মঙ্গলবার, ২৮ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা
চারপাশে শুধুই সামাজিক অস্থিরতা

ছেলে বাবাকে টাকা দিয়ে বলল বিষ কিনে খাও

মেহেরপুর প্রতিনিধি

মাত্র তিন কাঠা জমির জন্য ছেলে বাবার হাতে টাকা তুলে দিয়ে বলল বিষ কিনে খাও। মেহেরপুর মুজিবনগর উপজেলার মহজনপুর গ্রামে হাসেম আলী নামে এক ব্যক্তি তার মায়ের কাছ থেকে কৌশলে জমি লিখিয়ে নিয়ে বাবা-মাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। বাবা বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার প্রতিবাদ জানালে ছেলে বাবাকে ১শ টাকা দিয়ে বিষ কিনে খেতে বলেছে। বর্তমানে এ দুই বয়োবৃদ্ধ স্বামী-স্ত্রী খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। জানা যায়, মা রওশন আরা এক কাঠা জমি মেজো ছেলে হাসেম আলীর কাছে বিক্রি করে। এই এক কাঠা জমি রেজিস্ট্রি করতে যেয়ে কৌশলে হাসেম আলী পুরো ৩ কাঠা জমি নিজের নামে লিখে নেয়। এ ঘটনা তিন বছর আগের। এর পর থেকে মা রওশন আরা ও বাবা কাসেম আলীকে অমানবিক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে  হাসেম আলী ও তার স্ত্রী নাজমিন। বর্তমানে বৃদ্ধ স্বামী-স্ত্রী খোলা আকাশের নিচে খেয়ে না খেয়ে বসবাস করছে। স্থানীয় গ্রামবাসী জানান, গত তিন বছর ধরে ছেলে হাসেম আলী ও তার স্ত্রী নাজমিন তাদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন করছে। এই বৃদ্ধ স্বামী-স্ত্রীর যাওয়ার কোনো জায়গা না থাকায় তারা মুখ বুজে নীরবে অত্যাচার সহ্য করে যাচ্ছে। গ্রামবাসী এসব  অভিযোগ করেন অভিযুক্ত হাসেম আলী ও তার স্ত্রীর সামনেই। এ সময় হাসেম আলী ও তার স্ত্রী নীরব ছিল।  গ্রামবাসীর আরও অভিযোগ, গত শুক্রবার ছেলে হাসেম বাবার হাতে ১শ টাকার নোট দিয়ে বলে বিষ কিনে খাও। সমাজের উচ্চ শ্রেণির মানুষের কাছে ধর্না দিয়েও সুরাহা মেলেনি বাবা-মায়ের। বরং সমাজপতিদের কাছে যাওয়ার জন্য বাবা-মাকে মারধর করে না খেয়ে ফেলে রাখত হাসেম ও তার স্ত্রী। বছর তিনেক আগে হাসেমের বিচার করতে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়েছিল। সে সময় হাসেম গ্রামবাসী ও মা-বাবার হাত-পা ধরে রক্ষা পায়। মা রওশন আরা বলেন, তিন বছর আগে হাসেমের নামে এক কাঠা জমি লিখে দিতে চাই। কিন্তু এই সুযোগে বউয়ের কথা মতো পুরো তিন কাঠা জমি কৌশলে নিজের নামে লিখে নেয় হাসেম। জমি রেজিস্ট্রির সময় আমাকে ভ্যানে করে রেজিস্ট্রি আফিসে নিয়ে যায়। ভ্যান থেকে নামতে না দিয়ে তাড়াহুড়া করে ভ্যানের ওপরই দলিলে আমার সই নেয়। তার পর থেকেই আমাদের বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার নানান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে হাসেম ও তার স্ত্রী নাজমিন। কাসেম আলী বলেন, আমাদের কষ্টের কথা বলতে সমাজের বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছি কিন্তু কেউ আমাদের কথা শোনেনি। ছোট ছেলে মোসারেফ সাহায্য করার জন্য আসলেও তাকে শাসিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে হাসেম। এই ব্যাপারে ৭ নম্বর ইউপি সদস্য সানোয়ার হোসেন বলেন, আমি বিষয়টি মোটামুটি জানি। আমরা অনেকবার চেষ্টা করেও সমাধান করতে পারিনি। হাসেম আলী বলেন, আমার মেয়ে বড় হয়েছে। তার বিয়ে দিতে হবে। বিয়ের জন্য পাকা ঘর করতে হবে। আর আমি তো তাদের নির্যাতন করি না। গোয়াল ঘরের পাশে তাদের জন্য কুঁড়েঘর করে দেওয়া হচ্ছে। সেখানে তারা অনায়াসে থাকতে পারবে।

সর্বশেষ খবর