মঙ্গলবার, ২৮ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

প্রশাসন কেন থমকে আছে

মন্ত্রীদের সফলতা যেমন আছে তেমনি আছে কাজ না করার প্রবণতা, কেউ কেউ বিদেশ ঘুরে বেড়ান ফাইল ধরেন না

নিজামুল হক বিপুল

প্রশাসন কেন থমকে আছে

নতুন মেয়াদের সরকারে মন্ত্রণালয়গুলোর কাজে গতি নেই। সরকারের কোনো কোনো মন্ত্রী ব্যস্ত বিদেশ সফর নিয়ে। আবার কেউ কেউ মন্ত্রণালয়ে এলেও ফাইলে ঠিকমতো স্বাক্ষর করেন না। এমনকি অনেকে দৈনন্দিন কাজেও আড়ষ্ট। এবার সরকারের যাত্রা শুরুর পর যে গতিতে সব খাতে কাজ চলার সেভাবে তা হচ্ছে না। অনেকে মনে করেন এর কারণ মন্ত্রণালয়ের কাজের গতি না থাকা। তবে এই ধারার বাইরে বেশ কয়েকজন মন্ত্রী নিজের মন্ত্রণালয়কে ঢেলে সাজিয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে ইতিমধ্যে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছেন। সংশ্লিষ্টদের মতে এই মন্ত্রীদের মতোই সব মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা কাজের ক্ষেত্রে আন্তরিক ও গতিশীল হলে কোথাও কোনো সমস্যা বা সংকট থাকত না। মন্ত্রণালয়ের কাজের গতি বাড়ানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেও চাপ আছে। তবু যেন গতি আসছে না।

সূত্রমতে, উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা একাধিক বড় মন্ত্রী বেশির ভাগ সময় বিদেশে কাটাচ্ছেন। দেশে থাকলেও বিভিন্ন জেলায় রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তারা পার করে দিচ্ছেন বেশির ভাগ সময়। যার ফলে এসব মন্ত্রণালয়গুলোর গুরুত্বপূর্ণ নথি তো বটে, অনেক ছোট ছোট নথিও স্বাক্ষর হচ্ছে না। গতি হারাচ্ছে মন্ত্রণালয় এবং মন্ত্রণালয়গুলোর অধীন দফতরগুলোর কর্মকা ও। এতে করে এসব মন্ত্রণালয়ের অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক সিদ্ধান্তও আটকে রয়েছে।

গত কয়েক দিনে সচিবালয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ঘুরে এবং খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই পাঁচ মাসে চেহারা পাল্টে গেছে একাধিক মন্ত্রণালয় এবং ওই মন্ত্রণালয়গুলোর অধীন দফতরসমূহের। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে গত পাঁচ মাসে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছেন মন্ত্রণালয় এবং এর অধীন দফতরগুলোর কর্মকান্ডে। ডিজিটালাইজেশন করেছেন রাজউকের কর্মকা-। দক্ষতার সঙ্গে বাজেট তৈরি ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে পরিবর্তন আনতে লড়ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদও তার মন্ত্রণালয়কে ঢেলে সাজিয়েছেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়ে মন্ত্রণালয় এবং মন্ত্রণালয়ের অধীন দফতরগুলোতে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের বিবরণ নিয়েছেন।

নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীও প্রশংসা কুড়িয়েছেন ইতিমধ্যে। দায়িত্ব নেওয়ার পর পরই বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা, বালু, কর্ণফুলী নদীর তীর রক্ষাসহ সারা দেশে দখল হয়ে যাওয়া নদী তীর রক্ষায় উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে প্রশংসিত হয়েছেন। এরকম আরও কয়েকজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী আছেন যারা কাজ করছেন নীরবে। আবার একাধিক মন্ত্রণালয়ে কাজের ক্ষেত্রে মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ চলায় গত সপ্তাহেই দুই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর দফতর ভাগ করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এমন কর্মকান্ডে  বাইরে আবার একাধিক মন্ত্রী আছেন যারা ব্যস্ত বিদেশ ভ্রমণ নিয়ে। জানা গেছে, সরকারের গত পাঁচ মাসে একাধিক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী মন্ত্রণালয়ের কাজ রেখে বিভিন্ন সভা-সেমিনারকে উপলক্ষ করে বিদেশ ভ্রমণেই ব্যস্ত ছিলেন। কোনো উপলক্ষ পেলেই এসব মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা বিদেশ ছুটে যান। সূত্র জানায়, একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী গত পাঁচ মাসে অন্তত ছয়টি দেশ সফর করেছেন। এই বিদেশ সফরের কারণে অন্তত দুই মাস তিনি মন্ত্রণালয়েই উপস্থিত ছিলেন না। ওই মন্ত্রী পাঁচ মাসে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ইরান, সৌদি আরব, থাইল্যান্ড এবং রুমানিয়া সফর করেছেন বিভিন্ন সভা-সেমিনারে যোগ দিতে। সূত্র জানায়, ওই মন্ত্রীর অনুপস্থিতির কারণে তার মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রণালয়ের অধীন দফতরগুলোতে কাজের স্তূপ জমে গেছে। গুরুত্বপূর্ণ অনেক নথিই মাসের পর মাস আটকে আছে মন্ত্রীর স্বাক্ষরের অপেক্ষায়। তবে এমন অভিযোগও আছে যে, মন্ত্রী যখন দেশে থাকেন তখন তার কাছে যারা সরাসরি তদবির করেন তাদের নথি দ্রুত নিষ্পত্তি হয়ে যায়। শুধু ওই মন্ত্রীই নন, আরও একাধিক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী রয়েছেন যারা আবার দেশে আছেন, অফিসও করছেন। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে বেশ দোটানায় ভোগেন। অনেক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। কেউ কেউ মন্ত্রণালয় চালাচ্ছেন সচিব নির্ভর হয়ে। যার ফলে ওই মন্ত্রণালয়গুলোতেও কাজে গতি নেই। সব মিলিয়ে সরকারের এই পাঁচ মাসে কিছু কিছু মন্ত্রণালয় এবং মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী নিজেদের কাজের ক্ষেত্রে দক্ষতার ছাপ রাখতে পারলেও বেশির ভাগ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী তা করতে পারেননি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আবার এ কারণে গতি হারাচ্ছে মন্ত্রণালয়ে। কারও কারও দক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর