রবিবার, ২ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা
ওআইসি সম্মেলন

রোহিঙ্গাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসুন : প্রধানমন্ত্রী

জাহাঙ্গীর আলম, মক্কা থেকে

রোহিঙ্গাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসুন : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাস্তুচ্যুত মুসলমান জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে ওআইসিভুক্ত (ইসলামী সম্মেলন সংস্থা) দেশগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সম্পদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও মিয়ানমার থেকে  জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলমানকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু মিয়ানমার রাখাইন অঞ্চলে একটি সহায়ক পরিবেশ তৈরির প্রতিশ্রুতি মেনে চলতে ব্যর্থ হওয়ায় রোহিঙ্গাদের সম্মানের সঙ্গে প্রত্যাবর্তন এখনো অনিশ্চিত। গতকাল সৌদি আরবের মক্কার সাফা প্যালেসে ইসলামী দেশগুলোর জোট ওআইসির চতুর্দশ সম্মেলনে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। সম্মেলনে যোগ দিতে শুক্রবার বিকালে জাপান থেকে সৌদি আরবে পৌঁছেন শেখ হাসিনা। ওআইসির ৫৭টি সদস্য রাষ্ট্রের বাদশাহ, রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান এবং প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন এই শীর্ষ সম্মেলনে। শুক্রবার রাতে শুরু হওয়া সম্মেলনে অতিথিদের স্বাগত জানান সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ। শেখ হাসিনা সম্মেলনস্থলে প্রবেশ করলে বাদশাহ তাকে স্বাগত জানান এবং শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। সম্মেলনের শুরুতেই বক্তব্য দেন সৌদি বাদশাহ। সংস্থার মহাসচিবের বক্তব্যের পর রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা বক্তব্য দেন। সম্মেলনে ওআইসির এশিয়া গ্রুপের প্রতিনিধি হিসেবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মিয়ানমারে নিপীড়িত হওয়া এবং তাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন। গত মার্চে আবুধাবিতে ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে রোহিঙ্গাদের আইনগত অধিকার নিশ্চিত করার জন্য এ ইস্যুকে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে নিয়ে যাওয়ার একটি পথনির্দেশনা তৈরি হয়। এ প্রক্রিয়াকে এতদূর নিয়ে আসার জন্য গাম্বিয়াকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা স্বেচ্ছায় তহবিল ও কারিগরি সহায়তা দিয়ে মামলাটি চালু করার জন্য সদস্য রাষ্ট্রগুলোর কাছে আবেদন করছি।’

সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের প্রতি বাংলাদেশের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি ঘোষণার বিষয়টি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা তা মোকাবিলায় ওআইসির সক্রিয়তা প্রত্যাশা করেন। তিনি বলেন, অর্থনীতি ও নিরাপত্তা নিয়ে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ওআইসিকে একটি কৌশল গড়ে তুলতে হবে। যাতে জোটের সদস্য দেশগুলো একে অন্যের জন্য কাজ করতে পারে। এর আগে রিয়াদ সম্মেলনে দেওয়া চারটি প্রস্তাব মক্কা সম্মেলনেও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। সেগুলো হলো, অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ, সন্ত্রাসে অর্থায়ন বন্ধ, মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ভেদাভেদ নিরসন এবং সংলাপের মাধ্যমে দ্বন্দ্ব-সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধান। তিনি বলেন, ‘ইসলামের আবির্ভাব হয়েছিল অন্ধকার জগতের আলোকবর্তিকা হিসেবে। কিন্তু অপব্যাখ্যার কারণে সন্ত্রাসবাদ ও সংঘাতের ভাবধারা হিসেবে ইসলামকে ভুলভাবে তুলে ধরা হচ্ছে।’ তিনি শ্রীলঙ্কায় সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘খ্রিস্টান চার্চ আক্রমণের শিকার পরিবারের প্রতি আমরা সহানুভূতি ও সংহতি জানিয়েছি। এ হামলায় আমার আট বছর বয়সী নাতি শেখ জায়ানও নিহত হয়। ফিলিস্তিন, সিরিয়া ও বিশ্বের অন্যান্য জায়গায় সাহায্য-সহযোগিতাহীন মানুষ যেভাবে হত্যাকান্ডে র শিকার হচ্ছে সেসব অসহায় মানুষের বেদনা ও যন্ত্রণার সঙ্গেও সংহতি প্রকাশ করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। এক্ষেত্রে তিনি ওআইসি যে লক্ষ্য নিয়ে গঠিত হয়েছিল, তা পূরণ না হওয়ার কথাও তুলে ধরেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের ফিলিস্তিনি ভাই-বোনদের ভূমি ও সার্বভৌমত্বের অধিকার ফিরিয়ে আনতে, উম্মাহর মর্যাদা, অধিকার রক্ষা, মুসলিম বিশ্বের জনগণের মধ্যে একাত্মতা ও সহযোগিতা জোরদার করার লক্ষ্যে ওআইসির জন্ম হয়েছিল। কিন্তু সাত দশক পরও ফিলিস্তিনের সমস্যা এখনো বিদ্যমান এবং এ বিষয়ে মুসলিম উম্মাহ বিভক্ত।’ এক্ষেত্রে তিনি মুসলমানদের অমর্যাদা ও দুর্ভোগের অবসানের পথনির্দেশনা তৈরি করতে সৌদি বাদশাহর প্রতি আহ্বান জানান। শেখ হাসিনা আরও বলেন, বর্তমান বিশ্বে রয়েছে অর্থনীতি, বাস্তুতন্ত্র ও নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ। এসব মোকাবিলায় ওআইসিকে একটি বিস্তৃত কৌশল গড়ে তুলতে হবে, যার মধ্যে সদস্য রাষ্ট্রগুলো একে অন্যের জন্য কাজ করতে পারে। তিনি বলেন, পৃথিবীর কৌশলগত সম্পদের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি এবং যুবশক্তির বেশির ভাগই রয়েছে আমাদের হাতে। আমাদের নিজেদের সমস্যা নিজেদেরই সমাধান করার সক্ষমতা থাকা উচিত। দারিদ্র্যকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই অসঙ্গতি মোকাবিলার জন্য যৌথ ইসলামী কর্মকান্ডে র মাধ্যমে ওআইসি-২০২৫ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হবে। এক্ষেত্রে ওআইসির ইনস্টিটিউশনগুলোকে বিশেষ করে ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংকের নীতিমালা ও অনুশীলনগুলো ওআইসির এজেন্ডার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ার ওপর জোর দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশনের (আইওএম) উপ-মহাপরিচালক পদে প্রার্থী বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হকের জন্য ইসলামী দেশগুলোর নেতাদের সমর্থন চান। সৌদি আরব সফরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার ছোট বোন শেখ রেহানা ছাড়াও রয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক, মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান, পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক, প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদিন প্রমুখ। সৌদি আরব সফর শেষে সোমবার ভোরে ফিনল্যান্ড রওনা হওয়ার কথা রয়েছে শেখ হাসিনার। ফিনল্যান্ড সফর শেষে ৮ জুন দেশে ফিরবেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী সৌদি আরবে অবস্থানকালে পবিত্র ওমরাহ পালন এবং মদিনায় হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর রওজা মোবারক জিয়ারত করবেন। ‘ফিউচার অব এশিয়া’ সম্মেলনে যোগ দিতে গত মঙ্গলবার ঢাকা থেকে টোকিও যান শেখ হাসিনা।

সর্বশেষ খবর