রবিবার, ২৬ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

কী করবে কংগ্রেস রাহুলই থাকছেন সভাপতি

নয়াদিল্লি ও কলকাতা প্রতিনিধি

লোকসভা নির্বাচনে ভরাডুবির পর ব্যর্থতার দায় মাথায় নিয়ে কংগ্রেস সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করলেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। কিন্তু সর্বসম্মতভাবে রাহুলের ইস্তফার প্রস্তাবটি খারিজ করে দিয়েছে কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটি (সিডব্লিউসি)। এদিকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দিতে চাইলে তাতে বাধা দেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতারা।

জানা গেছে, শনিবার সকালে দিল্লিতে কংগ্রেসের সদর দফতরে বসে সিডব্লিউসির বৈঠক। বৈঠকে রাহুল গান্ধী দেশব্যাপী কংগ্রেসের বিপর্যয় ও আমেথিতে নিজের পরাজয়ের কারণ তুলে ধরে তার পদত্যাগের ইচ্ছা ব্যক্ত করে বলেন, দলের একজন সাধারণ কর্মী হিসেবেই তিনি কাজ করতে চান। রাহুল এও জানান, তিনি লোকসভায় দলের নেতা হতে পারেন কিন্তু সভাপতি পদে নয়। সভাপতি পদে গান্ধী পরিবারের বাইরে কাউকে ভাবা হোক। কিন্তু দলের শীর্ষ নেতারা সর্বসম্মতভাবে পদত্যাগের প্রস্তাব খারিজ করে রাহুলকেই কাজ চালিয়ে যাওয়ার অনুরোধ জানান। বিশেষ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ও দলের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা রাহুলকে বোঝান যে, পদত্যাগ করে কোনো সমাধান সূত্র বের হবে না। এ ব্যাপারে প্রিয়াঙ্কার বক্তব্য ছিল, রাহুল যদি ইস্তফা দেন তবে বিজেপির ফাঁদে পা দেওয়া হবে।

বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সুরজওয়ালা জানান, ‘পরপর দুটি লোকসভা নির্বাচনে দলের খারাপ ফলাফলের কারণে দলের সভাপতি পদ থেকে রাহুল গান্ধী ইস্তফা দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু সিডব্লিউসি সর্বসম্মতভাবে তা খারিজ করে দিয়েছে। কংগ্রেসের প্রতিটি পর্যায়ে ঢেলে সাজানো ও পুনর্গঠনের জন্য রাহুলকে কাজ করার কথা বলেছে দল।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই রাহুল আমাদের সঙ্গে থাকুন। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে রাহুলের মতো নেতাই প্রয়োজন।’

তবে নির্বাচনে কংগ্রেসের এ ফলাফলকে বিপর্যয় বলে মানতে রাজি নন সিনিয়র কংগ্রেস নেতা এ কে অ্যান্টনি। গণমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তরে তিনি ‘এ ফলকে বিপর্যয় বলতে আমি সহমত নই কিন্তু এটা ঠিক যে প্রত্যাশা মতো আমরা আমাদের ফলকে নিয়ে যেতে পারিনি। দল পুরো বিষয়টি বিশদে পর্যালোচনা করবে। আজ আমরা কেবলমাত্র সাধারণ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছি।’

কংগ্রেস সভাপতি রাহুলের নেতৃত্বে এদিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ইউপিএ চেয়ারপারসন সোনিয়া গান্ধী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, দলের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, শীলা দীক্ষিত, গোলাম নবি আজাদ, মল্লিকার্জুন খাড়গে, বীরাপ্পা মইলি, পি. চিদাম্বরম, আহমেদ প্যাটেল, অম্বিকা সোনিসহ শীর্ষ নেতারা।

বৈঠকে মূলত নির্বাচনী ব্যর্থতার কারণগুলো খতিয়ে দেখা হয়। পাশাপাশি দলের কিছু সাংগঠনিক রদবদল নিয়েও আলোচনা হয়েছে। কারণ নির্বাচনী ব্যর্থতার দায় নিয়ে ইতিমধ্যেই কয়েকজন পদত্যাগ করেছেন। এর মধ্যে উত্তরপ্রদেশ সভাপতি রাজ বব্বর, কর্ণাটকের প্রচার সভাপতি এইচ কে পাতিল, উড়িষ্যার রাজ্য সভাপতি নিরঞ্জন পট্টনায়ক, আমেথি জেলা কংগ্রেস সভাপতি যোগেন্দ্র মিশ্র রাহুল গান্ধীর কাছে ইস্তফাপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন। এ ছাড়া উড়িষ্যা, পশ্চিমবঙ্গ, কর্ণাটকসহ একাধিক রাজ্যে শোচনীয় ফল করেছে কংগ্রেস। ফলে ওই রাজ্যগুলোতে সংগঠন ঢেলে সাজানো হতে পারে।

বিভাজন থিওরির বিরুদ্ধে মমতা : লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের অপ্রত্যাশিত ফল নিয়ে পর্যালোচনা করতে শনিবার বিকালে দক্ষিণ কলকাতার কালীঘাটে নিজের বাড়িতে লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের জয়ী ও পরাজিত প্রার্থীদের নিয়ে বৈঠকে বসেন দলনেত্রী ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। তৃণমূলের প্রার্থীরা ছাড়াও ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রীরা, বৈঠক চলে প্রায় এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে।

বৈঠকের পর মমতা বলেন, ‘পাঁচ-ছয় মাস ধরে আমায় কোনো কাজ করতে দেওয়া হয়নি। জরুরি অবস্থার মধ্যে নির্বাচন করা হয়েছে। আমি খুব অপমানকর কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সরকার চালিয়ে এসেছি। নির্বাচন কমিশনের দয়ায় আমি মুখ্যমন্ত্রী ছিলাম ঠিকই কিন্তু আমার হাতে কোনো ক্ষমতা ছিল না। আমি বৈঠকের শুরুতেই বলেছিলাম, আমি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে থাকতে চাই না কিন্তু দলের সভাপতি হিসেবে কাজ চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিলাম। কারণ দলটা আমি নিজে তৈরি করেছি। আর আমি চেয়ারের লোভ করি না।’ মমতার অভিমত, ‘রুপি দিয়ে যেখানে গণতন্ত্র গড়া হয়, সাম্প্রদায়িকতার দোষে দুষ্ট সরকার চালায়, সেখানে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কাজ করার কোনো ইচ্ছা নেই, আমি দলকেও বুঝিয়েছি কিন্তু ওরা কিছুতেই আমার এটাকে গ্রহণ করেনি। তাই দলের সর্বসম্মতিতেই আমাকে কাজ চালাতে হচ্ছে।’

নির্বাচন নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে হিন্দু-মুসলিম নিয়ে ভোট ভাগাভাগির অভিযোগ তুলে মমতা বলেন, ‘এবারের নির্বাচনে একতরফাভাবে হিন্দু-মুসলমান করা হয়েছে। কিন্তু আমি এই থিওরি মানি না। আমি ওদের (বিজেপি) অভিনন্দন জানিয়েও বলছি, আমি ওদের এই থিওরি মানি না। এতে যদি আমাকে একা থাকতে হয় তবে তাতেও রাজি আছি। কিন্তু আমি হিন্দু-মুসলিম-শিখ-খ্রিস্টান ভোট ভাগাভাগিতে মানি না।’ তিনি আরও বলেন, ‘ওরা হিন্দু এলাকায় গিয়ে মুসলিমদের তাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলেছে। দেশটা তো সবার। কোথাও হিন্দু থাকবে, আবার কোথাও মুসলমান, শিখ, খ্রিস্টান থাকবে। আমি নিজেও হিন্দু ঘরের মেয়ে। কিন্তু আমি এই থিওরি মানতে রাজি নই। আমরা মনে করি প্রতিটি ধর্মেরই সহনশীল হওয়া উচিত।’

বিজেপির বিরুদ্ধে হাজার হাজার কোটি রুপির খেলার অভিযোগ তুলে মমতা বলেন ‘এই নির্বাচনে যে রুপির খেলা হয়েছে তা যে কোনো কেলেঙ্কারিকেও হার মানাবে। হাজার হাজার কোটি রুপি খরচ করা হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের দিয়ে এই রুপি বিলি করা হয়েছে। রুপি ঢোকানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলো পরিবর্তন করা হয়েছিল যেমন কলকাতা পুলিশের কমিশনার, কলকাতা বিমানবন্দর যে পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে সেটাও বদল করা হয়।’

তার অভিযোগ, ‘গোটা নির্বাচন কমিশনটা বিজেপির পার্টি হয়ে গেছে। আমাদের একটা কথাও শোনেনি। কেন্দ্রীয় বাহিনীও আমাদের বিরুদ্ধে কাজ করেছে।’

তার আরও অভিযোগ, ‘বিজেপি যে ১৮ আসন পেয়েছে, সিপিআইএম সব ভোট দিয়েছে। প্রচুর রুপিও দিয়েছে সিপিআইএমকে। অনেক মিডিয়া হাউসকেও দিয়েছে।’ 

মমতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিজেই ৩০০ আসন জেতার কথা বলেছিলেন। তারা তা পেয়ে গেছে। এ জন্য মোদিজিকে অভিনন্দন। কিন্তু এই বিপুল জয়ের পেছনে সন্দেহ রয়েছে। বিভিন্ন রাজ্যে বিরোধীরা কীভাবে ধুয়েমুছে সাফ হয়ে গেল তা নিয়ে সত্যিই অবাক হচ্ছি। এখানে নিশ্চয়ই কিছু সেটিং আছে এবং বিদেশি শক্তির হাত রয়েছে।’

মমতা ব্যানার্জির বিরুদ্ধে বিরোধীদের তোষণের রাজনীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ‘আগামী ৩০ মে আমি কলকাতা করপোরেশনে ইফতারে যাচ্ছি, আপনারাও আসবেন। আমি নাকি মুসলিমদের তোষণ করি, আমি একশত বার যাব, হাজার বার যাব। যে গরু দুধ দেয় তার লাথি খাওয়া উচিত। তাছাড়া আমি ইফতারে প্রতিবারই যাই। আমাকে যে ডাকবে সেখানেই যাব।’

সর্বশেষ খবর