মঙ্গলবার, ৪ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

নাড়ির টানে ফিরছে মানুষ

শিডিউল বিপর্যয়ের কবলে ঈদযাত্রা

নিজস্ব প্রতিবেদক

নাড়ির টানে ফিরছে মানুষ

ট্রেনের ছাদে উঠেও হাসি মুখ শিশুর

ঈদযাত্রার চতুর্থ দিনে শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে রেলপথে বাড়ি ফেরা মানুষদের। বিশেষ করে ঈদ যাত্রার প্রথমদিন থেকেই উত্তরবঙ্গগামী ট্রেনগুলো দেরিতে ছাড়ছে। গতকালও এ পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। উত্তরাঞ্চলের ট্রেনগুলো দুই থেকে চার ঘণ্টা দেরিতে ছেড়েছে। এ কারণে যাত্রীদের ভিড় বাড়ে কমলাপুর রেলস্টেশনে। ব্যাগ, লাগেজ হাতে নিয়ে সবাই অপেক্ষা করতে থাকে নির্ধারিত ট্রেনের জন্য। অনেকে দীর্ঘ অপেক্ষায় ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে প্লাটফর্মের মেঝেতে। ঈদের আগের শেষ কর্মদিবসে রেলপথের পাশাপাশি যাত্রী চাপ বাড়ে নৌ-পথেও। এদিকে বাড়ি ফেরা মানুষের ঢল নামে সড়ক পথেও। যানজট না থাকায় রাজধানী থেকে স্বস্তিতে বাড়ি ফিরছে মানুষ। গতকাল সকালে উত্তরাঞ্চল, দক্ষিণাঞ্চলসহ চট্টগ্রাম মহাসড়কে একই অবস্থা দেখা গেছে। এবারের ঈদের ছুটিতে সড়কপথে বাড়ি ফেরা মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্নে করতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করায় সড়কপথে অন্যান্য বছরের মতো যানজট তুলনামূলক কম দেখা গেছে। তবে বৃষ্টির কারণে বিড়ম্বনার মধ্যেই রেল স্টেশনে, বাস টার্মিনালে এবং সদরঘাটে পৌঁছে বাড়ি ফেরা মানুষ।  গতকাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২২টি ট্রেনের মধ্যে ৪টি ট্রেন প্রায় ৪ ঘণ্টা দেরিতে ছাড়ে। অন্যগুলোও আধা ঘণ্টা থেকে ৪০ মিনিট দেরি করে। কমলাপুর থেকে মোট ৫৬টি ট্রেন দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে যায়। এর মধ্যে ৪টি স্পেশাল ট্রেন। সুন্দরবন এক্সপ্রেস, রংপুর এক্সপ্রেস, নীলসাগর এক্সপ্রেস ও লালমণি ঈদ স্পেশাল দেরিতে ছাড়ে। গ্রামে ঈদ করতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কমলাপুরে আসেন চিলাহাটিগামী নীলসাগর এক্সপ্রেসের যাত্রী আবদুল কাইয়ুম। তিনি জানালেন, ট্রেনে নিরাপদ বলে প্রতিবার ট্রেনেই যাই। প্রায় চার ঘণ্টা পার হলেও স্টেশনের প্লাটফর্মেই আসেনি ট্রেন। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ঘুরে দেখা যায়, খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস গতকাল সকাল সোয়া ৬টায় কমলাপুর থেকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটি ছেড়েছে সোয়া ৮টায়। চিলাহাটিগামী নীলসাগর এক্সপ্রেস ছাড়ার কথা সকাল ৮টায়। আর লালমনিরহাটগামী লালমণি ঈদ স্পেশাল ছাড়ার কথা সকাল সোয়া ৯টায়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকেও ট্রেন দুটি স্টেশনে এসে পৌঁছায়নি। এ ছাড়া ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ, ঢাকা-লালমনিরহাট, ঢাকা-খুলনা, ঢাকা-ঈশ্বরদী রেলপথের রুটে চারটি স্পেশাল ট্রেন রাখা হয়। এর মধ্যে ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ রুটের ট্রেনটি সময়মতো ছেড়ে যায়। স্টেশন ম্যানেজার আমিনুল হক জানান, উত্তরাঞ্চলে অন্যান্য সময়ের চেয়ে দুই থেকে তিন গুণ যাত্রী হয় ঈদে। সে কারণে বিভিন্ন স্টেশনে যাত্রী ওঠানামা করতে দেরি হচ্ছে। এদিকে, গতকাল সকালে বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে পঞ্চগড়গামী একতা এক্সপ্রেসে ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদে উঠে যাত্রীদের বাড়ি ফিরতে দেখা যায়। স্টেশনে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যরা ছাদে উঠতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। সকাল ১০টা ২৫ মিনিটের দিকে বিমানবন্দর স্টেশনে আসে ট্রেনটি। কমলাপুর থেকে আসার সময়ই যাত্রীতে পরিপূর্ণ ছিল ট্রেনটি। তার আগে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে রংপুরগামী রংপুর এক্সপ্রেসের ছাদ থেকে যাত্রীদের পিটিয়ে নামিয়ে দেয় রেলওয়ে পুলিশ। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকেই যাত্রীতে পূর্ণ হয়ে আসে ট্রেনটি। বিমানবন্দর স্টেশনে থামার সঙ্গে রেলওয়ে পুলিশ ও অন্যান্য সংস্থার নিরাপত্তাকর্মীরা যাত্রীদের পেটাতে শুরু করে। তারপরও যাত্রীদের বড় একটা অংশ ট্রেনের ছাদের ওপর উঠে গেলে মই নিয়ে আসে রেলওয়ে পুলিশ। মই দিয়ে ছাদে উঠে যাত্রীদের পিটিয়ে নামিয়ে দেয় তারা। এদিকে, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে রাজধানী ছেড়ে যাওয়া মানুষের চাপ বেড়েছে নৌ-পথেও। গতকাল সরকারি ছুটির দিন না হলেও সকাল থেকেই সদরঘাটের লালকুঠি ঘাটে চাঁদপুরগামী যাত্রীদের ভিড় ছিল সবচেয়ে বেশি। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় বেড়ে যায় বরিশাল, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী রুটেও।  বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তারা জানান, রবিবার সদরঘাট থেকে ১১৩টি লঞ্চ ছেড়ে যায়। গতকাল  বেলা ১১টা পর্যন্ত ছেড়ে গেছে ৪১টি লঞ্চ। আর সদরঘাট থেকে দেশের ৪৩টি নৌ-রুটে যাত্রীবাহী লঞ্চ রয়েছে দুই শতাধিক। নৌ-পথে নিরাপত্তা নিশ্চিতে ঢাকা মহানগর পুলিশ ছাড়াও, নৌ-পুলিশ, র‌্যাব, কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিস ও বিপুল সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক দায়িত্বে রয়েছে।

বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে যানজট নেই : টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, ঈদ যাত্রায় ঢাকা-টাঙ্গাইল বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে যান চলাচল বৃদ্ধি পেলেও কোনো যানজট নেই। যাত্রীদের ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক রাখতে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে পাঁচটি সেক্টরে বিভাজন হয়ে দায়িত্ব পালন করছে জেলা পুলিশের সহস্রাধিক পুলিশ সদস্য। বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশারফ হোসেন গতকাল জানান, মহাসড়কে অনেকটাই যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া মহাসড়কের কোথাও কোনো সড়ক দুর্ঘটনা ও যানজটের সৃষ্টি হয়নি। এর ফলে যান চলাচল রয়েছে স্বাভাবিক।

দৌলতদিয়া প্রান্তে স্বাচ্ছন্দ্য : রাজবাড়ী প্রতিনিধি জানান, আসন্ন ঈদকে কেন্দ্র করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া প্রান্ত দিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে বাড়ি ফিরছেন মানুষ। গতকাল সকাল থেকে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে লঞ্চ ও ফেরিতে ছিল উপচে পড়া ভিড়। তবে জিরো পয়েন্ট থেকে ছিল না কোনো যানজট। ছিল না অতিরিক্ত ভাড়া বৃদ্ধির অভিযোগও। রাজবাড়ী পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি বলেন, দৌলতদিয়া প্রান্তে প্রতি ঈদে লাখ লাখ যাত্রীর কথা চিন্তা করে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। যাত্রীদের নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে দৌলতদিয়া প্রান্তে ২৫০ জন পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

এ পর্যন্ত এখানে ভাড়া বৃদ্ধিসহ কোনো ছিনতাইয়ের অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি। কোনো অভিযোগ এলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর