মঙ্গলবার, ২৮ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

আদালত প্রতিবেদক

ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির জবানবন্দি রেকর্ড করে ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার মামলায় ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ দিয়েছে আদালত। পিবিআইর দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে গতকাল বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মাদ আস সামছ জগলুল হোসেন এ আদেশ দেন।

এ বিষয়ে সাইবার ট্রাইব্যুনালের পেশকার শামীম আল মামুন সাংবাদিকদের বলেন, আসামিকে গ্রেফতার করা গেল কি না সে বিষয়ে তামিল-সংক্রান্ত প্রতিবেদন আগামী ১৭ জুনের মধ্যে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। মামলা সূত্রে জানা গেছে, মার্চ মাসে নুসরাত তার মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ করার পর তদন্তে তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম থানায় ডেকে নিয়ে এই মাদ্রাসাছাত্রীর জবানবন্দি নিয়েছিলেন। এর কয়েক দিনের মাথায় নুসরাতের গায়ে অগ্নিসংযোগ করা হলে তা নিয়ে সারা দেশে আলোচনার মধ্যে ওই জবানবন্দির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। অগ্নিদগ্ধ নুসরাতের মৃত্যুর পর ১৫ এপ্রিল ওই ভিডিও ছড়ানোর জন্য ওসি মোয়াজ্জেমকে আসামি করে ঢাকায় বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বাদী হয়ে মামলা করেন আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। পরে বাদীর জবানবন্দি গ্রহণের পর বিচারক ওই অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই)। এর ধারাবাহিকতায় পিবিআই যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়, সেখানে ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ার কথা বলা হয়।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, মোয়াজ্জেম হোসেন ওসি হিসেবে রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থেকেও নিয়মবহির্ভূতভাবে নুসরাতের বক্তব্যের ভিডিও ধারণ ও প্রচার করে দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। সুশৃঙ্খল বাহিনীর সদস্য হয়েও নিয়মবহির্ভূতভাবে শ্লীলতাহানির ঘটনার বক্তব্যের ভিডিও ধারণ ও প্রচার করে অপেশাদারত্বের পরিচয় দিয়েছেন তিনি। এতে পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের তিনটি ধারায় (২৬, ২৯ ও ৩১) ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে অপরাধের প্রমাণ পেয়েছে পিবিআই। এর আগে ৬ এপ্রিল সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। শরীরের ৮০ শতাংশ পোড়া নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে পাঁচ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর মারা যান তিনি। মৃত্যুর আগে তাকে ছাদে ডেকে নিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার একটি বর্ণনা দিয়ে যান নুসরাত। গায়ে আগুন দেওয়ার আগে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে নুসরাতের মায়ের করা মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছিল। নুসরাত হত্যার ঘটনা তদন্তে স্থানীয় পুলিশের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ উঠলে পুলিশ সদর দফতর ঘটনাটি তদন্ত করে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী ফেনীর পুলিশ সুপার (এসপি) জাহাঙ্গীর আলমকে ১২ মে প্রত্যাহার করা হয়। এর আগে একই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করে রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়। এ ছাড়া সুপারিশ অনুযায়ী বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে অভিযুক্ত এসআই (নিরস্ত্র) মো. ইউসুফকে খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয় এবং এসআই (নিরস্ত্র) মো. ইকবাল আহাম্মদকে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় সংযুক্ত করা হয়।

সর্বশেষ খবর