মঙ্গলবার, ৪ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

বাঘের এবার জয়েরই থাবা

সামনে কিউই শিকার

দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে জয়ের শেষ দৃশ্যটি মনোযোগ দিয়ে দেখে থাকলে মাথায় বেশ কিছু প্রশ্ন ঘুরপাক খাওয়ার কথা! এই বিশ্বকাপে সবচেয়ে শক্তিশালী বোলিং লাইনআপের বিরুদ্ধে খেলতে নেমে নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে দলীয় সর্বোচ্চ রানের নতুন রেকর্ড, শিরোপার অন্যতম দাবিদার এক দলের বিরুদ্ধে দুরন্ত জয়ে শুরু, তারপরও টাইগারদের মধ্যে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস নেই কেন? আগে এমন ঘটনা ঘটলে তো বাংলাদেশ দল ম্যাচে শেষে পুরো মাঠ প্রদক্ষিণ করত অর্থাৎ ‘ভিক্টোরি ল্যাপ’ দিয়ে দিত। অবশ্য সব প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে আছে টাইগার ক্যাপ্টেন মাশরাফি বিন মর্তুজার ছোট্ট এক মন্তব্যে, ‘যেতে হবে বহুদূর’! বাংলাদেশ দল এবার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। টাইগাররা খুব ভালো করেই জানে, চ্যাম্পিয়ন হতে হলে সবার বিরুদ্ধে জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে! দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে নিজেদের সামর্থ্যরে কিছুটা বুঝিয়েও দিয়েছেন। দারুণ জয়ের পর ম্যাচ শেষে কোনো রকম সেলিব্রেশন না করে মাশরাফিরা নিজেদের পরিপক্বতারও জানান দিয়েছেন।

দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে বাংলাদেশ যতটা আনন্দিত, তার চেয়েও অনেক বেশি সকর্ত! বেশি খুশি হলে আয়েশি ভাব চলে আসবে এবং ক্রিকেটাররা স্রোতে গা ভাসিয়ে দিতে পারেন। সে কারণেই কিনা অবিস্মরণীয় এই জয়কে স্মরণীয় বলতেও নারাজ মাশরাফি, ‘না, এটা স্মরণীয় নয়। আমাদের বেশ কয়েকটি স্মরণীয় ম্যাচ আছে। তবে আমরা খুব ভালো খেলেছি। এটা আমাদের অন্যতম  সেরা পারফরম্যান্স বলতে পারেন। এই ম্যাচে যেমন খেলেছি, সামনেও এভাবে খেলতে চাই। আমি নিশ্চিত প্রত্যেক দিন এ রকম ম্যাচ হবে না।’ মাশরাফি যদি সম্রাট হয়ে থাকেন, সাকিব নিশ্চয়ই প্রধান সেনাপতি! দলের প্রাণ। দলের সেরা পারফর্মার। এমন বিজয়ের পর সম্রাটের মতো প্রধান সেনাপতির মুখেও সতর্কতার বাণী। বরং আরও কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার জন্য সবাইকে প্রস্তুত থাকতে বলেছেন। প্রথম ম্যাচে জয়ের পর সাকিব বলেন, ‘চেষ্টা থাকবে ধারাবাহিকতা ধরে রাখার। আরও ৮টা ম্যাচ আছে। অনেক কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে। এই ম্যাচের ফল দেখে সবাই আরও সতর্ক হয়ে আমাদের সঙ্গে খেলবে। আমাদেরও সেভাবেই প্রস্তুতি নিতে হবে। পরিকল্পনাগুলো সেভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।’

তবে সতীর্থরা যাতে হতাশ না হন এজন্য দুর্দান্ত এই জয়ের পর তাদের প্রশংসাও করেছেন ক্যাপ্টেন মাশরাফি, ‘আমি দলের পারফরম্যান্সে খুশি। আমরা আসলে এমনই। যখন প্রত্যেকে অবদান রাখি, বেশির ভাগ সময়ই জিতি। আমি গতকালও (ম্যাচের আগের দিন) সবাইকে বলেছি, আমরা সবাই মিলে পারফরম্যান্স করতে পারলে জয় আসবে। একই সঙ্গে আমরা অবশ্যই ভাগ্যবানও ছিলাম।’

দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে কয়েকটি ফিল্ডিং মিস ছাড়া তিন বিভাগেই দুর্দান্ত দাপট দেখিয়েছে। এখানে সাকিবের কথা আলাদা করতে বলতেই হবে। ফিল্ডিংয়ে দুর্দান্ত একটি ক্যাচ নিয়েছেন। বোলিং সবচেয়ে কম রান দিয়েছেন। সেই সঙ্গে একটি উইকেট নিয়ে একটি মাইলফলক (২৫০ উইকেট ও ৫০০০ রান) স্পর্শ করেছেন। ব্যাট হাতেও সাকিব দিলেন দুর্দান্ত। তার জার্সি নম্বরের সঙ্গে মিল রেখে খেলেছেন ৭৫ রানের ইনিংস! এরই সঙ্গে পরিসংখ্যানের খেড়ো খাতায় আরেকটি রেকর্ড যোগ করেছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। টানা চার বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ম্যাচেই হাফ সেঞ্চুরি। রহস্য কি? সাকিব জানালেন, ‘প্রথম ম্যাচে টানা ভালো করার রহস্য কী তা জানি না। তবে অন্যান্য বিশ্বকাপের মতো এবার শেষটা ওরকম করতে চাই না। আরও ভালোভাবে শেষ করতে চাই। চেষ্টা থাকবে ভালো কিছু করার।’

দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচের দিন মাঠে আরেকটি লক্ষণীয় দিক হচ্ছে, ফিল্ডিংয়ের সময় দেখা গেছে সারাক্ষণ যেন আলোচনা করছেন মাশরাফি ও সাকিব। যখন কোনো দলে অধিনায়ক ও সহঅধিনায়ক মিলে যৌথভাবে এক মত হয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেন সে সিদ্ধান্ত ফলপ্রসূ হবে সেটাই স্বাভাবিক। হয়েছেও। আগামীকাল আরেকটি বড় ম্যাচ খেলতে মাঠে নামছে বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড। কিউরা খুবই চেনা প্রতিপক্ষ। ঘরের মাঠে তাদেরকে দুই দুবার হোয়াইটওয়াশ করার অভিজ্ঞতা আছে। যদিও ইংল্যান্ডের কন্ডিশন কিউইদের জন্য আদর্শ। বছর দুয়েক আগে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি এই কিউইদের বিরুদ্ধে এই একই কন্ডিশনে কিন্তু দুর্দান্ত এক জয়ে সেমিফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ। সেই মধুর স্মৃতি মনে রেখেই এবার মাঠে নামছেন মাশরাফিরা। ইংল্যান্ডে আগামীকাল ঈদ হওয়ার কথা! তা নিয়ে ক্রিকেটারদের কোনো বাড়তি আবেগ নেই। তবে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে ঈদ সেলিব্রেশন করতে পারলে মন্দ কি!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর