বৃহস্পতিবার, ৩০ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

নাছির আরিফ মর্যাদা না পাওয়ায় ক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম ও সিলেট

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আদেশে ঢাকা উত্তর, রাজশাহী ও খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়রদের যথাক্রমে মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়া হলেও এ মর্যাদা থেকে বাদ পড়েছেন চট্টগ্রাম ও সিলেটের মেয়র। ফলে এ দুই সিটিতে তৈরি হয়েছে ক্ষোভ।

চট্টগ্রাম : দেশের অর্থনীতির প্রাণভোমরা চট্টগ্রাম। বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামকে ঘিরেই চলছে দেশের সিংহভাগ বাণিজ্যযজ্ঞ। বিদেশিরা এ বাণিজ্য শহরকে ভিন্ন চোখে দেখলেও নিজ দেশেই নেই যেন এ শহরের গুরুত্ব। অর্থনীতির ‘পাইপলাইন’ খ্যাত চট্টগ্রাম শহর থেকে নির্বাচিত মেয়র আ জ ম নাছিরের নেই কোনো পদমর্যাদা। নির্বাচিত হওয়ার চার বছর অতিবাহিত হয়ে গেলেও এখনো ‘মর্যাদাহীন’ভাবে রয়েছেন মেয়র। এ নিয়ে ক্ষোভের অন্ত নেই চট্টলবাসীর। চট্টগ্রামের শিক্ষাবিদ, ব্যবসায়ী নেতা, সামাজিক সংগঠকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনকে পূর্ণমন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়ার দাবি করেছেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘জনসংখ্যা ও অন্যান্য দিক দিয়ে ঢাকার পরই চট্টগ্রামের স্থান। আয়তনের দিক দিয়েও চট্টগ্রাম দ্বিতীয় অবস্থানে। সার্বিক বিষয় চিন্তা করলে চট্টগ্রামের মেয়র মন্ত্রী কিংবা প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা পাওয়ার অধিকার রাখেন। তাই মেয়র আ জ ম নাছিরকে পদমর্যাদা দেওয়া উচিত।’ চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালক ও দেশের অন্যতম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছগির আহমেদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামকে বাণিজ্যিক রাজধানী ঘোষণা দিয়েছেন। অথচ এ নগরের মেয়রকে মর্যাদা দিচ্ছেন না। বিষয়টা দ্বৈতনীতির মতো। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরের মেয়রের মর্যাদা অবশ্যই পূর্ণমন্ত্রীর হওয়া উচিত। মেয়র নাছিরকে মর্যাদা না দেওয়ার অর্থই হচ্ছে ভোটারদের অবমূল্যায়ন করা।’ চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি আলী আব্বাস বলেন, ‘আ জ ম নাছির শুধু মেয়র নন, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকও। অন্যান্য সিটি করপোরেশনের মেয়রদের যেখানে পদমর্যাদা দেওয়া হচ্ছে সেখানে চার বছর ধরে মর্যাদাবঞ্চিত তিনি। বিষয়টা অবশ্যই দুঃখজনক। মেয়রকে পদমর্যাদা দেওয়া হলেও চট্টগ্রামবাসীকে সম্মানিত করা হবে। তাই আ জ ম নাছিরকে মেয়রের পদমর্যাদা দেওয়ার দাবি করছি।’

সিলেট : খুলনার তালুকদার আবদুল খালেক ও রাজশাহীর এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের ভাগ্যে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা জুটলেও এবারও বঞ্চিত হয়েছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। প্রথমবার মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পরও তার গাড়িতে ওঠেনি পতাকা। এবারও বঞ্চিত হওয়ায় সিলেটে রাজনৈতিক মহল ও নাগরিক সমাজে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ। শুধু দলীয় পরিচয় বিবেচনায় আরিফকে তার প্রাপ্য মর্যাদা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে বলে মনে করছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। তবে দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, সিলেটের মানুষের প্রতি সম্মান দেখিয়ে সিসিক মেয়রকে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি খন্দকার সিপার আহমদ বলেন, ‘দেশের অর্থনীতিতে সিলেট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আধ্যাত্মিক রাজধানী হিসেবেও সিলেটের সুনাম রয়েছে। কিন্তু সিলেট মহানগরের মানুষের ভোটে নির্বাচিত মেয়রকে মন্ত্রীর মর্যাদা থেকে বঞ্চিত করে এ অঞ্চলের মানুষের মনে কুঠারাঘাত করা হয়েছে। আমরা এখনো আশাবাদী দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে না দেখে সিলেটের মানুষের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে আরিফুল হক চৌধুরীকে তার প্রাপ্য মর্যাদা প্রদান করা হবে।’ সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হোসেইন আহমদ বলেন, ‘আরিফুল হক চৌধুরীকে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা না দিয়ে সিলেটের প্রতি অবিচার করা হয়েছে। যেসব সিটি মেয়রকে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়া হয়েছে সেসব সিটি থেকে সিলেট সিটি করপোরেশন কোনো অংশেই পিছিয়ে নেই। আমরা অবিলম্বে সিলেটের মেয়রকেও প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’ প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা না পাওয়া প্রসঙ্গে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী হওয়ার লোভ আমার নেই। মানুষ আমাকে কাজ করার জন্য মেয়র নির্বাচিত করেছেন। আমি মানুষের সেই ভালোবাসার প্রতিদান দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। তবে এর আগেও এই সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা পেয়েছেন। এখন সরকার এই মহানগরের মানুষকে সম্মান দেখিয়ে তাদের জনপ্রতিনিধিকে কী মর্যাদা দেবে সেটা তাদের বিষয়।’

সর্বশেষ খবর