শনিবার, ৮ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

অনুমোদন ছাড়াই এক সিনিয়র সচিব ৮ দিন ধরে দেশের বাইরে

নিজামুল হক বিপুল

অনুমোদন ছাড়াই এক সিনিয়র সচিব ৮ দিন ধরে দেশের বাইরে

সরকারের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ শহিদুল হক প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন ছাড়াই সরকারি কাজ ফেলে রেখে বিদেশ ভ্রমণ করছেন। ৩১ মে থেকে গতকাল পর্যন্ত তিনি আমেরিকা ও সিঙ্গাপুরে রয়েছেন। আজ তার দেশে ফেরার কথা। আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিচার ও সংসদবিষয়ক বিভাগের এই সিনিয়র সচিব একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিতে ২৭ মে ভিয়েনার উদ্দেশে দেশ ছাড়েন। তিন দিনের ওই সম্মেলন শেষ হয়ে গেলেও তিনি দেশে ফিরে আসেননি। এতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ক্ষুব্ধ হয়েছেন। মন্ত্রণালয়-সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানান, ২৭ থেকে ২৯ মে পর্যন্ত অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় ছিল দুর্নীতিবিরোধী জাতিসংঘের মূল্যায়ন ও বাস্তবায়ন গ্রুপের দশম অধিবেশন। ওই অধিবেশনে যোগ দিতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ এবং বিচার ও সংসদবিষয়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব শহিদুল হকের জিও অনুমোদন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাদের তিনজনের ২৫ মে একসঙ্গে ভিয়েনা যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মন্ত্রী ও দুদক চেয়ারম্যান নির্ধারিত তারিখে দেশ ছাড়লেও সচিব ভিয়েনা রওনা হন ২৭ মে। ওইদিনই কনভেনশনে আইনমন্ত্রীর প্রেজেনটেশন ছিল। সেখানে তাকে সাপোর্টের জন্য সচিবের উপস্থিতি জরুরি হলেও তিনি সেদিন উপস্থিত ছিলেন না। এ নিয়ে আইনমন্ত্রী ক্ষুব্ধ হয়েছেন বলেও জানা গেছে। এদিকে ভিয়েনায় অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী দশম মূল্যায়ন সভা শেষে আইনমন্ত্রী ও দুদক চেয়ারম্যান ৩০ মে দেশে ফিরে এলেও বিচার ও সংসদবিষয়ক সচিব শহিদুল হক এখনো দেশে ফেরেননি। বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সচিব ভিয়েনা থেকে আমেরিকা ও সিঙ্গাপুর হয়ে দেশে ফিরবেন আজ। তিনি দেশের বাইরে থাকা তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ উদ্যাপন করে তবেই দেশে ফিরছেন। সূত্র জানান, ৩১ মে থেকে ৭ জুন পর্যন্ত বিচার ও সংসদবিষয়ক সচিব যে দেশের বাইরে থাকবেন তার কোনো নির্বাহী আদেশ নেই। কোনো জিও জারি হয়নি। সরকারের কোনো সচিবকে কোনো কারণে দেশের বাইরে যেতে এবং অবস্থান করতে হলে অবশ্যই প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন প্রয়োজন হয়। কিন্তু এই সিনিয়র সচিব তেমন অনুমোদন না নিয়েই সরকারি কাজকর্ম ফেলে দেশের বাইরে রয়েছেন গত আট দিন। সচিব শহিদুল হক পাঁচ বছর ধরে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১৪ সালের নভেম্বরে তার চাকরির মেয়াদ শেষ হয়। ওই বছরই তার অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেবার তিনি এক বছরের জন্য চুক্তিতে নিয়োগ পান। ২০১৫ সালের নভেম্বরে তার চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে নানাভাবে তদবির করে তিনি আবারও দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ আদায় করে নেন। ২০১৭ সালের নভেম্বরে তার ওই দুই বছরের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার আগেই তিনি তৃতীয় দফায় আরও দুই বছরের জন্য চুক্তিতে নিয়োগ পান। চলতি বছরের ৩১ অক্টোবর তার তৃতীয় দফা চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে। সূত্র জানান, শহিদুল হক বিভিন্নভাবে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তিন দফায় পাঁচ বছর ধরে একই মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব পদে চুক্তিতে কাজ করছেন। এর আগে আর কোনো সচিব বা সিনিয়র সচিব এভাবে দফায় দফায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাননি। সূত্র জানান, দফায় দফায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়ার পর গত পাঁচ বছরে কারণে-অকারণে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের জিও নিয়ে এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠান দেখিয়ে দীর্ঘদিন শুধু বিদেশ ভ্রমণই করেছেন শহিদুল হক। এ নিয়ে তার নিজ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে নানান কানাঘুষা রয়েছে।

সর্বশেষ খবর