রবিবার, ৯ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

কোটি করদাতা তৈরিতে টার্গেট ফ্ল্যাট ও বাড়ির মালিক

রুহুল আমিন রাসেল

কোটি করদাতা তৈরিতে টার্গেট ফ্ল্যাট ও বাড়ির মালিক

আসছে ২০১৯-২০ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে করদাতার সংখ্যা ৪০ লাখ থেকে ১ কোটিতে বাড়ানোর নির্দেশনা দিতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেট তৈরির সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নতুন করদাতা তৈরির ব্যাপক পরিকল্পনা থাকছে বাজেটে। এর মধ্যে অন্যতম হলো সব ফ্ল্যাট ও বাড়ি মালিককে করের আওতায় আনা। নতুন করদাতা খুঁজতে সারা দেশে বিশেষ অভিযানে নামবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ অভিযানে রাজধানীতে ৪০ লাখ নতুন করদাতা তৈরি করতে চায় সরকার।

এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘আমরা কিন্তু অনেক কঠিন কাজে নামছি। ২০ লাখ, ২২ লাখ থেকে প্রথম বছরে করদাতা সংখ্যা আমরা ১ কোটি করতে চাই। এই যে করদাতা বাড়াব, কাকে বাড়াব? যারা কর প্রদানের উপযুক্ত তাদেরই করের আওতায় আনা হবে। আমাদের দেশে ৪ কোটি মানুষ আছে, যারা আয়কর দেওয়ার উপযুক্ত। আওতা বাড়িয়ে এসব মানুষকে যদি করের আওতায় আনতে পারি তাহলে আমাদের ট্যাক্স জিডিপির অনুপাত অনেক বেড়ে যাবে।’ অর্থ মন্ত্রণালয়সূত্র জানান, দেশের ৪ কোটি মানুষ এখন মধ্যবিত্ত। এর মধ্যে মাত্র ৪০ লাখ লোকের টিআইএন রয়েছে। আর রিটার্ন দেয় তাদের অর্ধেক, মাত্র ২০ লাখ। অর্থাৎ দেশের ৯৫ ভাগ মানুষ কর দেয় না। আগামী অর্থবছরেই ১ কোটি মানুষকে করের আওতায় আনা হবে। এজন্য আয়কর মেলা, উপজেলা পর্যায়ে অফিস স্থাপনসহ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের অস্থায়ী নিয়োগ দিয়ে করদাতা খোঁজা হবে।

সূত্র জানান, নতুন জরিপের মাধ্যমে শুধু ঢাকা শহরে ৩০ থেকে ৪০ লাখ নতুন আয়করদাতা খুঁজে বের করা হবে। এর বাইরে বিভাগীয় শহর, জেলা ও উপজেলা থেকে আরও ৬০ লাখ সম্ভাব্য করদাতা সংগ্রহ করা হবে। এজন্য জেলা ছাড়াও স্থাপন করা হবে উপজেলাভিত্তিক কর অফিস। অস্থায়ী ভিত্তিতে লোকবল নিয়োগ দিয়ে আয়করদাতাদের চিহ্নিত করা হবে। জানা গেছে, আয়কর সংগ্রহ বাড়াতে এনবিআর বহুমুখী উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা শহরে বাড়ি ও ফ্ল্যাটের মালিকদের ওপর জরিপ চালানো হবে। একই ধরনের জরিপ হবে বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা শহরগুলোয়। এ ছাড়া জেলা-উপজেলা পর্যায়ে যেসব প্রতিষ্ঠান কর দেওয়ার যোগ্য তাদেরও করের আওতায় আনা হবে। অন্যদিকে বিদ্যমান জনবলকে সর্বোচ্চ কাজে লাগানোর পাশাপাশি রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে অনেক আউটসোর্স করা হবে। এজন্য নিয়োগ দেওয়া হবে প্রায় ১০ হাজার জনবল। অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া এই জনবলের সবাই হবেন বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী। তাদের কাজ হবে আয়কর আদায়যোগ্য মানুষ খুঁজে বের করা। অনেকটা খানা জরিপের মতো তারা বিভিন্ন বাড়ি ও ফ্ল্যাটে গিয়ে পরিবারভিত্তিক সদস্যের আয়ের উপাত্ত সংগ্রহ করবেন। পরে এ উপাত্তগুলো আয়কর অফিসে জমা দেওয়া হবে। এর ওপর ভিত্তি করে এনবিআর সম্ভাব্য করদাতার সন্ধান পাবে এবং তাদের আয়করের আওতায় আনবে। জানা গেছে, দেশের যেসব এলাকায় বিত্তশালী মানুষ বসবাস করেন সেসব এলাকায় প্রথমে জরিপকাজ শুরু করা হবে। ঢাকার ক্ষেত্রে বেছে নেওয়া হবে ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী, উত্তরা, মোহাম্মদপুর, কলাবাগান, লালমাটিয়া, ওয়ারী, সেগুনবাগিচা, পল্টন, ইস্কাটন, বনশ্রী প্রভৃতি এলাকা। একইভাবে চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল, রংপুর অঞ্চলেরও বিভিন্ন এলাকা আয়কর জরিপের আওতায় আসবে। জরিপকারীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে পরিবারের রোজগেরে সদস্যদের একটি প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে ফরম পূরণ করে নিয়ে আসবেন। এ জরিপের ভিত্তিতে আয়কর অফিস সম্ভাব্য আয়করদাতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে এবং তাদের বলা হবে, তারা বার্ষিক আয়করের আওতাভুক্ত হয়েছেন। তারা যেন কর রিটার্ন দাখিল করেন।

সর্বশেষ খবর