মঙ্গলবার, ২৮ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

আইএসের দায় স্বীকার

পুলিশের ওপর হামলায় কারা খতিয়ে দেখা হচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

আইএসের দায় স্বীকার

মাত্র ২৭ দিনের মাথায় রাজধানীর মালিবাগে পুলিশের গাড়িতে হামলার দায় স্বীকার করল জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)। জঙ্গিদের তৎপরতার খবর জানানো অনলাইন পোর্টাল সাইট ইন্টেলিজেন্স বলছে, ঢাকায় বাংলাদেশি পুলিশের গাড়িতে বোমা হামলার দায় স্বীকার করেছে আইএস। এ নিয়ে ঢাকায় তিনটি হামলার দায় স্বীকার করল মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস। তবে পুলিশ সদর দফতর বলছে, এ ঘটনায় নেপথ্যে আইএসের সংশ্লিষ্টতার খবর এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। এদিকে, রবিবারের ঘটনায় পল্টন থানায় একটি মামলা হয়েছে। মামলার বাদী পুলিশের বিশেষ শাখার কনস্টেবল মো. শফিক চৌধুরী। মামলা নম্বর-৪৬। রবিবার রাতে বোমা বিস্ফোরণে ট্রাফিক পূর্ব বিভাগের সহকারী উপ-পরিদর্শক রাশেদা খাতুন (২৮) ও রিকশাচালক লাল মিয়া (৫০) গুরুতর আহত হন। গত ২৯ এপ্রিল রাত পৌনে ৮টার দিকে গুলিস্তানের ডন প্লাজার সামনে পুলিশ সদস্যদের লক্ষ্য করে বোমা ছোড়ার ঘটনায় ট্রাফিক কনস্টেবল নজরুল ইসলাম (৩৭), লিটন (৪২) ও কমিউনিটি পুলিশ মো. আশিক (২৮) আহত হলে দায় স্বীকার করেছিল আইএস। ২০১৬ সালে ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলা ছিল আইএসের দায় স্বীকারের প্রথম ঘটনা। 

গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া সাংবাদিকদের বলেছেন, জঙ্গিগোষ্ঠী না-কি বিদেশে অবস্থানরত কিছু দুষ্কৃতকারীর ষড়যন্ত্র তা নিয়ে তদন্ত চলছে। তবে ছোড়া ককটেলটি ছিল ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস-আইইডি। পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) মো. সোহেল রানা জানান, এ ঘটনায় আইএসের সংশ্লিষ্টতার খবর এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার জন্য অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি বা ব্যক্তিরা কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশকে হত্যার উদ্দেশ্যে এবং সরকারি সম্পদের ক্ষতি সাধন করার জন্য ইচ্ছাকৃত আক্রমণ করে। বোমা নিক্ষেপ করে ট্রাফিক পুলিশের এএসআই ও পথচারী সাধারণ ব্যক্তিকে গুরুতর আহত করে। ঢাকা মেট্রো-ঠ-১১-৫১৭৪ সিঙ্গেল কেবিন পিকআপের প্রায় দুই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

ককটেল বিস্ফোরণে আহত পুলিশের এএসআই রাশেদা আক্তার বাবলী জানান, তিনি মালিবাগ মোড়ে ডিউটিতে ছিলেন। তার পাশেই একটি পুলিশভ্যান পার্ক করে রাখা ছিল। রাত ৯টার দিকে হঠাৎ ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটলে স্পিলিন্টার তার পায়ে আঘাত হানে। তবে কে বা কারা ককটেলটি ছুড়েছে তা তিনি দেখতে পাননি।

ঢাকা মেডিকেল সূত্র জানায়, অধ্যাপক রেজাউল হকের তত্ত্বাবধানে ১০০ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসা চলছে আহত রিকশাচালক লাল মিয়ার। মাথার খুলি ভেঙে মগজে আঘাত লেগেছে লাল মিয়ার। গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত তিনি কথা বলতে পারছিলেন না। ইশারা ইঙ্গিতে লাল মিয়া তার স্বজনদের সঙ্গে কথা বলছিলেন।

ককটেলটি আগেই গাড়িতে রাখা ছিল

রাজধানীর মালিবাগ মোড়ে পুলিশের গাড়িতে যে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটেছে, এটি সাধারণ ককটেলের চাইতে শক্তিশালী। ককটেলটি পুলিশভ্যানের পেছনে আগে থেকেই রাখা ছিল বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। জনমনে ভীতি, নৈরাজ্য, অরাজকতা সৃষ্টি করার জন্য কোনো গোষ্ঠী এটি করতে পারে। তবে জঙ্গি সম্পৃক্ততা আছে কি-না, এই মুহূর্তে বলা যাবে না বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া। গতকাল দুপুরে ককটেল বিস্ফোরণে আহত রিকশাচালক লাল মিয়াকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে দেখতে এসে তিনি এসব কথা বলেন।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, কাউন্টার টেররিজম, ডিবি, সিআইডি ঘটনাস্থলে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছে। কারা কী উদ্দেশ্যে এই বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এটি কী ধরনের বিস্ফোরক তা কাউন্টার টেররিজমের বোম ডিসপোজাল ইউনিট খতিয়ে দেখছে। এটি পুলিশকে টার্গেট, নাকি অন্য কোনো লক্ষ্যে করা হয়েছে তাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

ডিএমপি প্রধান বলেন, ককটেল বিস্ফোরণে আহত রিকশাচালক লাল মিয়ার মাথার স্কাব ভেঙে বেইনে চাপ লেগেছে। রবিবার রাতে তার মাথার অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। এখন সবকিছু নরমাল আছে। তবে সে এখনো ঝুঁকিপূর্ণ। তার চিকিৎসার জন্য যা যা করা দরকার সবকিছুই করা হচ্ছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর