সোমবার, ১০ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ নিয়ে ব্যস্ত ২০ দল

শরিকদের কথা বিএনপি সিদ্ধান্ত নেয় ঐক্যফ্রন্টকে নিয়ে, জোটে কোনো সমন্বয় নেই, কার্যক্রমও নেই

মাহমুদ আজহার

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এখন না ঘরকা না ঘাটকা। জোটের নেই কোনো কার্যক্রম। বিগত সংসদ নির্বাচনের পর দুটি নামমাত্র বৈঠক হলেও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। জোটের প্রধান শরিক দল বিএনপি নিজেই সংকটে। নেতৃত্ব নিয়ে দলের ভিতরে-বাইরে টানাপড়েন চলছে। চার এমপি শপথ নেওয়ার পর বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কোনো বৈঠক হয়নি। দলে অস্থিরতা থাকায় জোট বা ফ্রন্টের সঙ্গেও বৈঠক ডাকা হয়নি। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলো। এরই মধ্যে নানা অসঙ্গতির অভিযোগ এনে জোট ছেড়েছে ব্যারিস্টার আন্দালিভ রহমান পার্থর দল বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি)। একইভাবে বিএনপিকে ঐক্যফ্রন্ট ছাড়ার আহ্বান জানিয়েছে জোটের আরেক শরিক দল লেবার পার্টির নেতৃত্বে থাকা ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান। ২৩ মে পর্যন্ত আলটিমেটাম দিলেও এখনো অবশ্য জোট ছাড়েননি ইরান।

এদিকে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ জামায়াতে ইসলামী নেতাদের পাশে বসিয়ে ইফতার এবং আলোচনা সভা করায় নানা গুঞ্জন চলছে।  কেউ কেউ বলছেন, জামায়াতসহ কয়েকটি দল নিয়ে পৃথক জোট করতে পারেন অলি আহমদ। তবে দল ও জোটের অবস্থান নিয়ে খুব শিগগিরই তিনি সংবাদ সম্মেলন করবেন বলে জানা গেছে।  জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘রমজানসহ নানা কারণে গত মাসে জোট বা ফ্রন্টের বৈঠক হয়নি। ঈদ শেষ হলো। আশা করছি, শিগগিরই জোট ও ফ্রন্টের বৈঠক হবে। ওই বৈঠকেই সব ভুল বোঝাবুঝি দূর হবে।’

জানা যায়, ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। জোটের অনেকেই তাকে মানতে নারাজ। এর মধ্যে কয়েক দিন আগে জোটের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন কর্নেল অলি আহমদ। কিন্তু জোটের শরিক ছাড়া তার অন্য কোনো পদবি আছে কি না এ নিয়েও জোটের ভিতরে-বাইরে আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে। 

জানা যায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ড. কামাল  হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর থেকেই ২০ দলীয় জোটে টানাপড়েন শুরু হয়। এরপর গুরুত্বপূর্ণ সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকে। এরপর অভিযোগ ওঠে, বিএনপি ২০ দলীয় জোটের শরিকদের যথাযথ মূল্যায়ন করছে না। বিএনপির কাছে জোটের চেয়ে ঐক্যফ্রন্টের গুরুত্ব বেশি। এসব কারণেই মূলত জোট ছাড়ে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি। এ নিয়ে তারা জোটকে আনুষ্ঠানিক একটি চিঠিও দেয়। এরপর জোটে হৈ-চৈ শুরু হয়। বিএনপির পক্ষ থেকে আন্দালিভ রহমান পার্থর সঙ্গে কয়েক দফা যোগাযোগও করেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। কিন্তু তাতেও পার্থর মন গলানো যায়নি। তবে পার্থ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছেন, নতুন কোনো জোটে যাওয়ার ইচ্ছা তার নেই। এখন তিনি দল গোছানোতেই মনোযোগ দেবেন। 

জোট ছাড়ার কারণ উল্লেখ করে আন্দালিভ রহমান পার্থ  বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হওয়ার পর থেকে ২০ দলীয় জোটের রাজনৈতিক কর্মকা  স্থবির হয়ে পড়ে। জোটের শরিকদের সঙ্গে পরামর্শ ছাড়াই ঐক্যফ্রন্টের বৈঠক ডেকে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের প্রহসনের ও ভোট ডাকাতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর ২০ দলীয়  জোটের সবার সম্মতিক্রমে এই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করা হয়। কিন্তু পরে ঐক্যফ্রন্টের দুজন এবং বিএনপির সম্মতিতে তাদের চারজন সংসদ সদস্য শপথ নেওয়ায় দেশবাসীর মতো আমরাও হতবাক। এসব কারণে আমরা মনে করি, এই শপথের মাধ্যমে বিএনপি এবং ঐক্যফ্রন্ট ৩০ ডিসেম্বরের প্রহসনের নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করার নৈতিক অধিকার হারিয়েছে। এমতাবস্থায় ২০ দলীয় জোটের বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিজেপি এ জোটের সব রাজনৈতিক কর্মকা  থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইববাহিম বীরপ্রতীক বলেন, ‘বিগত সংসদ নির্বাচনের পর জোটের তিনটি বৈঠক হয়েছে। কোনোটাই কার্যকর বৈঠক ছিল না। ’ জানা যায়, বিএনপিতে গুরুত্বহীন হয়ে থাকাসহ নানা লোভে পড়ে ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর ২০ দলের শরিক ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান শেখ শওকত হোসেন নিলু  জোট ছেড়ে চলে যান। তবে তার দলের একাংশের নেতা ফরিদুজ্জামান ফরহাদকে এনপিপির চেয়ারম্যানের স্বীকৃতি দিয়ে  জোটে রাখা হয়। একইভাবে ইসলামী ঐক্যজোটের অন্যতম  নেতা আবদুল লতিফ নেজামীও ২০ দলীয়  জোট থেকে  বেরিয়ে যান। সেখানেও ইসলামী ঐক্যজোটের অন্য একটি গ্রুপ ২০ দলের শরিক হিসেবে রয়েছে। একইভাবে বাংলাদেশ মুসলিম লীগও বিভক্ত হয়েছে। একটি গ্রুপ সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বড় বোন জোবায়দা কাদের চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করে নতুন কমিটি হিসেবে ২০ দলীয় জোটে আছে। ২০ দলীয় জোট  থেকে  বেরিয়ে যায় শেখ আনোয়ারুল হকের ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ভাসানী-ন্যাপ)। এরপর গাইবান্ধার আজহারুল ইসলামের নেতৃত্বে ‘ভাসানী-ন্যাপ’ নামে নতুন দল দাঁড় করিয়ে সেটিকে ২০ দলে রাখা হয়। এ ছাড়া ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানিও ২০ দলীয় জোট ছেড়ে চলে যান এবং একটি গ্রুপকে ২০ দলীয়  জোটের শরিক হিসেবে রাখা হয়েছে। এ ব্যাপারে এলডিপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, ‘জোটকে কার্যকর করতে হলে নাম ও প্যাডসর্বস্ব অনিবন্ধিত দলগুলোকে বাদ দিতে হবে। এরপর যে কয়টিই থাকুক তাদের নিয়ে জোটকে গতিশীল করতে হবে। খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি এখন ঐক্যফ্রন্টকে নিয়ে বেশি এগোচ্ছে। এই মুহূর্তে ২০ দলের কোনো তৎপরতা নেই। ২০ দল নামে মাত্র আছে।

সর্বশেষ খবর