রবিবার, ২৬ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

শিক্ষিত তারুণ্যের দক্ষতার অভাব

নিজস্ব প্রতিবেদক

চাকরিপ্রার্থী ও বেকারের সংখ্যা হুহু করে বাড়লেও চাকরি দেওয়ার মতো দক্ষ কর্মী পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ চাকরির বাজার সংশ্লিষ্টদের। তাদের অভিযোগ, শিক্ষিত তরুণরা সার্টিফিকেট নিয়ে এলেও চাকরির বাজারে নিজেদের দক্ষতা প্রমাণ করতে পারছে না। দিন দিন দক্ষ কর্মীর এ সংকট প্রকট আকার ধারণ করছে। এ কারণেই বাংলাদেশের চাকরির বাজারে বিদেশিদের আধিপত্য দেখছে তারা। যথাযথ কারিকুলাম না থাকা সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলো এক ধরনের শিক্ষিত বেকার তৈরির কারখানার ভূমিকা নিয়েছে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ। তিনি বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ৯০ ভাগই সাধারণ শিক্ষায় উত্তীর্ণ। এই সাধারণ শিক্ষায় উত্তীর্ণদের প্রয়োজনীয়তা বেসরকারি খাতে মাত্র ৩০ ভাগ। অথচ বেসরকারি খাতগুলোয় কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন ও শ্রমিক শ্রেণির জনবল প্রয়োজন হয় ৭০ ভাগ। পুরনো পদ্ধতি (কারিকুলাম) না পাল্টালে বেকার পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে না।

শ্রমশক্তির জরিপ অনুযায়ী বর্তমানে সারা দেশে প্রায় ৩০ লাখ বেকার রয়েছে। প্রতি বছর ২০ লাখের মতো নতুন মুখ দেশের শ্রমশক্তিতে যুক্ত হচ্ছে। মোট শ্রমশক্তিতে বাড়ছে উচ্চশিক্ষিতদের অংশগ্রহণ। যদিও এর বড় অংশই বেকার থাকছে। চাকরির প্রতিযোগিতার বাজার এতটাই চরমে যে, একটি আসনের বিপরীতে শতাধিক প্রার্থীকে প্রতিযোগিতা করতে হয়। ব্রিটিশ সাময়িকী ইকোনমিস্টের ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) এক বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারের হার সবচেয়ে বেশি। প্রতি ১০০ স্নাতক ডিগ্রিধারী তরুণ-তরুণীর মধ্যে ৪৭ জন বেকার। আর বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) বলছে, বেকারের মধ্যে চিকিৎসক-প্রকৌশলীর হার ১৪ দশমিক ২৭ শতাংশ। নারী চিকিৎসক-প্রকৌশলীর মধ্যে বেকারত্বের হার প্রায় ৩১ শতাংশ। এর পরই আছেন উচ্চমাধ্যমিক ডিগ্রিধারীরা। তাদের ক্ষেত্রে বেকারত্বের হার ১৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ। ২০টি সর্বাধিক বেকারত্বের দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১২তম।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)-এর তথ্যানুযায়ী প্রতি বছর বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক-স্নাতকোত্তরসহ উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করছেন কমবেশি সাড়ে ৩ লাখ শিক্ষার্থী। তার মধ্যে ৯২ হাজার ৭৪৭ জন স্নাতক পাস, ১ লাখ ২৮ হাজার ৪৮১ জন স্নাতক সম্মান ও ২১ হাজার ৩৮০ জন কারিগরি স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এ ছাড়া ১ লাখ ১৯ হাজার ৮৯৪ জন স্নাতকোত্তর ডিগ্রি, ২ হাজার ৩৮৫ জন স্নাতকোত্তর কারিগরি এবং ১ হাজার ৭৬৩ জন এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। অন্যদিকে ডিপ্লোমা বা সার্টিফিকেট অর্জন করেন ২ হাজার ৩৩৫ জন। সম্প্রতি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজ গ্র্যাজুয়েটদের চাকরির বাজার নিয়ে জরিপ চালিয়েছে বিশ্বব্যাংক। কর্মবাজারের প্রস্তুতি ও কলেজ গ্র্যাজুয়েটদের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটির তথ্যানুযায়ী পড়ালেখা শেষ করে মাত্র ১ শতাংশ কলেজ গ্র্যাজুয়েট স্বকর্মসংস্থানে যুক্ত হচ্ছেন। গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার পর তিন বছর ধরে চাকরির সন্ধান করতে হচ্ছে ৪৬ শতাংশ কলেজ গ্র্যাজুয়েটকে। তাদের মধ্যে বেকারত্বের হারও উচ্চ- ৭১ শতাংশ। বিশ্বব্যাংক বলছে, কলেজ গ্র্যাজুয়েট পুরুষের ৬৬ শতাংশই বেকার থাকছেন। নারীর মধ্যে এ হার আরও বেশি- ৭৭ শতাংশ। এক-তৃতীয়াংশ চাকরিজীবী গ্র্যাজুয়েট মনে করেন, কলেজে শেখা জ্ঞান ও দক্ষতা তারা কাজে লাগাতে পারছেন না। অধিকাংশ কলেজ গ্র্যাজুয়েটই তাদের কলেজে শেখা জ্ঞান কাজে লাগাতে পারেন না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিক্ষক সংকট, মানসম্মত শিক্ষার পরিবেশ ও বাজারমুখী কারিকুলামের অভাবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজে উচ্চশিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। পাশাপাশি বিপুলসংখ্যক শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর জন্য চাকরির বাজার প্রস্তুত না থাকায় চাকরি পেতে বেশি সময় লেগে যাচ্ছে তাদের।

সর্বশেষ খবর