শনিবার, ২৫ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

দোজখের আগুন থেকে মুক্তি প্রার্থনা

মোহাম্মদ আবদুল মজিদ

দোজখের আগুন থেকে মুক্তি প্রার্থনা

মাহে রমজানের শেষ দশ দিন দোজখের আগুন থেকে মুক্তি প্রার্থনার। রসুলে করিম (সা.) মাহে রমজানের বিদায়ের দিনগুলোতে দোজখের আগুন থেকে পরিত্রাণ লাভের জন্য বেশি বেশি প্রার্থনার পরামর্শ দিয়েছেন। শেষ দশ দিনে এতেকাফ পালন, বেজোড় রাতে লায়লাতুল কদরের অনুসন্ধান, যে রাতের ইবাদতের মর্যাদা হাজার রাত্রির ইবাদতের চেয়ে উত্তম। গুরুত্বপূর্ণ এ দশ দিনে দোজখের আগুন থেকে নাজাত বা মুক্তি লাভের প্রার্থনার মধ্যে রয়েছে বিশেষ তাৎপর্য। বস্তুত দোজখের আগুন একটি প্রলম্বিত এবং অসহনীয় দহন যন্ত্রণার উৎস। সাধারণ জ্ঞান ও উপলব্ধির অতীত এ যন্ত্রণা। এর ব্যাপ্তিও অকল্পনীয়। তাই দোজখের আগুন থেকে মুক্তিলাভের প্রার্থনাকে বিশেষ গুরুত্ব সহকারে বর্ণনা করা হয়েছে। দোজখের আগুনের প্রকৃতি এবং অয়োময়  এ শাস্তি ও দুর্ভোগের কারণ সম্পর্কে আল কোরআনের ভাষ্য এই-‘...যারা কুফরি করে তাদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে আগুনের পোশাক; তাদের মাথার ওপরে ঢেলে দেওয়া হবে ফুটন্ত পানি, যার দ্বারা তাদের উদরে যা আছে তা এবং তাদের চর্ম বিগলিত হবে। এবং তাদের জন্য থাকবে লৌহ মুদগর। যখনই তারা যন্ত্রণা কাতর হয়ে জাহান্নাম থেকে বেরিয়ে আসতে চাইবে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হবে তথায়, তাদের বলা হবে ‘আস্বাদ কর দহন যন্ত্রণা’। (সূরা হাজ্জ। আয়াত ১৯-২২)। ‘যারা কিয়ামতকে অস্বীকার করে তাদের জন্য আমি প্রস্তুত রেখেছি জ্বলন্ত অগ্নি। দূর হতে অগ্নি যখন তাদের দেখবে তখন তারা শুনতে পাবে এর ক্রুদ্ধ গর্জন ও চিৎকার; এবং যখন তাদের শৃঙ্খলিত অবস্থায় সেখানকার কোনো সংকীর্ণ স্থানে নিক্ষেপ করা হবে তখন তারা তথায় ধ্বংস কামনা করবে।’ (সূরা ফুরকান। আয়াত ১১-১৩)। ‘যারা পাপাচার করেছে তাদের বাসস্থান হবে জাহান্নাম। যখন তারা সেখান  হতে বের হতে চাইবে তখনই তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হবে তথায় এবং তাদের বলা হবে, যে অগ্নি শাস্তিকে তোমরা মিথ্যা বলতে এখন তা আস্বাদন কর।’ (সূরা সাজদা। আয়াত ২০) দোজখের দহন যন্ত্রণা তাদের জন্য যারা কুফরি করে, যারা সত্যকে প্রত্যাখ্যান করে পাপাচারে লিপ্ত, যারা কিয়ামতকে অস্বীকার করে এবং সর্বোপরী যারা দোজখের শাস্তিকে আদৌ বিবেচনায় আনে না অর্থাৎ স্বীকার করে না। দোজখের শাস্তি এই পার্থিব জীবনের কর্মকান্ডের তথা ইমান আমলের ফলাফলে নির্ধারিত হয়ে থাকে। জীবনাবসানের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের পাপ পুণ্য অর্জনের অবকাশ শেষ হয়ে যায়। তাই পার্থিব জীবনযাপন কালেই এর উপলদ্ধি জাগ্রত হওয়া আবশ্যক। দোজখের আগুনের তীব্রতা এবং ভয়াবহতা থেকে দোজখবাসীর পরিত্রাণ লাভের একান্ত আকুতিও ব্যর্থ হয়ে যাবে। দোজখের আগুনের ‘ক্রুদ্ধ গর্জন ও চিৎকার’ প্রসঙ্গে আলামা ইউসুফ আলী ব্যাখ্যায় বলেন, ‘Here the Fire is personified. It is raging with hunger and fury, and as soon as it sees them from ever so far, it emits a sigh of desire. Till then they had not realized their full danger. Now, just as their heart begins to tremble with terror, they are bound together-like with like-and cast into the roaring flames!’ সেই জ্বলন্ত ও সর্বভুক অগ্নি থেকে নাজাত বা মুক্তি লাভের জন্য মাহে রমজানের শেষ দশ দিনের প্রার্থনায় কুফরি, পাপাচার আর, ইমানের দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার দৃঢ়চিত্ত সংকল্প সবার মধ্যে পরিব্যাপ্ত হোক।

লেখক : সাবেক সচিব ও এন বি আর চেয়ারম্যান।

সর্বশেষ খবর