সোমবার, ৩ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

দাপুটে জয়ে বিশ্বকাপ শুরু

দাপুটে জয়ে বিশ্বকাপ শুরু

দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানোর পর টাইগারদের উল্লাস -বাংলাদেশ প্রতিদিন

টিউবে লাল-সবুজ, বাসে লাল-সবুজ, ট্রামে লাল-সবুজ! গোটা লন্ডন যেন গতকাল ছিল বাংলাদেশি ক্রিকেট ভক্তদের দখলে! মাঠে মাশরাফিদের এক তরফা সমর্থন। ওভাল স্টেডিয়াম নয়, এ যেন লন্ডনের বুকে ‘এক টুকরো বাংলাদেশ’! টাইগাররা সমর্থকদের আবেগের প্রতিদান দিয়েছেন শক্তিশালী দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২১ রানে হারিয়ে। দাপুটে বিশ্বকাপ মিশন শুরু হলো বাংলাদেশের। টাইগারদের পরের টার্গেট নিউজিল্যান্ড। খেলা এই ‘আবেগী’ ওভালেই।

কাল টসে হারাটাই যেন বাংলাদেশের জন্য ছিল শাপেবর! প্রথমে ব্যাট করতে নেমে সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, সৌম্য সরকার, মোসাদ্দেক হোসেনের সম্মিলিত প্রয়াসে সৃষ্টি হলো দলীয় সর্বোচ্চ রানের নতুন রেকর্ড। ৬ উইকেটে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৩৩০। তারপর বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপকে ৩০৯ রানে আটকে দিয়ে অসাধারণ জয়। ব্যাটে, বলে এবং ফিল্ডিংয়ে জাদুকরী পারফরম্যান্স দেখিছেন সাকিব আল হাসান। গতকাল বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার একটি বিশ্বরেকর্ডও গড়েছেন। ৫০০০ রান এবং ২৫০ উইকেট নিয়ে কিংবদন্তি অলরাউন্ডারদের বিরল এক তালিকায় নিজের নাম লিখিয়েছেন। সাকিব যেন তার জার্সি নম্বরের সঙ্গে মিল রেখে কাল ব্যাট হাতেও খেলেছেন ৭৫ রানের ইনিংস। বল হাতে ১০ ওভারে ৫০ রান দিয়ে নিয়েছেন ১ উইকেট। মাইলফলকে পৌঁছার জন্য তার একটি উইকেটই দরকার ছিল। তবে বোলিং কিংবা ব্যাটিংয়ের চেয়েও যেন সুন্দর ছিল তার ক্যাচটি! সাইফউদ্দিনের বলে কাভারে যেন উড়ে গিয়ে প্রোটিয়া ব্যাটসম্যান ফেলকাওয়ের ক্যাচ তালুবন্দী করেন। মুশফিকুর রহিম ছিলেন বরাবরের মতোই নির্ভরতার প্রতীক। খেলেন ৮০ বলে ৭৮ রানের দারুণ এক ইনিংস। সাকিবের সঙ্গে তার ১৪২ রানের জুটিই বাংলাদেশকে রানের পাহাড়ে নিয়ে যায়। শুরুতে সৌম্য সরকার ও শেষের দিকে মাহমুদুল্লাহর ঝড়ো ব্যাটিং ছিল দেখার মতো। সৌম্য ৩০ বলে করেছেন ৪২ রান, আর মাহমুদুল্লাহ খেলেছেন হার না মানা ৪৬ রানের ইনিংস। মাত্র ৩৩ বলে। ক্রিকেট জুটির খেলা। এ কাজে কাল শতভাগ সফল টাইগাররা। উদ্বোধনী জুটিতে তামিমের সঙ্গে সৌম্যর ৬০ রানের জুটি। মাঝে সাকিব-মুশফিকের ১৪২ এবং শেষে মাহমুদুল্লাহ-মোসাদ্দেকের ঝড়ো ৬৬। এই তিন জুটিতেই রেকর্ড সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। এর আগে টাইগারদের সর্বোচ্চ সংগ্রহ ছিল ৩২৯, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। আর বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ছিল ৩২২, স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে। দুই রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। তবে এই ম্যাচে অনেক ভুল করেছে বাংলাদেশ! যেখানে একটি ক্যাচই সর্বনাশ হয়ে যেতে পারে, সেখানে একে একে চারটি ক্যাচ ফেলেছে ফিল্ডাররা। শুরু করেন মুশফিকুর রহিম। তবে তাতে খুবই একটা ক্ষতি হয়নি। ক্যাচ মিস করেও প্রোটিয়া ওপেনার ডি কককে রান আউটের ফাঁদে ফেলেন। সাকিবের অষ্টম ওভারে তো দুটি ক্যাচ মিস করেছেন সৌম্য সরকার ও মোহাম্মদ মিথুন। ডেভিড মিলার ১৬ রানে এবং ১২ রানে নতুন জীবন পেয়েছেন ডাসেন। একটি ক্যাচ ফেলেছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদও।  ইংল্যান্ডের এই ব্যাটিং স্বর্গেও এশিয়ার তিন দল পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান নিজেদের প্রথম ম্যাচে ১০৫, ১৩৫ ও ২০৪ রানে অলআউট হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ সে পথে হাঁটেনি। বরং উল্টো রেকর্ড গড়েছে। এটাও বড় স্বস্তির। কয়েকদিন আগে কার্ডিফে দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তি পেসার শন পোলক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছিলেন, ‘সাকিব হচ্ছে বাংলাদেশের রক-স্টার’। ভারতের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি ম্যাচে ব্যাটে-বলে একসঙ্গে ব্যর্থ হওয়ার পরও হরভজন সিংয়ের বাজিও ছিল সাকিবের পক্ষে। একান্ত সাক্ষাৎকারে দৃঢ়তার সঙ্গে তিনি বলেছিলেন, ‘সাকিব ভালো করবেই।’ ক্রিকেট যাদের ধ্যান-জ্ঞান তারা কি সাধে সাকিবকে নিয়ে এমন মন্তব্য করেছেন? সেই সাকিবই প্রথম ম্যাচে নায়ক। তবে একটি বিষয় লক্ষণীয়, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলের বিরুদ্ধে দুর্দান্ত এই জয়ের পরও বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের উদযাপনে কোনো উচ্ছ্বাস নেই। টাইগারদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ এমন, যেন এই জয় পাওনাই ছিল! এত কেবল শুরু। মাশরাফিও সে কথাই জানালেন, ‘আমাদের যেতে হবে বহুদূর। এক জয়েই সবকিছু পেয়ে যাইনি।’ তা ছাড়া মাত্র একটি ম্যাচ জয়ে উজ্জীবিত হওয়ার কী আছে, এবার বাংলাদেশ যে বিশ্বকাপ মিশনে নেমেছে শিরোপা স্বপ্নে!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর