রবিবার, ২ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

বাঘের গর্জন শোনার দিন

বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচে আজ দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি, খেলবেন তামিম

বাঘের গর্জন শোনার দিন

ব্যাটিংয়ের দুই স্তম্ভ সাকিব ও মুশফিকের আজ অনেক দায়িত্ব -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বাস থেকে নেমেই প্যাড পরে ব্যাট হাতে ওভালের নেটে চলে গেলেন তামিম ইকবাল। বল হাতে পুরো ছন্দে দৌড়াতে শুরু করলেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। উড়ে গেল বাংলাদেশের দুশ্চিন্তার কালো মেঘ! তারপর প্রেস কনফারেন্সে স¦তঃস্ফূর্ত মাশরাফিকে দেখে আর বুঝতে বাকি থাকে না বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে মাঠে নামার আগে টাইগাররা কতটা ফুরফুরে মেজাজে! প্রতিপক্ষ ‘ভয়ঙ্কর’ দক্ষিণ আফ্রিকা! তাতে কি? টাইগার ক্যাপ্টেন সরাসরি জানালেন, ‘আমরা সেরা প্রস্তুতিই নিয়েছি।’ তাই সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে ওভালে আজ শোনা যাবে বাঘের গর্জন। তবে লন্ডনের এই মাঠে বাংলাদেশের স্মৃতি-দুঃস্মৃতি দুই-ই আছে। ২০১৭ সালে তামিম ইকবালের ১২৮ রানের মহাকাব্যিক ইনিংসে তিন শতাধিক রানের স্কোর করার পরও ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে হার। পরের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ১৮২ রানে প্যাকেট! যদিও সে ম্যাচে তামিম একাই করেছিলেন ৯৫ রান। মজার বিষয় হচ্ছে, ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচেই হেরেছিল বাংলাদেশ, আর অস্ট্রিলিয়ার বিরুদ্ধে সেই ম্যাচটা বৃষ্টির কারণে প- হয়ে যাওয়ায় ১ পয়েন্ট পেয়ে সেমিফাইনালে পৌঁছে যায় টাইগাররা। সেই ওভালেই আজ বিশ্বকাপ মিশন শুরু হচ্ছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে মাঠে নামার আগে বাংলাদেশ নিশ্চয়ই ২০০৭ সালের ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপের ম্যাচটির কথা মাথায় রাখবে। গায়ানার জর্জ টাউনের প্রোভিন্স স্টেডিয়ামে ৬৭ রানের ঐতিহাসিক সেই জয়টির কথা কি কভু ভোলা যায়! প্রোটিয়া পেসার আন্দ্রে নেইলের আগুনঝরা বোলিং উপেক্ষা করে মোহাম্মদ আশরাফুলের কী চমৎকার অনবদ্য ব্যাটিং। তারপর আব্দুর রাজ্জাক ও মোহাম্মদ রফিকের ঘূর্ণি জাদুতে অসাধারণ এক জয়। সে ম্যাচে সাকিবও নিয়েছিলেন দুই উইকেট।

তবে সেই জয় ছিল বিশ্বের কাছে ‘অঘটন’! কারণ তখন বাংলাদেশ ছিল নেহাতই এক ‘পুঁজকে’ দল। যাদের বিশ্বকাপে সুযোগ পাওয়া নিয়েই অনেকে নাক ছিটকাতো! কিন্তু এখন সেই দিন নেই। এটা ঠিক বাংলাদেশ ‘ফেবারিট’ নয়, কিন্তু নিজেদের যোগ্যতায় সেরা আটে থেকেই এই পর্যায়ে এসেছে টাইগাররা। তা ছাড়া এই দক্ষিণ আফ্রিকাকে সিরিজে হারানোর অভিজ্ঞতাও আছে। যদিও পরিসংখ্যান অন্য কথা বলে। ২০ ওয়ানডের মধ্যে মাত্র তিন ম্যাচ জিতেছে মাশরাফিরা। তবে ইতিহাস কিংবা পরিসংখ্যানই তো শেষ কথা নয়। সে কথা খুবই ভালো করেই জানে দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রোটিয়া দলের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলেনে আসা ইমরান তাহির সে কথাই জানালেন, ‘সবাই জানে, নিজেদের দিনে বাংলাদেশ খুবই ভয়ঙ্কর দল। তাই আমরাও নিজেদের মতো করে ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়েছি। কিন্তু ফল তো আমাদের হাতে। এটা বলতে পারি আমরা চ্যালেঞ্জ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত।’

ইংল্যান্ডের আবহাওয়া যদিও দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য আদর্শ কন্ডিশন কিন্তু বাংলাদেশ আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে ক্যারিশমা দেখিয়েই ইংল্যান্ডে এসেছে। তা ছাড়া প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে বাজেভাবে হেরে মানসিকভাবে কিছু বিধ্বস্ত অবস্থায় আছে প্রোটিয়ারা।

তবে দলটার নাম দক্ষিণ আফ্রিকা বলেই ভয়ের কারণ। তারকায় ভরপুর দল। কাগিসো রাদাবার মতো যেমন দুরন্ত পেসার আছে, আছে ইমরান তাহিরের মতো ক্ষুরধার মস্তিষ্কের লেগ স্পিনার। আর ব্যাট হাতে বাইশগজ রাঙিয়ে দেওয়ার জন্য আছেন কুইন্টন ডি কক, ফাফ ডু প্লেসিস ও জেপি ডুমিনির মতো ‘বিস্ফোরক’ ব্যাটসম্যান।

তবে দক্ষিণ আফ্রিকা যত দুর্দান্ত দলই হোক না কেন জয়ের ব্যাপারে বেশ আত্মবিশ্বাসী মাশরাফিরা। ইংল্যান্ডকে অনুসরণ করেই সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথটা তৈরি করে নিতে চাইবে বাংলাদেশ। কেবল জোফরা আর্চারের কাজটা করতে হবে মুস্তাফিজকে। আর স্পিনে সাকিব-মিরাজ জুটি যদি জ্বলে ওঠেন তাহলে তো কথাই নেই। এই ওভাল তো তামিম ইকবালের হোম গ্রাউন্ড! সৌম্য খেলুক তার নিজের মতো করে স্বাধীনভাবে, সচেতনভাবে। তিন প্রধান ভরসা সাকিব তো আছেনই। মিডল অর্ডারে থাকবেন মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ, মিথুন। টপ অর্ডার ও মিডল অর্ডার মিলে ৪৫ ওভার খেলতে পারলে স্লোগ ওভারে ঝড় তোলার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে ক্ষেপাটে সাব্বির। তাই প্রতিপক্ষ ‘ভয়ঙ্কর’ দক্ষিণ আফ্রিকা হলেও আজ মধুর এক শুরুর প্রতীক্ষায় টাইগাররা। আর বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে জয় পেলে লম্বা টুর্নামেন্টটা বাংলাদেশের কাছে হয়ে যাবে ‘ভ্রমণের শুরুতে পর্যটকের লন্ডন-আইয়ে ৪৪৩ ফুট উঁচু থেকে শহর দেখার মতো’। মুগ্ধতা নিয়ে সফর শুরুর পাশাপাশি এক নজরে পুরো চিত্র কিছু দেখে ফেলা। সেই সঙ্গে পরের লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার দৃঢ় মনোবল ও আত্মবিশ্বাসে নতুন করে বলীয়ান হওয়া।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর