শুক্রবার, ৩১ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

প্রশ্ন ফাঁসে ৮৭ ঢাবি শিক্ষার্থীসহ আসামি ১২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক

বহুল আলোচিত প্রশ্ন ফাঁস মামলার চার্জশিট প্রস্তুত করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। আগামী ৩ জুন এটি আদালতে জমা হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া এজাহারভুক্ত আট আসামির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রায় ১৫ কোটি টাকা লেনদেনের সন্ধান পেয়েছেন তারা। এদের বিরুদ্ধে প্রশ্ন ফাঁসের মামলা ছাড়াও মানি লন্ডারিং আইনে তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় দেড় বছরের দীর্ঘ তদন্ত শেষে এই মামলার চার্জশিটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ৮৭ শিক্ষার্থীসহ মোট ১২৫ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এর বাইরে আরও ৫৫ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। গতকাল বেলা ১১টার দিকে সিআইডি সদর দফতরে এ সংক্রান্ত এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় সংস্থাটির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, অভিযুক্ত ১২৫ জনের বাইরে আরও অনেকেই জড়িত আছে। যাদের মধ্যে ৪৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪৬ জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা, মেডিকেল ভর্তি ও বিসিএস পরীক্ষারও প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত ছিল বলে স্বীকার করেছে। অভিযুক্ত অনেকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বেশ কিছু টাকা পাওয়া গেছে। তাদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করা হবে। সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ডিআইজি শাহ আলম, ডিআইজি ইমতিয়াজ আহমেদ এবং বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম। সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম আরও বলেন, দেশব্যাপী আলোচিত এই ঘটনার শুরু ২০১৭ সালের ১৯ অক্টোবর মধ্যরাতে। সেই রাতে গণমাধ্যম কর্মীদের দেওয়া কিছু তথ্যের সূত্র ধরে ঢাবির দুটি আবাসিক হলে অভিযান চালায় সিআইডি। গ্রেফতার করা হয় মামুন ও রানা নামে দুই শিক্ষার্থীকে। তাদের দেওয়া তথ্যে পরদিন পরীক্ষার হল থেকে গ্রেফতার করা হয় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী রাফিকে। এরপর ২০ অক্টোবর শাহবাগ থানায় একটি মামলা হয়। তদন্তে উঠে আসে, চক্রটি পরীক্ষা শুরুর আগেই প্রিন্টিং প্রেস থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করত। ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে পর পর দুই বছর ফাঁসকরা প্রশ্ন নিয়ে সাভারের পল্লীবিদ্যুৎ এলাকার একটি বাসায় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের পড়িয়েছিল তারা। চক্রের মাস্টারমাইন্ড নাটোর জেলার ক্রীড়া কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান এছামী, প্রেস কর্মচারী খান বাহাদুর, তার আত্মীয় সাইফুল, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বনি ও মারুফসহ মোট ২৮ আসামিকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে প্রশ্ন ফাঁস চক্রটির মূলোৎপাটন করে সিআইডি। মূলত দুই ভাবে জালিয়াতি হয়। একটি চক্র প্রেস থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে। অন্যটি পরীক্ষা শুরুর কয়েক মিনিট আগে কেন্দ্র থেকে প্রশ্নপত্র নিয়ে দ্রুত তা সমাধান করে ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীকে সরবরাহ করে। প্রেস থেকে প্রশ্ন ফাঁসকারী পুরো চক্র চিহ্নিত হলেও ডিজিটাল ডিভাইস চক্রটিকে চিহ্নিত করতে বেগ পেতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত ডিজিটাল জালিয়াত চক্রটিকেও চিহ্নিত করা গেছে। ধরা পড়েছে চক্রের মাস্টারমাইন্ড বিকেএসপির সহকারী পরিচালক অলিপ কুমার বিশ্বাস, মূলহোতা ইব্রাহীম, মোস্তফা কামাল, হাফিজুর রহমান হাফিজ এবং তাজুল ইসলাম। চার্জশিটে অভিযুক্ত আসামিদের মধ্যে ঢাবির ১৮ শিক্ষার্থী গ্রেফতার হয়েছে। পলাতক রয়েছে আরও ৫৯ শিক্ষার্থী। গ্রেফতার অন্য আসামিদের মধ্যে বিকেএসপির কর্মকর্তা ও প্রেস কর্মচারীসহ ২৯ জন রয়েছে। মোট পলাতক আসামি ৭৮ জন।

যাদের সম্পদ জব্দ : প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় চার্জশিটে অভিযুক্ত আটজনের ব্যাংকে প্রায় ১৫ কোটি টাকা অবৈধভাবে লেনদেনের সন্ধান পাওয়া যায়। তারা হলেন- বিকেএসপির সহকারী পরিচালক অলিপ কুমার বিশ্বাস, ইব্রাহীম মোল্লা, মোস্তফা কামাল, হাফিজুর রহমান, মাসুদ রহমান তাজুল, রিমন হোসেন, আইয়ুব আলী বাঁধন ও রাকিবুল হাসান। তাৎক্ষণিকভাবে তদন্তে তাদের প্রায় ২০ কোটি টাকার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে গত বছরের ৭ জানুয়ারি উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা করা হয়। নড়াইলে ইব্রাহীমের বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স বাড়ি এবং খুলনায় রিয়েল এস্টেট ব্যবসার খোঁজ পায় তদন্ত কর্মকর্তারা।

যাদের নামে অভিযোগপত্র : ইব্রাহীম, অলিপ কুমার বিশ্বাস, মোস্তফা কামাল, হাফিজুর রহমান, মাসুদ রহমান তাজুল, রিমন হোসেন, মহিউদ্দিন রানা, আইয়ুব আলী বাঁধন, আবদুল্লাহ আল মামুন, ইশরাক হোসেন রাফি, জাহাঙ্গীর আলম, মামুন মিয়া, অসিম বিশ্বাস, আনোয়ার হোসেন, নুরুল ইসলাম, হাসমত আলী সিকদার, হোসনে আরা বেগম, গোলাম মো. বাবুল, টি এম তানভির হাসনাইন, সুজাউর রহমান সাম্য, রাফসান করিম, আখিনুর রহমান অনিক, নাজমুল হাসান নাঈম, ফারজাদ ছোবহান নাফি, আনিন চৌধুরী, রকিবুল হাসান ইসমী, বনি ইসরাইল, মারুফ হোসেন, সাইফুল ইসলাম, খান বহাদুর, কাজী মিনহাজুল ইসলাম, নাহিদ ইফতেখার, রিফাত হোসেন, বায়জিদ, ফারদিন আহম্মেদ সাব্বির, তানভির আহম্মেদ মল্লিক, প্রসেনজিত দাস, আজিজুল হাকিম, নাভিদ আনজুম তনয়, সালমান এফ রহমান হৃদয়, সজীব আহাম্মেদ, শিহাব হোসেন খান, এনামুল হক আকাশ, মোশারফ মোসা, মোহায়মেনুল ইসলাম বাঁধন, সাইদুর রহমান, আবদুর রহমান রমিজ, গোলাম রাব্বী খান জেনিথ, উৎপল বিশ্বাস, বেলাল হোসেন বাপ্পী, মশিউর রহমান সমীর, আবু জুনায়েদ সাকিব, মোস্তাফিজ-উর-রহমান মিজান, আবুল কালাম আজাদ, শরমিলা আক্তার আশা, মাসুদ রানা, জেরিন হোসাইন, শেখ জাহিদ বিন হোসেন ইমন, তাজুল ইসলাম সম্রাট, আবির হাসান হৃদয়, মোর্শেদা আক্তার সালমান হাবিব আকাশ, আলামিন পৃথক, শাহ মেহেদী হাসান হৃদয়, অনিকা বৃষ্টি, ফিওনা মহিউদ্দিন মৌমি, সিনথিয়া আহম্মেদ, শাবিরুল ইসলাম সনেট, লাভলুর রহমান লাভলু, ইছাহাক আলী ইছা, আবদুল ওয়াহিদ মিশন, তানজিনা সুলতানা ইভা, ইশরাত জাহান ছন্দা, আশেক মাহমুদ জয়, নাফিসা তাসনিম বিন্তী, প্রণয় পান্ডে, নুরুল্লাহ নয়ন, জিয়াউল ইসলাম, আশরাফুল ইসলাম আরিফ, জাকিয়া সুলতানা, শাদমান শাহ, সাদিয়া সিগমা, রবিউল ইসলাম রবি, মেহেজাবীন অনন্যা, রাকিবুল হাসান, এম ফাইজার নাঈম সাগর, সাদিয়া সুলতানা এশা, সামিয়া সুলতানা, ফাতেমা আক্তার তামান্না, নওশীন আফরিন মিথিলা, আমরিন আলম জুটি, সুবহা লিয়ানা তালুকদার, মোহাইমিনুল রায়হান ফারুক, সাফায়েতে নূর সাইয়ারা নোশিন, মাসুদ রানা, ইখতেখার আলম জিসান, রাকিব হাসান, খালিদ হাসান, আজলান শাহ ফাহাদ, সৌভিক সরকার, রিজন আহমদ পাঠান, মাহবুব আলম সিদ্দিকী সম্রাট, হাসিবুর রশিদ, আফসানা নওরিন ঋতু, মারুফ হাসান খান, তৌহিদুল হাসান আকাশ, শাহাদৎ আল ফেরদৌস ফাহিম, আয়েশা আক্তার তামান্না, ফাতেমা তুজ জোহরা মীম, শ্বাষত কুমার ঘোষ শুভ, রাসেল আলী, রাজীবুল ইসলাম রাজীব, আবু মাসুম, জান্নাত সুলতানা, জিএম রাফসান কবির, সাগর সাহা, সাদেকুল ইসলাম সুমন, আবদুল্লাহ, খাইরুজ্জামান সরকার সুজন, শাহেদ আহমেদ, মুহাইমিনুল ইসলাম মাসুদ, আশরাফুল আলম, হাসিবুুর রহমান রুবেল এবং মাকসুদুর রহমান শুভ।

সর্বশেষ খবর