বৃহস্পতিবার, ৩০ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

নুসরাত হত্যায় ১৬ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট

ওসি মোয়াজ্জেম আগাম জামিন চান এসেছিলেন আদালত প্রাঙ্গণে!

নিজস্ব প্রতিবেদক ও ফেনী প্রতিনিধি

নুসরাত হত্যায় ১৬ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট

ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় মোট ১৬ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র আদালতে জমা দিয়েছে পিবিআই। গতকাল দুপুরে ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. জাকির হোসেনের আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক মো. শাহ আলম। পিবিআই চট্টগ্রাম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইকবাল জানান, পিবিআই মামলার তদন্তের দায়িত্ব নেওয়ার ৫০ দিনের মধ্যে ৩৩ কার্যদিবসে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে। ৮০৮ পৃষ্ঠার এ অভিযোগপত্রে ‘হুকুমদাতা’ হিসেবে সোনাগাজীর ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলাকে ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে। অভিযোগপত্রে নুসরাতের গায়ে আগুন দেওয়ার ঘটনায় সরাসরি জড়িত পাঁচজনসহ মোট ১৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া ওই মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সহসভাপতি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমীন এবং সোনাগাজীর পৌর কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা মাকসুদ আলম ওই হত্যাকা- বাস্তবায়নে আর্থিক সহযোগিতাসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন বলে এতে উল্লেখ করা হয়েছে। অভিযোগপত্রে ৯২ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। এদের মধ্যে কার্যবিধির ১৬১ ধারায় ৬৯ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। এদের মধ্যে সাতজন সাক্ষী ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিমূলক সাক্ষ্য দিয়েছেন। আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্রের সারমর্ম বিচারকের কাছে তুলে ধরেন। হত্যার পরিকল্পনা, প্রস্তুতি, হত্যার সময়কালীন ঘটনার ডিজিটাল স্কেচও আদালতে তুলে ধরেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। নুসরাত জাহান রাফিকে অগ্নিদগ্ধ করে হত্যা করা এবং হত্যার পরিকল্পনায় অংশগ্রহণ ও হত্যাকান্ডে সহযোগিতায় জড়িতদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধিত ২০০৩) এর ৪ (১) ও ৩০ ধারায় অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। পিবিআই অভিযোগপত্রে ১৬ আসামির সবার সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদ- চাওয়া হয়েছে। এদিকে বাদী পক্ষের আইনজীবী এম শাহজাহান সাজু জানান, পিবিআই আদালতে ৮০৮ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র দাখিল করার পর ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. জাকির হোসেন অভিযোগপত্রটি সিন (দেখেন) করেন। ৩০ মে মামলার নিয়মিত ধার্যদিন থাকায় অভিযোগপত্রের ওপর শুনানি হবে বলে বিচারক উপস্থিত আইনজীবীদের জানিয়েছেন। মামলার ধারা অনুযায়ী মামলাটির বিচারকাজ চলবে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে। সেক্ষেত্রে আমলি আদালত থেকে মামলাটি ওই ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করতে হবে। এর পর মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণের ওপর শুনানি হবে। পিবিআইয়ের অভিযোগপত্রে সোনাগাজী মডেল থানার সাবেক ওসি মো. মোয়াজ্জেম হোসেনকে আসামি করা হয়নি। এই ওসি প্রথম থেকে হত্যার ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে প্রচারণা চালায়। মামলার অভিযোগপত্রে ওসিকে কেন আসামি করা হয়নি অভিযোগপত্রের শুনানির দিন আইনজীবীরা পিবিআইর কাছে জানতে চাইবেন। প্রয়োজনে আইনজীবীরা মামলার বাদী নুসরাতের ভাই নোমানের সঙ্গে আলাপ করে অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে নারাজি জানাবেন। নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বলেন, মামলার অভিযোগপত্রে অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা, কাউন্সিলর মাকছুদ আলমসহ ১৬ জনকে অভিযুক্ত করায় আমরা সন্তোষ প্রকাশ করছি। একইসঙ্গে আমরা আদালতের কাছে সব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি। মামলার বাদী নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান জানান, আমি মনে করি আমার বোনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়া ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে এ মামলায় অভিযোগপত্রে আসামি করা উচিত ছিল। আমি আমার আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

গ্রেফতার এড়াতে ওসি মোয়াজ্জেমের আগাম জামিন আবেদন : ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির জবানবন্দি ইন্টারনেটে ছড়ানোর ঘটনায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর হাই কোর্টে আগাম জামিনের আবেদন করেছেন সোনাগাজী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেন। গতকাল সালমা সুলতানা নামে সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী মোয়াজ্জেম হোসেনের পক্ষে হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদনটি দাখিল করেন। এর আগে গত সোমবার এ মামলায় ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল। ওইদিন এ মামলায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার রীমা সুলতানা ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে ১২৩ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন আদালতে জমা দেন। প্রতিবেদনে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ার কথা জানানো হয়েছে। পরে ওসির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। শুনানি শেষে বিচারক গ্রেফতারি পরোয়ানার জারি করেন। এদিকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর থেকে মোয়াজ্জেম হোসেনের কোনো হদিস না পাওয়া গেলেও গতকাল তাকে সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় দেখা গেছে বলে জানা গেছে। দুপুর দেড়টার দিকে ওসি মোয়াজ্জেম হাই কোর্টে আসার পর দুইটার দিকে বেরিয়ে যান বলে সূত্রটি জানিয়েছে।

সর্বশেষ খবর