শুক্রবার, ৩১ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

লায়লাতুল কদর

মোহাম্মদ আবদুল মজিদ

লায়লাতুল কদর

২৬ রমজান দিবাগত রাতে অর্থাৎ ২৭ রমজানের রাতে প্রচলিত অর্থে শবেকদর পালিত হয়ে থাকে। বিভিন্ন রেওয়ায়েত অনুযায়ী মাহে রমজানের শেষ ১০ দিনের যে কোনো একটি বেজোড় রাত শবেকদর। ঠিক কোন্ বেজোড় রাত শবেকদর তা নির্দিষ্ট নেই; এমনকি প্রত্যেক রমজানে তা         পরিবর্তিত হয়। সহিহ বোখারির এক রেওয়ায়েতে রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন- ‘রমজানের শেষ দশকে শবেকদর অন্বেষণ কর।’ সহিহ মুসলিমের রেওয়ায়েতে আছে- ‘শেষ দশকের বেজোড় রাত্রিগুলোতে তালাশ কর।’ আরবি ‘লায়লাতুল’ আর ফারসি ‘শব’ শব্দের অর্থ রাত এবং ‘কদর’ অর্থ ‘মহিমান্বিত’। অতীব তাৎপর্যপূর্ণ এ রাতের বিশেষ মর্যাদার কারণ নির্দেশ করে আল কোরআনের সূরা দুখান এবং সূরা কাদরে ইরশাদ হয়েছে- ‘শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের। আমি তো এ কিতাব অবতীর্ণ করেছি এক মুবারক রজনীতে, আমি তো সতর্ককারী। এ রজনীতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়।’ (সূরা দুখান। আয়াত ২-৪)। আমি ইহা অবতীর্ণ করেছি মহিমান্বিত রজনীতে; আর মহিমান্বিত রজনী সম্বন্ধে তুমি কী জান? এ মহিমান্বিত রজনী সহস্র মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। সে রাত্রিতে ফেরেশতা ও রূহ অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে। সেই রাত্রিতে শান্তিই শান্তি, যা থাকে ঊষার আবির্ভাব পর্যন্ত। (সূরা কাদর। আয়াত ১-৫)। আল কোরআন অবতীর্ণ হওয়ার গৌরবে দীপ্ত এই মহিমান্বিত রাতকে হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ রাত বলা হয়েছে। ইবনে আবী হাতেম বর্ণিত হাদিসে আছে- একবার রসুল (সা.) সাহাবিদের কাছে বনী ইসরাইলের জনৈক মুজাহিদ সম্পর্কে আলোচনা করলেন। সে এক হাজার মাস পর্যন্ত অবিরাম জেহাদে মশগুল থাকে এবং কখনো অস্ত্র সংবরণ করেনি। সাহাবারা এ কথা শুনে আক্ষেপ করছিলেন। তখন সূরা কদর  নাজিল হয়। সে সূত্রে নবীজি (সা.) তাদেরকে জানালেন আল্লাহ মুসলমানদের এমন একটি রাত এনায়েত করেছেন শুধু সে এক রাতের ইবাদতকে ওই মুজাহিদের এক হাজার মাসের ইবাদত অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ প্রতিপন্ন করা হয়েছে। সূরা কদর অবতীর্ণ হওয়ায় উম্মতে মোহাম্মদীর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হয়েছে। কুরতুবির ব্যাখ্যা অনুযায়ী শবেকদরের রাতে পরবর্তী এক বছরের অবধারিত বিধিলিপি ব্যবস্থাপক ও প্রয়োগকারী ফেরেশতাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেছেন, যে চারজন ফেরেশতাকে প্রত্যেক মানুষের জন্ম, মৃত্যু, রিজিক, বৃষ্টি ইত্যাদির তালিকা ও পরিমাণ এ রাতে হস্তান্তর করা হয় তারা হলেন- ইসরাফিল, মিকাঈল, আজরাঈল ও জিবরাঈল (আ.)। শবেকদরের মাহাত্ম্যের আরেকটি অন্যতম কারণ এ রাতে মানুষের কাছে আল কোরআন অবতরণ শুরু হয়। আল কোরআনের মাধ্যমে প্রথম যে বাণী মানুষের কাছে এসেছে তাহলো- ‘পাঠ কর তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন, সৃষ্টি করেছেন মানুষকে আলাক হতে। পাঠ কর, আর তোমার প্রতিপালক মহিমান্বিত, যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না।’ (সূরা আলাক। আয়াত ১-৫)। মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হয় তার জ্ঞান প্রজ্ঞায়, যা অর্জিত হয় শিক্ষার মাধ্যমে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানুষকে শিক্ষার সবক দিয়ে ‘আশরাফুল মাখলুকাত’ হিসেবে সব জীবজন্তুর ওপর শ্রেষ্ঠত্ব ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার শক্তি ও ক্ষমতা দিয়েছেন। মাহে রমজানে মানুষের এ মর্যাদা, সম্মান ও স্বীকৃতি তো রাহমানুর রাহিমের তরফ থেকে সেরা নিয়ামত।

লেখক :  সাবেক সচিব ও এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর