শনিবার, ৮ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

বাঘে সিংহে লড়াই আজ

কার্ডিফ বাংলাদেশের জন্য শুভ, হ্যাটট্রিক জয়ের নেশা

বাঘে সিংহে লড়াই আজ

ওভালে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে হারের ক্ষত বুকে নিয়েই আজ সৌভাগ্যের ভেন্যু কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেনে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলতে নামছে বাংলাদেশ। কিছু হার মানসিকভাবে বিধ্বস্ত করে, আবার কিছু হার নতুন করে উজ্জীবিত করে! টাইগারদের পেছন ফিরে তাকানোর সুযোগ নেই। যদিও কিউইদের বিরুদ্ধে ২ উইকেটের হারটা যেন বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের বুকে কাঁটার মতো  বিঁধছে! কষ্টের সেই কাঁটা আজ উপড়ে ফেলার দিন। স্বাগতিক ইংল্যান্ডকে হারাতে পারলে এর চেয়ে বড় ঘটনা আর কী হতে পারে! কাল সোফিয়া গার্ডেনে ক্যাপ্টেন মাশরাফি বলেন, ‘ইংল্যান্ড অজেয় দল নয়। তাদের হারাতেই পারি আমরা। সেই সামর্থ্য আমাদের আছে। তবে এটা সম্পূর্ণ নতুন ম্যাচ, নতুনভাবে শুরু করতে হবে।’ পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে দেখা যায়, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে শতকরা ৮০ ভাগ ম্যাচেই জিতেছে ইংল্যান্ড। ২০০০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ইংলিশদের বিরুদ্ধে ২০ ম্যাচ খেলে বাংলাদেশের জয় মাত্র ৪টি। তবে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের প্রথম জয়টা যুক্তরাজ্যের মাটিতেই, ২০১০ সালে ব্রিস্টলে। মাশরাফির অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে ইতিহাসে নতুন অধ্যায়ের সংযোজন করেছিল টাইগাররা। এরপর চট্টগ্রামে দুটি ও একটি জয় নিরপেক্ষ ভেন্যু অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেডে। মজার বিষয় হচ্ছে, ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সবশেষ দুই বিশ্বকাপেই জয়ের দারুণ অভিজ্ঞতা আছে। ২০১১ বিশ্বকাপে চট্টগ্রামে ও ২০১৫ সালে অ্যাডিলেডে ক্যারিশমা দেখিয়েছে বাংলাদেশ। টানা দুই বিশ্বকাপে জয়ের পর আজ ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে বাঘেদের হ্যাটট্রিক জয়ের মিশন। ইংলিশ অধিনায়কও ভয় পাচ্ছেন মাশরাফির এই দলকে। গতকাল তিনি বলেন, ‘এই বাংলাদেশ দল যে কোনো দলের জন্যই হুমকি। তারা যে কোনো দলকে হারিয়ে দিতে পারে। যদিও অনেকেই বলছেন, বাংলাদেশ ছোট দল। কিন্তু আমি তা মনে করি না। তারা খুবই ভয়ঙ্কর।’ প্রতিপক্ষ হিসেবে এই ইংল্যান্ড দলটা আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি ভয়ঙ্কর। টপ অর্ডারে যেমন তাদের বেশ কয়েকজন বিশ্বসেরা ব্যাটসম্যান রয়েছেন, তেমনি বোলিংয়েও চমৎকার। আলাদা করে বলতেই হয় পেসার জোফরা আর্চারের কথা। প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ইংল্যান্ডের জয়ের রূপকার ছিলেন বার্বাডোজে জন্ম নেওয়া এই ইংলিশ বোলার। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আবার বেদম প্রহার সহ্য করতে হয়েছে তাকে। ১০ ওভারে তাকে দিতে হয়েছে ৭৯ রান। নটিংহ্যামের এই ম্যাচ থেকেই আত্মবিশ্বাস নিতে পারে বাংলাদেশ। পাকিস্তান যদি তাদের হারাতে পারে, তবে বাংলাদেশ কেন পারবে না? কিন্তু তামিম-সাকিব-মুশফিকদের বিশেষ নজর রাখতে হবে আর্চারের দিকেই। এই পেসারই যে তাদের ‘এক্স-ফ্যাক্টর’! ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনআপের গভীরতা অনেক বেশি। ইনিংসের ওপেন করেন জেসন রয় ও জনি বেয়ারস্ট্রর মতো দুই মারকাটারি তারকা। এরপর তিনে ‘ভয়ঙ্কর’ জো রুট। চারে অধিনায়ক ইয়ন মরগান। পাঁচে বেন স্টোকস ও ছয়ে জোস বাটলার। প্রথমে ব্যাট করলে ইংল্যান্ডকে ৩০০-এর মধ্যে আটকানোই হবে বাংলাদেশের পেসার প্রধান চ্যালেঞ্জ। তবে টাইগারদের ভয় স্লোক ওভারের বোলিং নিয়ে। গতির বোলার না থাকায় রান আটকানো কঠিন হয়ে যায়। কেননা স্লোক ওভারে তো ব্যাটসম্যান ভালো বল খারাপ বল বাচবিচার করেন না। এ সময় স্টাম্পের ওপর থাকা বলগুলোই যেন বেশি মার খায়। তাই গতি ও বুদ্ধিমত্তা দিয়ে বোলিং করতে হয়। সে ক্ষেত্রে মুস্তাফিজ ও রুবেল সেরা! কিন্তু আজ কাটার মাস্টারের সঙ্গে কি দেখা যাবে রুবেলকে? শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে হতাশাজনক ছিল বাংলাদেশের ব্যাটিং। প্রথম আট ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের কোঠায় পৌঁছার পরও টাইগারদের স্কোর ছিল মাত্র ২৪৪। দারুণ শুরুর পরও উইকেট বিলিয়ে দেওয়ায় স্কোর বড় হয়নি। কেবল সাকিব আল হাসানই ছিলেন আলাদা। তিনি প্রথম ম্যাচের মতো এই ম্যাচেও হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন। তাই আজকের ম্যাচেও বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের দিকে তাকিয়ে দেশ। তামিমকেও দেখাতে হবে তার ক্যারিশমা। উজ্জীবিত হওয়ার জন্য তার ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে শেষ ম্যাচটিই যথেষ্ট। যে ম্যাচে বাংলাদেশ হারলেও তার ব্যাট থেকে এসেছিল ১২৮ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস। মাহমুদুল্লাহর জন্য কার্ডিফের শেষ ম্যাচটি আত্মবিশ্বাস দিতে পারে। সে ম্যাচে সাকিবের সঙ্গে তিনিও দারুণ এক সেঞ্চুরি করেছিলেন। সিনিয়রদের পাশাপাশি তরুণদেরও আজ সেরাটা উজাড় করে দিতে হবে। গতকাল কার্ডিফে ঠিকমতো অনুশীলন করতে পারেননি ক্রিকেটাররা। সকাল থেকেই কার্ডিফে অঝরধারায় ঝরেছে বৃষ্টি! ওয়েলসে সাধারণত এমন ঝুমবৃষ্টি নাকি দেখা যায় না! তবে আজ বৃষ্টির সম্ভাবনা খুবই কম। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী স্থানীয় সময় বিকাল ৩টার (বাংলাদেশ সময় রাত ৮টা) দিকে কিছু সময়ের জন্য বৃষ্টি হতে পারে। প্রথম ইনিংস বৃষ্টির কবলে পড়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তাই টসটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। যারা প্রথমে ব্যাটিং করবেন তারা বাড়তি সুবিধা পেতে পারেন। শেষ কথা হচ্ছে, ভাগ্য সহায় থাকলে অনেক সময় বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবিলা করেও জয় পাওয়া সম্ভব! হোক না ইংলিশরা এবারের টপ ফেবারিট। হোক না ইংল্যান্ড স্বাগতিক। টাইগাররা যেদিন জ্বলে ওঠে সেদিন ফেবারিট-স্বাগতিক কোনো কিছুই বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। যে ভেন্যুতে ২০০৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে জয় এসেছে, যেখানে ২০১৭ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ, সেখানেই আজ ইংল্যান্ডকে হারিয়ে নতুন ইতিহাস লিখুক মাশরাফিরা। বাঘেদের মনে যে আজ হ্যাটট্রিক জয়ের নেশা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর