মঙ্গলবার, ৪ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

মমতাকে ১০ লাখ চিঠি পাঠাবে বিজেপি

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

মমতাকে ১০ লাখ চিঠি পাঠাবে বিজেপি

‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনি শুনে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ও তার দলের নেতাদের বিরক্ত হওয়া এবং ওই স্লোগানদাতাদের কয়েকজনকে পুলিশ গ্রেফতার করায় বিজেপি অভিনব পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে। বিজেপি তার কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করতে অন্যদিকে মমতাকে চাপে ফেলতে এবার মমতাকে ‘জয় শ্রী রাম’ লেখা ১০ লাখ চিঠি পাঠাবে। এ ব্যাপারে ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং জানান, ‘মমতা ব্যানার্জি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন। আমরা ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করব উনি যেন সুস্থ থাকেন। আমরা জয় শ্রী রাম লেখা ১০ লাখ পোস্টকার্ড পাঠাচ্ছি উনার বাড়িতে। আমরা দেখতে চাই উনি কতজনকে আটক করতে পারেন’। জানা গেছে, ইতিমধ্যে এ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পোস্টকার্ডের বাম দিকে লেখা ‘জয় শ্রী রাম’। ডানদিকে ঠিকানায় ‘মমতা ব্যানার্জি, নবান্ন (১৪তম তলা) শরৎ চ্যাটার্জি রোড, শিবপুর, হাওড়া, পশ্চিমবঙ্গ-৭১১১০২। শুধু কলকাতাই নয়, রাজ্যের প্রতিটি ব্লক থেকেও চিঠি পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কোনটি আবার মমতার বাড়ির ঠিকানা ৩০ বি, হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিট-কলকাতা ৭০০০২৬-এই ঠিকানায় পাঠানো হচ্ছে।

যদিও জয় শ্রী রাম স্লোগান নিয়ে বিতর্ক কম নয়। কারও কারও অভিযোগ বাবরি মসজিদ ভাঙার সময় এই স্লোগানই ব্যবহার করা হয়েছিল। গুজরাটে গোষ্ঠী সংঘর্ষ থেকে আখলাক হত্যা-সব ক্ষেত্রে এই স্লোগান দিয়েই অপরাধ সংঘটিত করা হয়েছিল বলে খবর।  বিজেপির ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগানে যখন তৃণমূল কোণঠাসা ঠিক তখনই তার পাল্টা দিতে ‘জয় হিন্দ, জয় বাংলা বা বন্দে মাতরম’  স্লোগান দিলেন মমতা। তার অভিমত, ‘আমরা জয় বাংলা বলব, জয় হিন্দ বলব।’ এদিকে জয় শ্রী রাম স্লোগান নিয়ে রাজ্য যখন উত্তাল তখন এই স্লোগানকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি)। দলের পূর্বাঞ্চলীয় সম্পাদক শচীন্দ্রনাথ সিনহা জানান, ‘জয় শ্রী রাম বললে যদি মারধর খেতে হয়, পুলিশের হাতে আটক হতে হয় তবে রাজ্য সরকার এই স্লোগান নিষিদ্ধ ঘোষণা করুক।  সেক্ষেত্রে এরকম কোনো গ গোল তৈরি হবে না। তাতে আইনি ব্যবস্থা নিতে সুবিধা হবে।’ অন্যদিকে বিহারের উপ-মুখ্যমন্ত্রী সুশীল মোদি বলেছেন, ‘যেভাবে মমতা ব্যানার্জি জয় শ্রী রাম স্লোগান দেওয়া ব্যক্তিদের তিরস্কার করছেন, পুলিশ দিয়ে তাদের আটক করাচ্ছেন তাতে পরিষ্কার যে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের তিনি প্রশ্রয় দিচ্ছেন এবং লাখ লাখ হিন্দিভাষী মানুষকে ওই রাজ্য থেকে তাড়ানোর ছক কষছেন।’ শনিবার টুইট করে এই মন্তব্য করেন সুশীল মোদি।

বিব্রতকর অবস্থায় তৃণমূল : বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ থেকে শুরু করে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী তথা হিন্দুত্বের পোস্টারবয় যোগী আদিত্যনাথ সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনের প্রচারণায় রাজ্যে এসে দলীয় কর্মীদের জাতীয়তাবাদের উদ্বুদ্ধ করতেই কখনো ‘ভারত মাতা কি জয়’ কখনো আবার আওয়াজ তুলেছিলেন ‘জয় শ্রী রাম’। বিভিন্ন জনসভায় উপস্থিত বিজেপি নেতা-কর্মী-সমর্থকরাও গলা মিলিয়ে ছিলেন। আর এ রাজ্যে বিজেপি অপ্রত্যাশিত সাফল্যের পর সেই স্লোগানই এখন ঘরে ঘরে। পরিচিত বন্ধু-বান্ধবদের মধ্যে এমনকি ফোনেও রামের ধ্বনি দিয়ে একে অপরকে শুভেচ্ছা জানাতে শোনা যাচ্ছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকেও এই ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনি দিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে দেখা গেছে। বাদ যাচ্ছেন না রাজ্যের মন্ত্রী, তৃণমূলের সাংসদ, বিধায়ক এমনকি দলের নেতারাও। রাজ্যর যেখানেই যাচ্ছেন সেখানে বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হচ্ছে তাদের। 

তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষুব্ধ রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। প্রচারণা চলাকালীন গত এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি রাজ্যটির পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনায় মমতার গাড়িবহরকে উদ্দেশ্য করে প্রথম ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান দেওয়া হয়। স্লোগান কানে আসতেই মেজাজ হারান তিনি। গাড়ি দাঁড় করিয়েই মমতার হুঁশিয়ারি ‘কিরে পালাচ্ছিস কেন? আয়, আয়, পালাচ্ছিস কেন? হরিদাস পাল... গালাগালি দিচ্ছে।’ দ্বিতীয়বার গত বৃহস্পতিবার বিকালে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার ভাটপাড়া এলাকায়। ওই জেলারই নৈহাটিতে একটি অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে রাস্তায় তিনটি জায়গায় তাকে উদ্দেশ্য করে ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান দেওয়া হয়। সেখানেও স্লোগান দেওয়া মানুষদের লক্ষ্য করে চামরা গুটিয়ে নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন মমতা। এমনকি সে সময় মমতার সামনে উপস্থিত থাকা রাজ্য পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্রসহ অন্য পুলিশ কর্মকর্তাদের  স্লোগান দেওয়া ব্যক্তিদের নাম-ঠিকানা খুঁজে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। আর এর পরই ভাটপাড়ার এলাকা থেকে ১০ জনকে আটক করে জগদ্দল থানার পুলিশ। যদিও পুলিশের তরফে এই সম্পর্কিত বিষয়ে আটকের কথা অস্বীকার করা হয়। শনিবার উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার কাঁচরাপাড়ায় ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনির মুখে পড়তে হয় রাজ্যের খাদ্য সরবরাহ মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, পরিকল্পনা ও সংসদীয় প্রতিমন্ত্রী তাপস রায়, ফায়ার সার্ভিস মন্ত্রী সুজিত বসু, তৃণমূল নেতা মদন মিত্রকে। এদিন কাঁচরাপাড়ায় একদলীয় নেত্রীর বাড়িতে বৈঠক শেষে ফেরার পথে, বৈঠক চলাকালীন ও শুরু হওয়ার আগে বিজেপি কর্মীরা ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান দিতে থাকেন।

এক সময় পরিস্থিতি যথেষ্ট উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। গাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে বলতে শোনা যায় সাধারণ মানুষ, আপনারা দেখুন কী হচ্ছে? প্রত্যেকটা দলীয় কার্যালয় দখল করেছে। আমি সাধারণ মানুষকে করজোড়ে অনুরোধ করে গেলাম-আপনারাই দেখুন আর কিছু বলব না। এই বিজেপি সন্ত্রাস করছে, লুট করছে।’ একটা সময় যে তৃণমূল এবং দলের নেত্রী মমতা ব্যানার্জি ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলতেন-সেই দলের নেতা-নেত্রীদের এখন রামের নাম শুনে যথেষ্ট বিব্রত বোধ করছেন।

সর্বশেষ খবর