রবিবার, ২ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা
চট্টগ্রাম কারাগারে খুন

অভিযোগের তীর যাদের দিকে

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে ১৭ মামলার আসামি অমিত মুহুরীর খুন নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। এ খুনে অভিযুক্ত রিপন নাথ ছাড়াও ওই দিন কারাগারের ৩২ নম্বর ওয়ার্ড এবং সেলে দায়িত্বরতদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ঘটনার কয়েক দিন আগে থেকে অভিযুক্ত রিপন নাথের কয়েকবার ওয়ার্ড পরিবর্তনসহ নানা তথ্য পাওয়া গেছে অনুসন্ধানে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঘটনার তদন্ত-সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা যায়, ঘটনার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে মনে হয়েছে এটি সুপরিকল্পিত হত্যাকা-। কারাগারে বিভিন্ন রেকর্ড এবং বিভিন্ন জনের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, রিপন ছাড়াও ৩২ নম্বর ওয়ার্ড এবং সেলের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের সহায়তায় এ খুনের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ঘটনার কয়েক দিন আগে থেকে খুনের মূল অভিযুক্ত রিপন নাথের বারবার ওয়ার্ড ও সেল সন্দেহজনকভাবে পরিবর্তন করা হয়। আসামি রিপন নাথ চমেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে ফেরত আসার পর তাকে ২৮ এপ্রিল থেকে ১৪ দিন ২ নম্বর ওয়ার্ডে রাখা হয়। এরপর ১১ মে তাকে হঠাৎ আমদানি ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়। একদিন পর ১২ থেকে ২৯ মে পর্যন্ত তাকে ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের ১ ও ২ নম্বর কক্ষে রাখা হয়। ঘটনার দিন বিকালে হঠাৎ করে তাকে অমিত মুহুরী অবস্থান করা ৬ নম্বর সেলে স্থানান্তর করা হয়। সাধারণত কোনো আসামিকে ওয়ার্ড কিংবা সেল পরিবর্তনের আগে তা জেলারকে জানানোর নিয়ম রয়েছে। কিন্তু ঘটনার দিন অমিত মুহুরী খুনের অভিযুক্ত রিপন নাথের সেল পরিবর্তনের বিষয়টি ঊধ্বর্তন কাউকে জানানো হয়নি। ওই দিন ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্বরত ছিলেন কারারক্ষী শাহপরান এবং ইনচার্জ ছিলেন সহকারী প্রধান রক্ষী হুমায়ুন কবির। যে ইট দিয়ে আঘাত করে অমিত মুহুরীকে হত্যা করা হয় সে ইট নিয়েও পাওয়া যায় চাঞ্চল্যকর তথ্য। সাধারণত কারাগারের সেলের তালা বন্ধ করার আগে সিআইডি কারারক্ষী, সিআইডি প্রধান রক্ষী এবং সুবেদার প্রত্যেক ওয়ার্ড ও সেলে নিষিদ্ধ ও ক্ষতিকর কোনো বস্তু রয়েছে কি না তা পরীক্ষা করেন। পরীক্ষার পর কারাগারের রেজিস্টার বইয়ে এ বিষয়ে প্রতিবেদন লেখা হয়। ঘটনার দিন সিআইডি কারারক্ষী হাবিবুল বাশার, সিআইডি রক্ষী লুৎফর কবির এবং সুবেদার সালামত উল্লাহ ৩২ নম্বর সেলের দায়িত্ব পালন করেন। ওই দিন ওয়ার্ড ও সেল তালাবদ্ধ করার আগে অন্যান্য দিনের মতো পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে সেলে ক্ষতিকর ও নিষিদ্ধ কোনো বস্তু নেই বলে কারা রেজিস্টারে উল্লেখ করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে এক কর্মকর্তা বলেন, সন্ধ্যায় সেল তালাবদ্ধ করার আগে তাতে ক্ষতিকর কোনো বস্তু রয়েছে কি না তা পরীক্ষা করার কথা। কারাগারে ইটকে ক্ষতিকারক বস্তু হিসেবে ধরা হয়। সেলে যদি ইট থেকে থাকত তাহলে তালাবদ্ধ করার আগে তা সরিয়ে নেওয়ার কথা। অমিত মুহুরীকে যে ইট দিয়ে আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে তা কোনোভাবেই রাত পর্যন্ত সেলে থাকার কথা নয়। কিন্তু এ ইট কীভাবে ছিল তা তদন্ত করার বিষয়। এ দায়ভার ওই সেলের দায়িত্বরত সিআইডি কারারক্ষী, সিআইডি প্রধান রক্ষী ও সুবেদারের ওপর বর্তায়। এসব বিষয়ে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার কামাল হোসেন ও জেলার নাশির আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তদন্ত দল কারাগারে : কারা অধিদফতর কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি গতকাল চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার পরিদর্শন করে। তারা অমিত মুহুরী হত্যাকান্ডের বিষয়ে কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার, জেলারসহ বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা ও বন্দীদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তদন্ত দলে রয়েছেন অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল আবরার হোসেন, ডিআইডি প্রিজন চট্টগ্রাম এ কে এম ফজলুল হক এবং নোয়াখালী জেল সুপার মনির আহমেদ।

প্রসঙ্গত, বুধবার রাতে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে খুন হন রেলের দরপত্র নিয়ে জোড়া খুনসহ অন্তত ১৭টি মামলার আসামি অমিত মুহুরী। এ ঘটনায় কারাগারের জেলার নাশির আহমেদ বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। মামলায় আসামি করা হয় রিপন নাথকে। মামলাটি তদন্ত করছে চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। নিহত অমিত মুহুরীর বিরুদ্ধে হত্যা, পুলিশের ওপর হামলাসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। ২০১৭ সালে ঘনিষ্ঠ বন্ধু ইমরানুল করিম ইমনকে খুন করে গ্রেফতার হন অমিত। এর পর থেকে অমিত কারাগারে ছিলেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর