রবিবার, ২৬ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

সাড়ে ১২ লাখ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট

নিজস্ব প্রতিবেদক

সাড়ে ১২ লাখ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট

প্রায় সাড়ে ১২ লাখ কোটি টাকা খরচের হিসাব কষে, ১০ লাখ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের পথ দেখিয়ে বিকল্প বাজেট প্রস্তাব দিয়েছেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি ড. আবুল বারকাত। তার এই প্রস্তাবে বাজেট ঘাটতি অর্থায়ন মোকাবিলায় কয়েকটি দেশীয় উৎসকেই বেছে নেওয়া হয়। বৈষম্যহীন অর্থনীতি, সমাজ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে দেশ গড়তে এবং বৈদেশিক  ঋণমুক্ত বিকল্প বাজেট প্রস্তাব দিল অর্থনীতি সমিতি।

গতকাল রাজধানীর তোপখানা রোডে সিরডাপ ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা ২০১৯-২০’ তুলে ধরেন খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাত। এতে সূচনা বক্তব্য দেন অর্থনীতি সমিতির সাধারণ স¤পাদক ড. জামালউদ্দিন আহমেদ। ঢাকাসহ দেশের ২৬টি জেলা শহরে একই দিনে একই সময় এই বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। আগামী অর্থবছরের জন্য অর্থমন্ত্রীর আভাসের চেয়ে দ্বিগুণ অঙ্কের এই বাজেট প্রস্তাব দিয়ে তার অর্থ সংস্থানে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর বড় যে তিনটি ক্ষেত্র দেখিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি, তা হলো পাচার হওয়া ও কালো টাকা উদ্ধার এবং সম্পদ কর। আবুল বারকাত বলেন, এই তিনটি নতুন উৎস থেকেই সরকার মোট ৯৫ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় করতে পারে। আর এ টাকা দিয়ে প্রতি বছর তিনটি পদ্মা সেতু করা সম্ভব। ২ লাখ ৮৪ হাজার টাকা ঘাটতির এই বিকল্প বাজেটে অর্থায়নে কোনো বৈদেশিক ঋণের প্রয়োজন হবে না।

আবুল বারকাত বলেন, এ বাজেট মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তীর প্রাক্কালের বাজেট। আসন্ন অর্থবছরের বাজেট হতে হবে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক দর্শনের প্রতিফলন। আমাদের ‘স্বাধীনতার ঘোষণার’ সঙ্গে স¤পূর্ণ সাযুজ্যপূর্ণ। বাজেট হতে হবে আমাদের ১৯৭২ এর মূল সংবিধানের সঙ্গে পুরোপুরি সংগতিপূর্ণ। বাজেটে প্রতিফলিত হতে হবে মুক্তিযুদ্ধের দুটি চেতনা, বৈষম্যহীন অর্থনীতি-সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং অসাম্প্রদায়িক মনন-সমৃদ্ধ আলোকিত সমাজ বিনির্মাণ। অর্থনীতি সমিতির প্রস্তাবিত বাজেটে খরচ ধরা হয়েছে ১২ লাখ ৪০ হাজার ৯০ কোটি টাকা। এতে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ১০ লাখ ২ হাজার ৫১০ কোটি টাকা, যার ৬৯ শতাংশ হবে প্রত্যক্ষ কর ও ৩১ শতাংশ হবে পরোক্ষ কর। অর্থাৎ মোট বাজেট বরাদ্দের প্রায় ৮১ শতাংশের জোগান দেবে সরকারের রাজস্ব আয়।

কয়েকটি প্রস্তাব তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলা উন্নয়ন বোর্ড গঠন করতে হবে। জাতীয় অনুবাদ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করতে হবে। রাজস্ব কমিশন গঠন করতে হবে। পরিবেশ দূষণে কর বসাতে হবে। গুঁড়ো দুধ আমদানি নিষিদ্ধ করতে হবে। চাল আমদানি নিষিদ্ধ না করলেও, ২০০ শতাংশ কর বসাতে হবে। স্বৈরশাসনের আমলে নেওয়া ঋণের দায়ভার সরকার নিতে পারে না।

অর্থনীতি সমিতির অগ্রাধিকার ভিত্তিতে খাতওয়ারি সর্বোচ্চ বরাদ্দ প্রস্তাব করেছে শিক্ষা ও প্রযুক্তিতে, মোট ২ লাখ ৮৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। কৃষি ফসলের উৎপাদন অঞ্চল গঠন ও কৃষককে কৃষিপণ্যের ন্যায্য বাজারমূল্য দেওয়ার প্রস্তাবে বারকাত বলেন, এ বছর বোরো ধানে কৃষকের প্রকৃত লোকসান হবে কমপক্ষে ৫০০ কোটি টাকা। কৃষককে তার উৎপাদিত কৃষিপণ্যের ন্যায্য বাজারমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে।

খেলাপি ঋণ প্রসঙ্গে আবুল বারকাত প্রস্তাবে বলেন, অভ্যাসগত ঋণখেলাপিদের মোকাবিলার জন্য সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিতে হবে। তবে তাদের পুনর্উদ্যমে চালু শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা ঠিক হবে না। সমস্যাটি জটিল, তবে সমাধান সম্ভব।

রাজস্ব আয়ের প্রস্তাবে তিনি বলেন, ব্যক্তি পর্যায়ে করহার কমিয়ে ৩ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ রাখা, ৫০ শতাংশ নিম্নতর কর দেওয়ার যোগ্য কমপক্ষে ৫০ লাখ টিআইএন ধারী মানুষের সংখ্যা বাড়ানো সম্ভব। বছরে কমপক্ষে ১ কোটি টাকা বা তার বেশি ব্যক্তিগত আয়কর দেওয়ার যোগ্য মানুষের সংখ্যা কমপক্ষে ৫০ হাজারে বাড়ানো দরকার। ৩০ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ কালো টাকা উদ্ধার, অর্থ পাচার রোধ থেকে আগামী অর্থবছরে ৩৫ হাজার কোটি টাকা আদায় সম্ভব। নদী দখল ও দূষণ প্রতিকার, প্রতিবন্ধীদের জন্য নির্দিষ্ট উপখাতভিত্তিক কমপক্ষে ২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া, নিরাপদ ও ভেজালমুক্ত খাদ্য, সুপেয় পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। ভূমিহীন ও প্রান্তিক কৃষকদের জন্য সুদবিহীন ঋণ ও বীমা, রেমিট্যান্স প্রবাহকে ফলপ্রদ উৎপাদনশীল বিনিয়োগে ব্যবহার এবং প্রবাসে কর্মীদের আনুষ্ঠানিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার সঙ্গে স¤পৃক্তকরণ জরুরি। সার্বজনীন পেনশন, প্রবীণ মানুষদের জন্য ‘প্রবীণ নীড়’ (বৃদ্ধাশ্রম নয়) গড়ে তোলা, পেনশনভোগীদের পেনশনের অর্থ বিনিয়োগের আয় থেকে সব ধরনের আয়কর, কর, শুল্ক স¤পূর্ণ রহিত করা প্রয়োজন।

সংবাদ সম্মেলনে অর্থনীতি সমিতির সাধারণ স¤পাদক ড. জামালউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের বিকল্প বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়াটি স¤পূর্ণ স্বেচ্ছাশ্রমের ফল। আর সরকার যে খসড়া বাজেট আগামী জুন মাসে সংসদে উত্থাপন করবেন, তা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দেশি-বিদেশি পরামর্শকসহ কয়েক হাজার কর্মকর্তার যৌথ কর্মকা ।

সর্বশেষ খবর