবে। তবে কংগ্রেসের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও ইউপিএ জোট নেতা সোনিয়া গান্ধী তার এ প্রস্তাবে সায় দেননি। ২০১৪ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের পরও রাহুল গান্ধী পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন। অবশ্য এবারের নির্বাচন রাহুল গান্ধীর জন্য আরও বড় ধাক্কা। এ নির্বাচনে রাহুল নিজের পৈতৃক আসনটিও খুইয়েছেন। যেই আমেথিতে ৪০ বছর ধরে কংগ্রেসের আধিপত্য সেখানে বিজেপির প্রার্থী স্মৃতি ইরানির কাছে হেরেছেন রাহুল।

কংগ্রেসে পদত্যাগের হিড়িক : কংগ্রেসজুড়ে শুরু হয়েছে পদত্যাগের হিড়িক। হারের ধাক্কা সবচেয়ে বেশি উত্তরপ্রদেশে। একসময় উত্তরপ্রদেশে রাজত্ব করা কংগ্রেস এবার দলের সভাপতি রাহুল গান্ধীকেও জেতাতে পারেনি। দায় নিয়ে পদত্যাগের চিঠি শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন উত্তরপ্রদেশের কংগ্রেস সভাপতি রাজ বব্বর। তিনি নিজেও বিজেপির কাছে বিপুল ভোটে হেরেছেন উত্তরপ্রদেশের ফতেহপুর সিক্রি কেন্দ্র থেকে। টুইট করে তিনি বলেছেন, উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের এই ফল অত্যন্ত হতাশাজনক। আমি সঠিকভাবে আমার দায়িত্ব পালন করতে পারিনি। দলীয় নেতৃত্বকে আমি আমার বক্তব্য জানাব। শুধু উত্তরপ্রদেশ নয়, কর্ণাটক এবং উড়িষ্যা থেকেও কার্যত মুছে গেছে কংগ্রেস। উড়িষ্যার বিধানসভা বা লোকসভা, কোনো নির্বাচনেই দাগ কাটতে পারেনি তারা। সেই দায় মাথায় নিয়ে ইতিমধ্যেই পদত্যাগ করেছেন উড়িষ্যার কংগ্রেস সভাপতি নিরঞ্জন পট্টনায়ক। পদত্যাগ করেছেন কর্ণাটকে দলের প্রচারের দায়িত্বে থাকা এইচ কে পাটিলও।

বামনেতাদের জামানত বাজেয়াপ্ত : জামানত বাজেয়াপ্ত করতে চলেছে ভারতের নির্বাচন কমিশন। একসময় পশ্চিমবঙ্গে রাজত্ব করা বাম প্রার্থীদের জামানত বাজেয়াপ্ত হতে পারে। একমাত্র যাদবপুর কেন্দ্র থেকে ২১.০৪ শতাংশ ভোট পেয়েছেন বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য। রাজ্যে বাকি আসনে বামেরা সংকটে। কোনো কেন্দ্রেই তারা প্রয়োজনীয় ১৬.৬% এর বেশি ভোট পায়নি। নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী, ভোটের প্রার্থীরা নির্বাচনের সিকিউরিটি ডিপোজিট হিসেবে ২৫ হাজার টাকা করে পেয়েছিল কমিশনের তরফ থেকে। নিয়ম অনুযায়ী ১৬.৬ শতাংশের নিচে ভোট পেলে কমিশনকে ফেরত দিতে হবে এই টাকা।

 

সর্বশেষ খবর