সোমবার, ৩ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

দুর্যোগে লণ্ডভণ্ড ঈদযাত্রা

বিমান শিডিউলে বিপর্যয়, ভাঙচুর করল যাত্রীরা, এলোমেলো ট্রেন সূচিও

নিজস্ব প্রতিবেদক

দুর্যোগে লণ্ডভণ্ড ঈদযাত্রা

ট্রেনের জন্য গতকাল ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় থেকেছেন যাত্রীরা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ করতে গতকাল রাজধানী ছেড়ে গেছেন অসংখ্য মানুষ। কিন্তু পথে পথে পোহাতে হয়েছে ভোগান্তি। ঈদ ঘনিয়ে আসায় ও ছুটির দিন হওয়ায় সকালেই বাস, ট্রেন, লঞ্চের উদ্দেশে ঘর ছাড়েন অসংখ্য মানুষ। পথে নেমেই পড়েন বৃষ্টি বিড়ম্বনায়। বৈরী আবহাওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় লঞ্চ চলাচল। গত দুই দিনের মতো ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ে নাকাল হন যাত্রীরা। অনেকে আবার সময় বাঁচাতে বিমানের      টিকিট কেটে পড়েন ১১ ঘণ্টার শিডিউল বিপর্যয়ে। ক্ষোভে বিমান অফিসে ভাঙচুর চালান যাত্রীরা। তবে তুলনামূলক স্বস্তিতে ঢাকা ছাড়তে দেখা গেছে সড়ক পথের যাত্রীদের। ঈদের আগে বেশ কয়েকটি সেতু ও ফ্লাইওভার চালু হওয়ায় ভোগান্তি কমেছে। গাবতলী, মহাখালী ও সায়দাবাদে নির্ধারিত সময়ে বাস ছেড়ে যাওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেন যাত্রীরা। সকাল পেরোতেই ঢাকার আকাশ ছেয়ে যায় কালো মেঘে। পূর্ব থেকে টিকিট কাটা ও যাওয়ার প্রস্তুতি থাকায় পরিজন নিয়ে রাস্তায় নামেন হাজারো মানুষ। কিন্তু ঝুম বৃষ্টিতে বাক্সপেটরা নিয়ে ভিজতে ভিজতে ছুটতে হয় বাস টার্মিনাল, রেল স্টেশন, লঞ্চ টার্মিনাল কিংবা বিমানবন্দরের দিকে। এদিকে কাকভেজা হয়ে সদরঘাটে পৌঁছেও যাত্রা নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েন যাত্রীরা। বৈরী আবহাওয়ার কারণে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বন্ধ হয়ে যায় ৪৩টি রুটের লঞ্চ চলাচল। পরে আবহাওয়া অনুকূলে এলে দুপুর ১২টার দিকে লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক হয়। বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালক আবু জাফর হাওলাদার বলেন, সকাল থেকে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা হয়। এদিকে শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে নাকানি-চুবানি খেতে হচ্ছে রেলযাত্রীদের। ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্টেশনে বসে কাটাতে হচ্ছে। সকাল থেকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ছেড়ে যাওয়া বেশ কয়েকটি ট্রেন ২ থেকে ৪ ঘণ্টার শিডিউল বিপর্যয়ে পড়ে। খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস, রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস প্রায় ২ ঘণ্টা দেরিতে ছেড়ে যায়। এ ছাড়া উত্তরাঞ্চলগামী নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনটি সকাল ৮টায় ছাড়ার কথা থাকলেও প্রায় ৪ ঘণ্টা দেরিতে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ছেড়ে যাবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। নীলসাগর এক্সপ্রেসের যাত্রী সামি সরকার বলেন, সকাল সাড়ে ৭টায় স্টেশনে এসে বসে আছি, কারণ আমার ট্রেনের সময় ছিল ৮টায়। কিন্তু এখন দেখছি প্রায় ৪ ঘণ্টা দেরি। এটা কষ্টদায়ক। এমন পরিস্থিতিতে সকাল সাড়ে ১০টায় কমলাপুর স্টেশন পরিদর্শনে যান মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, কমলাপুর থেকে প্রতিদিন ৫২টি ট্রেন ছেড়ে যায়। যে তিনটি ট্রেনের যাত্রা বিলম্ব হয়েছে সেগুলো দূরপাল্লার ট্রেন। ঈদের আগে এ ট্রেনগুলোকে আর শিডিউলে ফেরানো যাবে না। এবার ঈদে ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রায় এক কোটি ৪৭ লাখ মানুষ ঈদ করতে গ্রামের বাড়ি যাবে বলে নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির ঈদ-পূর্ব বার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিপুলসংখ্যক ঘরমুখী যাত্রীর ৫৫ শতাংশ সড়কপথে ও ২৫ শতাংশ নৌপথে ও বাকি ২০ শতাংশ যাবে রেলপথে। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে জানানো হয়, গন্তব্যস্থল থেকে ছাড়তে দেরি করায় ট্রেনগুলো কমলাপুরে পৌঁছতে দেরি করছে।

তাই ফিরতি ট্রেন হয়ে সেটির কমলাপুর ছাড়তে দেরি হচ্ছে। সময় বাঁচাতে ও যাত্রাপথের ভোগান্তি কমাতে বিমানের টিকিট কেটে আরও বিড়ম্বনায় পড়েন যাত্রীরা। শিডিউল বিপর্যয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষার প্রহর গুণতে হয়। আবহাওয়ার কারণে সকালের দিকের বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের অভ্যন্তরীণ রুটের ফ্লাইট দেরি করে ছাড়ে। তবে বিমানের ফ্লাইট বন্ধ করে দেওয়া হয় বৈরী আবহাওয়া শুরুর আগেই। আবহাওয়া ঠিক হওয়ার পর অন্যান্য এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট স্বাভাবিক হলেও শিডিউল ঠিক করতে পারেনি বাংলাদেশ বিমান। এর মধ্যে বিজি ৬০১ ফ্লাইটটি ঢাকা থেকে সিলেটের উদ্দেশে ভোর সাড়ে ৪টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও কয়েক দফা সময় পরিবর্তনের পর সেটি বিকাল ৩টায় ছাড়ার কথা জানানো হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল এলাকায় ভাঙচুর করেন যাত্রীরা। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়। এ বিষয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জি এম (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে ফ্লাইটের সময় পরিবর্তন হয়েছে। যাত্রীদের নিরাপত্তা সবার আগে। তবে যারা ভাঙচুর করেছে সেটি ঠিক হয়নি। এদিকে নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী জানান, সরকারি ছুটি শুরু হবে আগামীকাল থেকে। এর মাঝেই অনেক কর্মজীবী, ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন জেলা থেকে রাজশাহীতে চলে আসছেন। গতকাল রাজশাহী বাস স্টেশন ও রেল স্টেশনে গিয়ে দেখা যায় ব্যাপক মানুষের ঢল। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ছেড়ে রাজশাহী এসেছেন তারা। দুপুর ১টায় বাস স্টেশনে গিয়ে কথা হয় কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে। বন্ধুর সঙ্গে বনলতা ট্রেনে রাজশাহী আসা মাহবুব আলম সেতু বলেন, অনেক কষ্ট করে ট্রেনের টিকিট কেটেছি। প্রথম থেকেই প্ল্যান ছিল বন্ধুরা মিলে একসঙ্গে বাসায় আসব। তাই কয়েকদিন আগেই ট্রেনের টিকিট কিনি। চারজন আসার কথা থাকলেও এক বন্ধুর কাজ থাকায় সে আসতে পারেনি। তাই তিন বন্ধু মিলেই চলে এলাম। ঢাকার যানজট ছেড়ে এখন রাজশাহীর বাতাস কী যে ভালো লাগছে।

সর্বশেষ খবর