শুক্রবার, ৩১ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা
ফিউচার অব এশিয়া সম্মেলনে শেখ হাসিনা

এশিয়ার ভবিষ্যৎ টেকসই সুষম উন্নয়নের ওপর

জাহাঙ্গীর আলম, টোকিও থেকে

এশিয়ার ভবিষ্যৎ টেকসই সুষম উন্নয়নের ওপর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্ব আজ নানাভাবে চ্যালেঞ্জ ও সংঘাতের মুখোমুখি। এ ক্ষেত্রে এশিয়ার ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে টেকসই ও সুষম উন্নয়নের ওপর। একইভাবে আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা এবং উইন-উইন আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ওপর।

গতকাল টোকিওর ইমপেরিয়াল হোটেলে ‘দ্য ফিউচার অব এশিয়া’ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

সম্মেলনে উপস্থিত এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের রাজনীতিক, অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও তাত্ত্বিকদের সামনে এশিয়ার সম্ভাবনা ও উত্থান নিয়ে শেখ হাসিনা তার ভাবনার কথা তুলে ধরেন। নানা চ্যালেঞ্জ ও সংঘাতে জর্জরিত বিশ্বব্যবস্থার মধ্যে কীভাবে মানুষের সমৃদ্ধি, সমতা ও উন্নয়ন আনা যায় সে ব্যাপারেও আলোকপাত করেন। জাপানি সম্প্রচারমাধ্যম ‘নিকেই’ আয়োজিত এ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ, কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী ও ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট অংশ নেন। এ সম্মেলনকে এশিয়ায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সম্মেলন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের যৌথভাবে উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। আমরা বিশ্বশান্তি ও স্থিতিশীলতা বৃদ্ধির জন্য একটি গ্রুপ হিসেবে একত্রিত হতে পারি, যারা একটি বহুমাত্রিক বিশ্বব্যবস্থাকে উৎসাহিত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর অধিকার ও স্বার্থ রক্ষা করতে পারি। তিনি বলেন, আমাদের প্রয়োজন বৃহত্তর উন্মুক্ততাসহ বিশ্বকে শক্তিশালী করার অঙ্গীকার করা, বিশ্বব্যাপী চ্যালেঞ্জগুলো যৌথভাবে মোকাবিলা করা, ন্যায্যতা ও ন্যায়বিচার রক্ষা করা এবং উদ্ভাবনী ধারণা ও পদক্ষেপগুলো ব্যবহার করে সহযোগিতার নতুন উদ্দীপনা জোরদার করা। শেখ হাসিনা বলেন, অর্থনীতিকে উদ্ভাবনী অনুশীলনের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। অংশীদারিত্বের একটি উইন-উইন কৌশল ও মানুষের সুবিধার জন্য পারস্পরিক বিশ্বাস এবং সম্মান, সাধারণ উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন, আমরা সবসময়ই শান্তি ও অগ্রগতিকে এগিয়ে নিতে জোর দিয়েছি যা থেকে সরাসরি উপকৃত হবে জনগণ। শেখ হাসিনা বলেন, এশিয়া ও এর বাইরের অর্থনীতির মধ্যে ঘনিষ্ঠ পারস্পরিক নির্ভরতা বৃদ্ধির ফলে অর্থনীতি ও সমাজে সম্পদের জোগান আরও বাড়বে। আর এটা হবে পণ্য ও জনগণের আন্তসীমান্তের আন্দোলন, জ্ঞান, অভিজ্ঞতার বিস্তৃতি ও ভাবধারা বিনিময়ের মাধ্যমে। তিনি বলেন, আমরা দেখছি সম্পদ ও সুযোগের অভূতপূর্ব মাত্রা, জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ানো, শিক্ষার আরও বেশি প্রবেশাধিকার, শিশুমৃত্যুর হার কমে যাওয়া এবং দারিদ্র্যের হার হ্রাস পাওয়া যা একসময় কল্পনা করাও কঠিন ছিল। সম্মেলনে রোহিঙ্গাদের প্রসঙ্গ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, অনেক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও দায়িত্বশীল দেশ হিসেবে আমরা জোরপূর্বক স্থানান্তরিত ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছি। আমরা শুধু মানবিক আবেদনেই সাড়া দিচ্ছি না; এ সংকট যেন বিশৃঙ্খলা ও আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতার দিকে না যায় সে বিষয়েও সচেতন রয়েছি । তীব্র উত্তেজনা ও সংকটের মুখেও এ সমস্যা সমাধানের জন্য সংলাপ ও ঐকমত্য চেয়েছি আমরা। তিনি বলেন, বিশ্বসম্প্রদায়ের সদস্য হিসেবে, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি স্থিতিশীল ও টেকসই বিশ্বব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সব বন্ধু ও অংশীদারের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বজুড়ে বহু চ্যালেঞ্জ ও কষ্টের মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও এটা আমাকে আশা দেখায় যে, আমরা জ্ঞানের সীমানা প্রসারিত করে রেখেছি, পৃথিবীকে অতিক্রম করে আরও সামনের দিকে ধাবিত হওয়ার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও অন্যান্য প্রযুক্তিগত বিস্ময় মানবসভ্যতাকে আরও উচ্চতায় পৌঁছানোর ক্ষমতা বাড়িয়ে দিয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, মানবতা ও ইতিবাচক শক্তি টিকে থাকবেই। বৈশ্বিক সম্প্রদায় আমাদের দিকে তাকাচ্ছে। উদীয়মান এশিয়া যা অবিরত শান্তি, সমৃদ্ধির নেতৃত্ব দিচ্ছে। তিনি বলেন, আমি কেবল ভবিষ্যতের আশাবাদী হতে পারি। বিশৃঙ্খলার ও দ্বন্দ্বকে ছাপিয়ে জয়ী হবে শান্তি ও বন্ধুত্ব।

জাইকা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক : জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)-এর প্রধান বলেছেন, তার সংস্থা বাংলাদেশের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গতকাল দুপুরে হোটেল নিউ ওটানিতে বৈঠক করেন জাইকার প্রেসিডেন্ট শিনিচি কিতাওকা। বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তিনি জানান, নির্বাচনে জয়লাভ করে পুনরায় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান জাইকার প্রেসিডেন্ট। জাইকা আগামীতে আরও ঘনিষ্ঠভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে চায় বলে সংস্থাটির প্রধান জানান। বাংলাদেশের উচ্চ প্রবৃদ্ধিকে উল্লেখযোগ্য বলে মন্তব্য করে শিনিচি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে শিক্ষামূলক কর্মসূচি আরও জোরদার করবে জাইকা। বাংলাদেশের মানবসম্পদ উন্নয়নে কাজ করতে চায় এ সংস্থা। বাংলাদেশে আরও বেশি পরিমাণে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির জন্য জাইকা কর্মসূচি নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির জন্য একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তুলতে জাইকার প্রেসিডেন্টের প্রতি আহ্বান জানান। জাপানের মতোই কৃষি অর্থনীতি থেকে শিল্পনির্ভর অর্থনীতিতে বাংলাদেশকে রূপান্তর করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুও চেয়েছিলেন জাপানকে মডেল হিসেবে ধরে উন্নয়ন করতে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এশিয়ায় উন্নত, উন্নয়নশীল ও অনুন্নত সব ধরনের দেশই আছে। আমরা যদি সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করতে পারি তাহলে বিশ্বে এশিয়া ডমিনেট করবে। সেই সম্ভাবনা আছে। বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, মুখ্যসচিব নজিবুর রহমান, এসডিজি-বিষয়ক সচিব আবুল কালাম আজাদ, পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক ও জাপানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা উপস্থিত ছিলেন।

 

সর্বশেষ খবর