রবিবার, ২৬ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

সবর

মোহাম্মদ আবদুল মজিদ

সবর

‘সবর’ বা ধৈর্য অবলম্বন সিয়াম সাধনার একটি মহান শিক্ষা। আল কোরআনের সূরা বাকারার ১৫৫ নং আয়াতে বলা হয়েছে- ‘এবং আমি তোমাদিগকে ভয়, ক্ষুধা এবং ধনসম্পদ, জীবন ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা অবশ্য পরীক্ষা করব। তুমি (হে রসুল) শুভ সংবাদ দাও ধৈর্যশীলগণকে।’ ইসলাম প্রচারের প্রাথমিক পর্যায়ে দুশমনদের ব্যাপক অপপ্রচারণায় নবদীক্ষাপ্রাপ্ত মুসলমানদের মন বিষাক্ত করে তোলা হচ্ছিল। মুসলমানদের এ সংকটময়কালে তাদের সূরা বাকারার ১৫৩ নং আয়াতে ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে প্রার্থনা করবার পরামর্শ দিয়ে বলা হয়, ‘আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।’ এর পর পরই ১৫৪ নং আয়াতে বলা হয়, ‘আল্লাহর পথে যারা নিহত হয় তাদেরকে মৃত বলিও না, তারা জীবিত কিন্তু তোমরা তা উপলব্ধি করতে পার না।’ পূর্বে উল্লিখিত ১৫৫ নং আয়াতে বিষয়টি আরও স্পষ্ট করে ধৈর্যশীলদের জন্য শুভ সংবাদ উল্লেখ করা হয়েছে। বস্তুত এর চাইতে বড় শুভ সংবাদ কী হতে পারে যে আল্লাহ স্বয়ং ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন। আরবি ‘সবর’ শব্দের বহুমাত্রিক অর্থ ও তাৎপর্য রয়েছে। আল্লামা ইউসুফ  আলীর মতে, সবরের ব্যবহারিক অর্থ হতে পারে- (১) ধীরস্থিরতা অবলম্বন, তাড়াহুড়া না করা (২) অব্যাহত অধ্যবসায়, একাগ্রতা, একনিষ্ঠতা, দৃঢ়তা, উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য অর্জনে অবিচল থাকা (৩) কোনো তাৎক্ষণিক কিংবা হঠাৎ কিছু পাবার প্রত্যাশা না করা (৪) বিপদে-আপদে পরাজয় কিংবা বিপর্যস্ত পরিস্থিতিতেও বিপদ ও বিসংবাদকে ঠান্ডা মাথায় সহজে ও সানন্দে গ্রহণ করা অর্থাৎ ওই সমস্ত পরিস্থিতিতে শোকাভিভূত কিংবা ক্রোধান্বিত কিংবা হটকারী না হওয়া।’ বলাবাহুল্য ‘সবর’ মানবিক গুণাবলির মধ্যে শ্রেষ্ঠতর এবং এর মানসিক ও আত্মিক তাৎপর্য অপরিসীম। সবর এর গুণ অর্জন স্বাভাবিকভাবেই সহজ নয়। আর এ কারণে এটি অর্জনেও আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে প্রার্থনার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে (সূরা বাকারা আয়াত-২৫০)।

ভয়, ক্ষুধা, ধন-মালের, ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি নানান দুর্ঘটনা উদ্ভূত বলে প্রতীয়মান হয়। সন্দেহ নেই এতে মারাত্মক অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঘটে ব্যক্তি তথা সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে যে কোনো সময় নানান দুর্ভোগ ও দুর্বিপাক আপতিত হতে পারে। দুর্ভিক্ষ, মহামারী, প্লাবন ইত্যাদি যখন গোটা সমাজের ওপর দুর্দশা ও বিপদ নিয়ে আসে তখন গোটা সমাজ তথা সমগ্র রাষ্ট্রব্যবস্থাকে তা ধৈর্যের সঙ্গেই মোকাবিলা করা উচিত। ধীরস্থিরভাবে যে কোনো বিপদ অতিক্রম করার লক্ষ্যে সার্বিক প্রচেষ্টা চালাতে হয়। এ পরিস্থিতিতে ব্যক্তি ও সমষ্টিকে ধৈর্য ও সালাতের শক্তি ও সাহায্য নিতে হয়। একই সঙ্গে ইমানের ওপর দৃঢ় আস্থা রেখে ধৈর্যধারণে অবিচল থাকার জন্য পরষ্পরকে সহযোগিতা করতে হয়। সূরা ‘আসর’-এ স্পষ্টতই উল্লেখ করা হয়েছে- ‘মানুষ অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত কিন্তু তারা নয়, যারা ইমান আনে ও সৎকর্ম করে এবং পরষ্পরকে সত্যের উপদেশ দেয় ও ধৈর্যের উপদেশ দেয়।’ (আয়াত ২-৩)। বিপদে অন্যের সহযোগিতার বিষয়টিও এখানে বিশেষ তাৎপর্যবহ। বিপদগ্রস্ত সমাজের সকলে ধৈর্যধারণেই কেবল সীমাবদ্ধ থাকবে না পরষ্পর সহযোগিতা অর্থাৎ বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির বৈষয়িক সাহায্যে এগিয়ে আসাও অতীব গুরুত্বপূর্ণ। জরুরি পরিস্থিতিতে জরুরি পরিকল্পনা গ্রহণ এবং পারস্পরিক সাহায্য আদান-প্রদানে ত্যাগ স্বীকারের মাধ্যমে ওই প্রয়াসে উপযোগী নেতৃত্ব দান ও সফল কর্ম সম্পাদনে সহায়তা করা বাঞ্ছনীয়। এরূপ ভূমিকা পালনে কোনো বিপর্যয়ই কোনো সমাজকে কাবু করতে পারে না।  ধৈর্যধারণের মাধ্যমে বিপদ মোকাবিলার মধ্যে রয়েছে আল্লাহর অপার সন্তষ্টি ও সমর্থন। সূরা বাকারার ১৭৭ আয়াতের এই অংশটি এখানে প্রণিধানযোগ্য’ পূর্ব ও পশ্চিম দিকে তোমাদের মুখ ফিরানোতে কোনো পুণ্য নেই, কিন্তু পুণ্য আছে অর্থ সংকটে, দুঃখ-ক্লেশে ও সংগ্রামে সংকটে ধৈর্যধারণ করলে।’

লেখক : সাবেক সচিব ও এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর