মঙ্গলবার, ১১ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

তিস্তা নিয়ে ধীরে চলা নীতি

২০২১ সালের আগে আশার আলো দেখছে না কেউ, এবার মমতাকে ইস্যু দেখানো সম্ভব নয় মনে করেন বিশেষজ্ঞরা

জুলকার নাইন

তিস্তা নিয়ে ধীরে চলা নীতি

বাংলাদেশ-ভারত অভিন্ন তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি বিষয়ে ধীরে চলার নীতি নিয়েছে ঢাকা ও দিল্লি। দুই দেশের সরকারই আগের মেয়াদ শেষ করে নতুন মেয়াদে ক্ষমতায় এসেছে। আগের মেয়াদেই দুই দেশের অমীমাংসিত ইস্যুগুলোর সমাধানের ক্ষেত্রে চেষ্টার কোনো কমতি ছিল না কোনো পক্ষেরই। কিন্তু তিস্তা চুক্তি আটকে গিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের বিরোধিতায়। দুই দেশের কেন্দ্রে নতুন সরকার এলেও আগের মতোই রয়ে গেছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের অবস্থান। তাই ২০২১ সালে অনুষ্ঠেয় ভারতের বিধানসভা নির্বাচনের আগে তিস্তা চুক্তির আশার আলো জ্বলছে না। এটা মেনে নিয়েই দুই দেশের পক্ষ থেকে ধীরে চলার নীতি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা-দিল্লি কূটনৈতিক সূত্রগুলো।

জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘যে কোনো সময়ের চেয়ে ঢাকা-দিল্লি ভালো সময় পার করছে। ভারতের নতুন সরকারের সঙ্গেও এ সুসম্পর্ক বজায় থাকবে এবং তা আরও শক্তিশালী হবে। আমরা আশা করছি, এই মেয়াদে দুই দেশের মধ্যে ঝুলে থাকা সমস্যাগুলোরও সমাধান হবে।’

ঢাকার কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছেন, তিস্তা ছাড়াও বাণিজ্য খাতের শুল্ক,           অশুল্ক বাধাসহ নয়াদিল্লির সঙ্গে ঢাকার একাধিক অমীমাংসিত ইস্যু রয়েছে। তবে নয়াদিল্লিকে চাপে রাখতে ঢাকা সবসময়ই অন্য বিষয়ের সঙ্গে তিস্তার প্রসঙ্গ রাখবে। জানা যায়, মোদির গত মেয়াদেই চুক্তিটি হওয়ার কথা থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির ক্রমাগত অনাগ্রহের কারণে তা আর হয়ে ওঠেনি। পশ্চিমবঙ্গকে অগ্রাহ্য করে কেন্দ্রীয় সরকার এই চুক্তি করবে না বলেও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন ভারতের আগের মেয়াদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। তবে এবার পরিস্থিতি কিছুটা হলেও ভিন্ন। ভারতে এসেছে নতুন সরকার। সূত্রের খবর, আন্তর্জাতিক বা আঞ্চলিক বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তই যে চূড়ান্ত তা সামনে রেখেই কাজ করতে পারে সরকার। এ ক্ষেত্রে নয়াদিল্লির নতুন সরকারের কাছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার তেমন গুরুত্ব নাও পেতে পারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক দেলোয়ার হোসাইন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে তিস্তা চুক্তি না হওয়ায় বাংলাদেশ দীর্ঘ সময় ধরে তীব্র সমস্যা ভোগ করে আসছে। এর নেতিবাচক প্রভাব দিন দিন বাড়ছেই। তাই জরুরি ভিত্তিতে এ চুক্তি হওয়া প্রয়োজন। কারণ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য এর গুরুত্ব অনেক।’ তিনি বলেন, ‘দেশের অর্থনীতি এখনো কৃষির ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। তিস্তা বাঁধে পানির অভাবে বাংলাদেশের বিশাল পরিমাণ কৃষিজমিতে সেচ ঠিকমতো হচ্ছে না। কারণ তিস্তার পানি ভারতের বিভিন্ন অংশে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। চুক্তি না হওয়ায় বাংলাদেশে পানি প্রবাহের ক্ষেত্রে কোনো নিয়ম মানা হচ্ছে না। বাংলাদেশ সরকার এ ইস্যুটিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। পাশাপাশি এই চুক্তি স্বাক্ষর ও বাস্তবায়নে কূটনৈতিক প্রচেষ্টাও চালিয়ে যেতে হবে।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘মমতাকে অগ্রাহ্য করে তিস্তার পানিচুক্তি খুব কঠিন। প্রায় অসম্ভব। আমার মনে হয় না বিজেপির নতুন সরকার এত মাত্রায় মমতার ওপর চড়াও হবে। দুই বছরের মাথায় বিধানসভা নির্বাচন। সেই নির্বাচনের পরিসংখ্যান কী হবে তার ওপরও বিষয়টি অনেকখানি নির্ভর করবে।’

জানা যায়, তিস্তা চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের আলোচনা অনেক পুরনো। মুক্তিযুদ্ধের পরপরই ১৯৭২ সালে যৌথ নদী কমিশনের দ্বিতীয় সভায় তিস্তার পানি নিয়ে আলোচনা হয়। ’৮৩ সালে অন্তর্বর্তীকালীন একটি চুক্তিও হয়েছিল। চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশের ছিল ৩৬ শতাংশ, ভারত ৩৯ শতাংশ আর ২৫ শতাংশ পানি ছিল নদীর নাব্য বজায় রাখার জন্য। ’৮৫ সালে সেই অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। ’৮৭ সালে মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়ানো হয়েছিল। এরপর আর কোনো চুক্তি হয়নি। ২০১১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি হওয়ার কথা ছিল। সেদিন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির একসঙ্গেই বাংলাদেশ সফরে আসার কথা ছিল। হঠাৎ করেই সফরের আগমুহূর্তে মমতা শুধু তিস্তা চুক্তি করবেন না বলে ঢাকায় আসেননি। অবশ্য সে সময়ই চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছিল। সে অনুসারে তিস্তার পানি প্রবাহের জন্য ২০ শতাংশ রেখে বাকি ৮০ শতাংশ দুই দেশের মধ্য সমান ৪০ শতাংশ করে ভাগ করে দেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর