বৃহস্পতিবার, ৩০ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

খুনোখুনি আওয়ামী লীগে

সংসদ নির্বাচনের পর ৫ মাসে ১৭ নেতা-কর্মী হত্যাকাণ্ডের শিকার, উপজেলা নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় ২, অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ১২, ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বে ২ জন নিহত

রফিকুল ইসলাম রনি

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের অন্তত ১৭ জন নেতা-কর্মী হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে উপজেলা নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় দুজন, অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ১২ জন, ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বে দুজন, গাছ কাটা নিয়ে একজন নিহত হয়েছেন। পদ-পদবি, আধিপত্য ধরে রাখা, ব্যবসা-বাণিজ্য, টেন্ডার ও চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় এসব খুনের ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় রয়েছে। অন্যদিকে বিরোধী দল সক্রিয় না থাকায় সরকারি দলের নেতা-কর্মীরা ব্যক্তিগত নানা সুযোগ-সুবিধা বাগিয়ে নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। ফলে দলটির মধ্যে খুনোখুনি ও কোন্দল বাড়ছে। তারা বলছেন, বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশে পাওয়া-না পাওয়া থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ, অন্তঃকলহ থাকবে এটাই স্বাভাবিক। বর্তমানে এটা আওয়ামী লীগের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত। তবে এসব খুনকে পারিবারিক, অরাজনৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয় এবং তুচ্ছ ঘটনা হিসেবে দেখছেন তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতারা।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের সামাজিক মূল্যবোধে অধঃপতনের কারণেই ছোটখাটো ঘটনা বড় ধরনের পরিণতি ডেকে আনছে। যার ফলে খুনের ঘটনাগুলো ঘটছে। হত্যাকান্ডের চরিত্রগুলো অরাজনৈতিক। কেউ রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে খুনের শিকার হননি।’ জানা গেছে, গত শনিবার বান্দরবান পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার ও পৌর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি চথোয়াইমং’র গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে স্থানীয় পুলিশ। তাকে অপহরণের পর গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। ১৯ মে বান্দরবানের রাজবিলায় আওয়ামী লীগের সর্মথক ক্য চিং থোয়াই মারমা (২৭)-কে অপহরণের পর গুলি করে হত্যা করে। ৮ মে ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে যুবলীগ নেতা আলমগীর হোসেনকে (৩৭) কুপিয়ে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। নিহত আলমগীর উপজেলার উস্তি ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য ছিলেন।

১৩ মে ময়মনসিংহ শহরে রেজাউল করিম রাসেল (৩৫) নামের এক জেলা যুবলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গত ২০ মে রাঙামাটির রাজস্থলীর বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি ক্য হা চিং মারমাকে ঘরে ঢুকে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। ২০ মে বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায় রতন মিয়া আকন্দ (২৭) নামে যুবলীগের এক নেতাকে দিনদুপুরে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ঢুকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।

১৯ মে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জয়নাল আহমেদ (৩২) ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছেন।

২ মে গভীর রাতে স্থানীয় বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে রাজবাড়ীর পাংশায় আওয়ামী লীগের এক নেতাকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। নিহত পিকুল বিশ্বাস সরিষা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তার ভাই সরিষা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজমল আল বাহার।

গত ১৯ মার্চ রাঙামাটি উপজেলা নির্বাচনের দিন সাতজনকে হত্যার ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে আলিক্ষ্যং এলাকায় বিলাইছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুরেশ কান্তি তঙ্গচঙ্গ্যাকে পরিবারের সদস্যদের সামনে গুলি করে হত্যা করা হয়। গত ৯ মার্চ যশোরের অভয়নগরে গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে শেখ আবদুস সালাম (৪৮) নামে সিদ্ধিপাশা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ১৬ মার্চ জয়পুরহাটের কালাইয়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন-পরবর্তী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিবদমান দুই পক্ষের সমর্থকদের সংঘর্ষে আওয়ামী লীগের দুই কর্মী নিহত এবং আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২৫ জন। নিহতরা হলেন- কালাই উপজেলার পুনট বাজারের মোন্নাপাড়া গ্রামের আফতাব হোসেন ও একই উপজেলার মাহিস্যপাড়ার রতন হোসেন। জানা গেছে, গত ১০ মার্চ প্রথম ধাপে অনুষ্ঠিত কালাই উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হয়। ১ জানুয়ারি চট্টগ্রামের সীতাকু  পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি মো. দাউদ সম্রাটকে (৩০) কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পুলিশ দাবি করছে, অভ্যন্তরীণ বিরোধের জেরে এই ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় এক যুবলীগ নেতার সঙ্গে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল বলে জানা গেছে। গত ৮ জানুয়ারি বরগুনা সদর উপজেলায় শামীম ইমতিয়াজ ওরফে বাদশা মৃধা (৩০) নামে এক যুবলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষরা। তিনি উপজেলা যুবলীগের সদস্য ছিলেন। ১ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুর ফাঁদ পেতে ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার মোয়াজ্জেমপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোর্শেদ আলীকে (৫৫) রাত সাড়ে ১০টার দিকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি যশোরের চৌগাছায় দলীয় প্রতিপক্ষের অস্ত্রের আঘাতে আবদুল বারিক (৪৫) নামে এক ওয়ার্ড যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নিহত হয়েছেন। জানা যায়, চৌগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম হাবিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ফুলসারা ইউপি চেয়ারম্যান মেহেদী মাসুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে দুটি গ্রুপ রয়েছে। নিহত আবদুল বারিক সাধারণ সম্পাদক মেহেদী মাসুদ চৌধুরীর অনুসারী বলে পরিচিত। গত ২৫ জানুয়ারি রাতে কিশোরগঞ্জে যুবলীগ নেতা এ কে এম ইউসুফ মনিরকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিকে মাদারীপুরের সদর উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য সাহেবালী মাতুব্বর (৫৫) হত্যাকান্ডে র শিকার হন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর