মঙ্গলবার, ৪ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা
‘আমি সিরাজুল আলম খান-২’

বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ জয় বাংলাই বলেছিলেন জয় পাকিস্তান বলেননি

পীর হাবিবুর রহমান

সিরাজুল আলম খান বলেছেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন ও সশস্ত্র যুদ্ধে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানটি নির্ধারক ভূমিকা পালন করে। ‘জয় বাংলা’ এমন একটি স্লোগান যা বাংলাদেশের সশস্ত্র যুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধা তথা সমগ্র দেশবাসীকে স্বাধীনতার লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ উদ্দীপ্ত করেছিল। এই স্লোগান ছিল সশস্ত্র যুদ্ধকালীন বাঙালির প্রেরণার উৎস। যুদ্ধে সফল অপারেশন শেষে মুক্তিযোদ্ধারা ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে জনগণকে বিজয়ের বার্তা পৌঁছে দিত।

‘আমি সিরাজুল আলম খান’ গ্রন্থ থেকে প্রথম দফা চুম্বক অংশ নিয়ে গতকাল সোমবার বাংলাদেশ প্রতিদিনে রিপোর্ট করলে সারা দেশে পাঠকদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়। রাজনীতির রহস্য পুরুষ বা এক সময় রাজনীতিতে তার অনুসারীদের কাছে আধ্যাত্মিক গুরু বা ‘দাদা’ খ্যাত সিরাজুল আলম খানের জবানবন্দিতে বইটি লিখেছেন শামসুদ্দিন আহমেদ পেয়ারা, যিনি তার সঙ্গে ছাত্রলীগের কর্মী থেকে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন এবং সাংবাদিকতায় নিবেদিত ছিলেন। মাওলা ব্রাদার্স বইটি এ বছর মার্চ মাসে দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশ করে। প্রচ্ছদ করেন শিল্পী ধ্রুব এষ। স্বাধীনতা সংগ্রামী সিরাজুল আলম খান ষাটের দশকের শুরুতে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, নিউক্লিয়াসের অন্যতম সদস্য ও মুক্তিযুদ্ধে মুজিব বাহিনীর চার প্রধানের একজন ছিলেন। পাঠকদের জন্য আজ দ্বিতীয় পর্ব তুলে ধরা হলো।

সিরাজুল আলম খান বলেছেন, ’৬৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর সোমবার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের একটি সভা ছিল। মধুর ক্যান্টিনের সে সভায় ১৭ সেপ্টেম্বর ‘শিক্ষা দিবস’ যৌথভাবে পালনের কর্মসূচি প্রণয়ন নিয়ে আলোচনা চলছিল। সে সভায় আলোচনার এক পর্যায়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ও ছাত্রলীগ নেতা আফতাব আহমদ সবাইকে চমকে দিয়ে প্রথম ‘জয় বাংলা’ স্লোগানটি দিলে অনেকে তার সঙ্গে সমস্বরে কণ্ঠ মিলায়। সেদিন স্লোগানদাতাদের অনেকেই ছিলেন ‘নিউক্লিয়াস’ বা  ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ’র সদস্য। নিউক্লিয়াস তখন হাতে লেখা তিন পাতার একটি পত্রিকার কিছু সংখ্যা প্রকাশ করেছিল, যার নাম ছিল ‘জয় বাংলা’।

১৯৭০ সালের ১৮ জানুয়ারি রবিবার সেদিন পল্টনে আওয়ামী লীগের জনসভায় সিরাজুল আলম খান ‘জয় বাংলা’ স্লোগানটি দিলে সবার ভালো লেগেছিল। সবাই আন্তরিকতার সঙ্গে ও গভীর আবেগে গ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানেরও এ স্লোগানটি বেশ মনে ধরে। এরপর ১৯৭০-এর ৭ জুন ঢাকার রেসকোর্স ময়দান বা আজকের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিশাল জনসভায় বঙ্গবন্ধু সর্বপ্রথম এই স্লোগানটি ব্যবহার করেন।

‘জয় বাংলা’ স্লোগানের বিষয়ে ছাত্রলীগের দু-একজন এবং আওয়ামী লীগের সবারই ঘোর আপত্তি ছিল কেবল বঙ্গবন্ধু ছাড়া। আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটিতেও এ নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ভারতঘেঁষা রাজনীতি করার অপপ্রচারকে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানকে যুক্তি হিসেবে তুলে ধরা হয়। শুধু জাতীয় কমিটির সেই সভাতেই নয়, সাধারণভাবেও বঙ্গবন্ধুর পর তাজউদ্দীন আহমদ ছাড়া নেতাদের প্রায় সবাই ‘জয় বাংলার’ বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তারা এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধুর কাছে অভিযোগ করলে তিনি সরাসরি উত্তর দিয়েছিলেন এভাবে- ‘এ বিষয় নিয়ে তোমাদের মাথা ঘামাবার দরকার নেই।’ বঙ্গবন্ধুর কাছে সমর্থন না পেয়ে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের বিরোধীরা একে ভারতের ‘জয় হিন্দ’ ও সিন্ধুর ‘জিয়ে সিন্ধ’ এর সঙ্গে মিলিয়ে এক ধরনের বিদ্রƒপ করতেন আর ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেওয়া ছাত্রলীগ কর্মীদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করতেন।

১৮ জানুয়ারি রবিবারের জনসভার দিনটি সিরাজুল আলম খানের ভাষায় ‘আমাদের কাছে ছিল স্বাধীনতার লক্ষ্যে পৌঁছানোর এক সন্ধিক্ষণ। সেদিনের কর্মটি সফল করার দায়িত্ব নিউক্লিয়াসের পক্ষ থেকে আমার ওপর অর্পিত হয়েছিল। ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সৈয়দ মাজহারুল হক বাকি ছাত্ররাজনীতির পর বর্তমান বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠান গড়ে ছিলেন। বর্তমান কানাডা প্রবাসী সে সময়ের খ্যাতিমান চিত্রশিল্পী কামাল আহমেদ কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। বয়সে বড় হলেও সখ্যতা ছিল। তাকে সেই বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠানে আনা হলো। সৈয়দ মাজহারুল হক বাকি ও কামাল আহমেদকে আমি চার বাই দশ ফুট মাপের এক টুকরো কাঠের ওপরে ‘ জয় বাংলা’ শব্দটি লিখে দিতে বলি। লেখার পর কাঠটিকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। তখন বেলা ৩টা। ৫টায় আওয়ামী লীগের জনসভা। তখন শহরে আওয়ামী লীগের সক্রিয় সদস্য ১৫-২০ জনের বেশি ছিল না। বাকিরা তখন খ্যাতিমান অ্যাডভোকেট সালাম খান যিনি বঙ্গবন্ধুর মামা, তার নেতৃত্বাধীন ৬ দফার বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা পিডিএম-এ চলে যায়। এতে আওয়ামী লীগের জনসভা ও অন্যান্য সাংগঠনিক কার্যক্রমে নিউক্লিয়াস সদস্যদেরই দায়িত্ব পালন করতে হতো। তখন এর রাজনৈতিক উইং বিএলএফ গঠিত হয়েছে। ঢাকা শহরে তার সদস্য তখন প্রায় সাড়ে তিন হাজার।

সেদিনের জনসভায় লোকসমাগম, নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার দায়িত্ব এএলএফ সদস্যদের ওপর দেওয়া হয়। মূল দায়িত্বে ছিলেন কাজী আরেফ আহমেদ ও মার্শাল মনি বলে পরিচিত মনিরুল ইসলাম। সেদিনও জনসভার শুরুতে কবি আল শফি আহমেদ ঘণ্টাব্যাপী তার গান গেয়ে শোনালেন। আর ‘জয় বাংলা’ স্লোগান লেখা কাঠের খ  দুটির একাংশ আগেই বেশ উঁচু করে নির্মাণ করা মঞ্চের মাঝামাঝি জায়গায় শামিয়ানায় আটকানো হার্ডবোর্ডের ওপর লাগিয়ে দেওয়া হয়। অপরাংশ লাগানো হয় জনসভা শুরুর ১০-১৫ মিনিট আগে। বিকাল ৪টা নাগাদ পল্টন আউটার স্টেডিয়াম জনতার উপস্থিতিতে কানায় কানায় পূর্ণ। জনসভার সভাপতি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শুরুতেই তাজউদ্দীন আহমদ বক্তৃতা করলেন। মঞ্চে আরও ছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম, খন্দকার মোশতাক আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ও গাজী গোলাম মোস্তফা। গাজী গোলাম মোস্তফার ওপর একটি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, মুজিব ভাই যেন আমাকে স্লোগান দিতে বলেন। তাজউদ্দীন আহমদের বক্তব্যের সময় মুজিব ভাই বললেন, ‘সিরাজ, স্লোগান দে’। কথাটি তিনি দুবার বললেন। আমি আবেগ মিশ্রিত ও বলিষ্ঠ কণ্ঠে জনতাকে উদ্দেশ্য করে বললাম, বাংলাদেশের জন্য আজকের এই দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে। প্রিয়-ভাই বোনেরা, আপনারা দেখছেন ওই ওপরে জ্বলজ্বল করছে দুটি শব্দ ‘জয় বাংলা’। আসুন, ৭ কোটি মানুষের পক্ষ হয়ে আমরা সবাইকে জানিয়ে দিই, আমাদের পরিচয় আমরা বাঙালি। আসুন যার কণ্ঠে যত জোর আছে সবটুকু দিয়ে আমরা বলে উঠি ‘জয় বাংলা’। আজ থেকে জয় বাংলাকে আমাদের ভবিষ্যৎ আন্দোলনের স্লোগান হিসেবে ব্যবহার করা হবে। আমি ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিতেই লাখো কণ্ঠের গগনবিদারী ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের ধ্বনি পল্টনকে মুখরিত করে তুলল। সেদিন বঙ্গবন্ধুর বক্তব্যের আগে-পরে লাখো বাঙালির আবেগ আর প্রত্যাশায় ‘জয় বাংলা স্লোগান যেন এক নবজাগরণের ইঙ্গিত দিল।

সেদিন বঙ্গবন্ধু যখন বক্তৃতা করছেন সে সুযোগে মঞ্চে বসা খন্দকার মোশতাক আহমদ আমাকে কাছে ডেকে নিয়ে বললেন, ‘বাইডি, কামডা সাইরে দিসো। তুমি বলেই পারলা, আর কেউ পারতো না!’ পৃথিবীর ইতিহাসে আরেকজন মানুষ রাশিয়া বিপ্লবের স্লোগান হিসেবে দিয়েছিল, ‘জমি রুটি স্বাধীনতা’। জানো সে লোকটা ক্যাডা? লেনিন।’ মুজিব ভাইয়ের বক্তৃতা শেষ আর লাখো মানুষের কণ্ঠে তখন স্লোগান ‘জয় বাংলা’। এ স্লোগান বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে সশস্ত্র যুদ্ধকে ত্বরান্বিত করেছিল। রণাঙ্গনে বুলেটের চেয়েও শক্তিশালী ছিল এ ‘জয় বাংলা’ ধ্বনি। আন্দোলন সংগ্রাম এমনকি সশস্ত্র যুদ্ধের কোনো পর্যায়ে কোনো দিন বাঙালিরা ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ কিংবা ‘বাংলাদেশ চিরজীবী’ হোক বলেনি। সময়ের ব্যবধানে সে ‘জয় বাংলা’ আজ ১৬-১৭ কোটি মানুষের প্রিয় স্লোগান। মুজিব ভাই তার ৭ মার্চের ভাষণ ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়েই শেষ করেছিলেন।’

সিরাজুল আলম খান বলেছেন, আজকাল দু-একজন অতি পাি ত্য জাহির করতে গিয়ে বলার চেষ্টা করছেন, বঙ্গবন্ধু নাকি তার ৭ মার্চের ভাষণে ‘জয় বাংলা’ বলার পর ‘জয় পাকিস্তান’ বলেছিলেন। এরা আসলে পঞ্চম বাহিনীর লোক। এরা পাকিস্তান থাকতে পাকিস্তানিদের দালালি করত। ২৫ মার্চের আগের দিন পর্যন্ত এরা পাকিস্তানিদের হয়েই কাজ করেছে। শেষে না পেরে এরা ‘বাঙালি বন্ধু’ হয়ে ওঠে। 

সিরাজুল আলম খান ’৭০ সালের জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেছেন, সামরিক শাসনের অধীনে নির্বাচনের ঘোষণা এলে মওলানা ভাসানী, তার ন্যাপ, চীনপন্থি ছাত্র ইউনিয়ন ও সিরাজ সিকদারের পূর্ব বাংলা সর্বহারা পার্টি বিরোধিতা করল। আমরা নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ম্যান্ডেট নেওয়ার সুযোগে স্বাধীনতার পক্ষে জনসমর্থনকে কাজে লাগাবার কৌশল গ্রহণ করলাম। সে সময়ে আওয়ামী লীগে জাতীয় প্রাদেশিক পরিষদে মনোনয়ন দেওয়ার যোগ্যতা সম্পন্ন যথেষ্ট প্রার্থী ছিল না। আমি মুজিব ভাইকে বললাম, চলমান আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বেরিয়ে আসা প্রায় দুশজনকে মনোনয়ন দিতে। তিনি তাই করলেন। এতে প্রার্থী বাছাই সংকট থেকে আওয়ামী লীগ কিছুটা মুক্ত হলো এ কথা তিনি আমাকে বলেছিলেন। আমরা এই প্রার্থীদের নির্বাচনী এলাকায় তিন থেকে পাঁচজন করে বিএলএফ কর্মীকে প্রচারণায় নিয়োজিত করলাম। নিউক্লিয়াসের দেড় হাজার সদস্য নির্বাচনী কাজে যুক্ত হলো। এটি দেখার দায়িত্ব ছিল মার্শাল মনি ও তার সহযোগী আ ফ ম মাহবুবুল হকের ওপর। নূরে আলম সিদ্দিকী, আ স ম আবদুর রব, শাজাহান সিরাজসহ ছাত্রনেতারা সবাই প্রার্থীদের পক্ষে দেশব্যাপী জনসভা করলেন। সেই সময় ’৭০ সালের ১২ নভেম্বর ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় ও সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে যা ঘটে গেল তাতে বঙ্গবন্ধু দক্ষিণবঙ্গের প্রচারকাজে ১৫ দিন ধরে ঢাকা থেকে বিচ্ছিন্ন থাকলেন। তার প্রেস সেক্রেটারি আমিনুল হক বাদশাকে দিয়ে ঢাকায় ফিরে আসার জন্য টেলিগ্রাম করালে উত্তর পাওয়া গেল না। আমি আবার টেলিগ্রাম করলে সফর কিছুটা সংক্ষিপ্ত করে তিনি ঢাকায় ফিরলেন।

আমরা কোনো অবস্থাতেই নির্বাচন পেছানোর পক্ষে ছিলাম না। ৬ দফা ও ১১ দফা না হলে একদফা মানে স্বাধীনতা এই আওয়াজ সারা দেশে গ্রামগঞ্জ পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল। প্রাকৃতিক দুর্যোগকে কাজে লাগিয়ে নির্বাচন যাতে পিছিয়ে দেওয়া না হয় সেজন্য একনিষ্ঠভাবে প্রচারণা চালিয়ে যাওয়া হলো। এদিকে ঢাকা ফিরে বঙ্গবন্ধু তৎকালীন শাহবাগ হোটেলে সংবাদ সম্মেলন ডাকলেন। বিকাল ৫টায় সাংবাদিক সম্মেলনে যাওয়ার আগে বেশ কিছুক্ষণ একান্ত কথাবার্তা হলো। নির্বাচন স্থগিত বা পিছিয়ে দেওয়ার পক্ষে কোনো কথা যেন না ওঠে সে বিষয়ে একমত হলেন। দেশীয় সাংবাদিকদের তুলনায় বিদেশি সাংবাদিকরা দ্বিগুণ এলেন। লিখিত বক্তব্য পাঠের পর বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে পাকিস্তান সরকারের বিমাতাসুলভ আচরণ ও বাঙালিদের প্রতি অবহেলার বিষয়টি তুলে ধরলেন। সাংবাদিক সম্মেলনের শেষ মুহূর্তে লন্ডনের গার্ডিয়ান পত্রিকার সাংবাদিক বঙ্গবন্ধুকে প্রশ্ন করে বসলেন, যদি তাই হয় আপনি কি স্বাধীনতা ঘোষণা করবেন? দুই তিন সেকেন্ডের জন্য আমি বিহ্বল হয়ে গেলাম। কী বলবেন নেতা? স্বাধীনতার কথা বলা যাবে না। আবার অস্বীকার করাও যাবে না। আমাকে অবাক করে দিয়ে বঙ্গবন্ধু জবাব দিলেন, নট ইয়েট। অর্থাৎ এখনি নয়। এ কথার অর্থ এখন নয়, স্বাধীনতার প্রয়োজন যখন হবে তখন। একজন পরিপক্ব প্রজ্ঞাবান রাজনীতিবিদ বঙ্গবন্ধুর বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেখে আমি উচ্ছ্বসিত। জাতীয় পরিষদের দুটি ছাড়া সবকটিতে ও প্রাদেশিক পরিষদে নয়টি ছাড়া সবকটি আসন পেল আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের পর জনমত যাতে কোনোভাবেই ভিন্ন দিকে না যায় এবং নির্বাচিত সদস্যরা ভিন্নমত পোষণ করতে না পারেন, সেজন্য বিজয়ী প্রার্থীদের শপথ নেওয়ার কর্মসূচি হিসেবে রেসকোর্স ময়দানে মুজিব ভাইকে জনসভা করার কথা বলতেই তিনি রাজি হয়ে গেলেন। ১৯৭১ সালের ৩ জানুয়ারি লাখ লাখ লোকের উপস্থিতিতে জনসভাতেই শপথ অনুষ্ঠান হলো। এ সভাতেই তিনি ‘জয় বাংলা ও জয় পাকিস্তান’ দুটি স্লোগান দেন। এটি ছিল তার রাজনৈতিক রণকৌশলের অংশ। শত্রুকে বিভ্রান্ত করার নানা উপায়ের একটি। তবে যারা তার ৭ মার্চের বক্তৃতার সঙ্গে এটিকে মিলিয়ে ফেলেন তাদের মতলব ভিন্ন। নির্বাচনে বিরাট সাফল্যের পর একদিন তাকে বললাম, ‘আপনার সঙ্গে আমাদের জরুরি কথা আছে।’ আমার মনে হলো-গুরুত্ব তিনি বুঝলেন। বললেন, ‘আগামীকাল ভোর ৫টায় আসবি।’ আমি ও রাজ্জাক ভোর ৫টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে তার বাসায় গেলাম। .....চলবে   

সর্বশেষ খবর