শুক্রবার, ১৪ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

মাশরাফিদের পরীক্ষা এবার ভিভের মাঠে

টান নদীর কোল ঘেঁষেই টনটনের কাউন্টি ক্রিকেট গ্রাউন্ড। ১৩৭ বছরের পুরনো ক্রিকেট মাঠ। সমারসেট কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাবের হোম ভেন্যু। ১৮৮২ সাল থেকে এখানে ক্রিকেট হয়। কিন্তু অবকাঠামো দেখে মনে যেন একেবারে নতুন। এখানে আসন সংখ্যা মাত্র ৮ হাজার ৫০০। যে শহরে মাত্র ৭০ হাজার লোকের বাস সেখানে  স্টেডিয়ামে ধারণক্ষমতা আর কতইবা হবে!  স্টেডিয়ামের বাউন্ডারিও খুবই ছোট। ছক্কা হাঁকানো খুবই সহজ! এই ছোট্ট মাঠেই ১৭ জুন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে খেলতে নামছে বাংলাদেশ। তবে মাঠ ছোট হলেও ক্রিকেটের রেকর্ডবুকে বিস্তৃত জায়গা দখল করে আছে এই টনটন! এখানে এখনো  কোনো টেস্ট ম্যাচ হয়নি। টি-২০ ম্যাচও হয়েছে মাত্র একটি। সব মিলে আন্তর্জাতিক ওয়ানডে হয়েছে মাত্র ৫টি। তার মধ্যে এই বিশ্বকাপের দুটি। একটি আফগানিস্তান-নিউজিল্যান্ড ম্যাচ, আরেকটি অস্ট্রেলিয়া-পাকিস্তান ম্যাচ। এই টনটনে ক্রিকেটের ইতিহাসের বিরল কিছু  রেকর্ড আছে। সব ধরনের ক্রিকেট মিলে সর্বপ্রথম ব্যক্তিগত ৪০০ রানের ইনিংস দেখা যায় এই মাঠেই। ১৮৯৫ সালের জুলাইয়ে স্বাগতিক সমারসেটের বিরুদ্ধেই ইনিংসটি খেলেছিলেন ল্যাঙ্কাশায়ার কাউন্টি ক্লাবের ক্যাম্পবেল ম্যাকলারেন। এই ইংলিশ ব্যাটসম্যান  খেলেছিলেন ৪২৪ রানের ইনিংস। এই মাঠে দ্বিতীয়বারের মতো চারশোর্ধ্ব রানের ইনিংস খেলেন জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যান গ্রায়েম হিক। ১৯৮৮ সালে তিনি উরসের হয়ে সমারসেটের বিরুদ্ধে খেলেছিলেন অপরাজিত ৪০৫ রানের ইনিংস। সত্যিই বড় অদ্ভুত এক ব্যাপার  যে, ক্রিকেটের ইতিহাসে ব্যক্তিগত যে ১০টি চারশোর্ধ্ব ইনিংস আছে তার দুটিই এই কাউন্টি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে।

এই মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজ কিংবদন্তি স্যার ভিভ রিচার্ডের একটি অনবদ্য রেকর্ড আছে। সমারসেটের হয়ে উরচেস্টারশায়ারের বিরুদ্ধে একদিনে ৩২২ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেছিলেন ক্যারিবীয় কিংবদন্তি। দিনটি ছিল ১৯৮৫ সালের ১ জুন। ২৫৮ বলের ইনিংসটিতে ছিল ৪২টি বাউন্ডারির সঙ্গে ৮টি ছক্কার মার। এ কারণেই অনেকে টনটনের এই কাউন্টি ক্রিকেট গ্রাউন্ডকে বলে থাকে ‘ভিভের মাঠ’। আর এই ভিভের মাঠেই এবার মাশরাফিদের পরীক্ষা।

প্রতিপক্ষও সেই ভিভের দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। যে দলে রয়েছে ক্রিস গেইল, আন্দ্রে রাসেল, শাই হোপ, শিমরণ হিটমায়ারের মতো এক একজন বিস্ফোরক ব্যাটসম্যান। এমনিতেই ছক্কা মারায় ওস্তাদ ক্যারিবীয়রা। আর এমন একটি ছোট মাঠ পেলে তো কথাই নেই।

ব্রিস্টলে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ম্যাচটি বৃষ্টিতে প  হওয়ায় পয়েন্ট হারিয়ে খানিকটা ব্যাকফুটেই চলে  গেছে বাংলাদেশ। তবে ক্রিকেটাররা মোটেও আত্মবিশ্বাস হারাননি। ছোট মাঠ বলেই খানিকটা দুশ্চিন্তা আছে।  তবে এ নিয়ে মোটেও ভাবছেন না  কোচ স্টিভ রোডস। বরং নিজেদের শক্তিমত্তার ওপরই তার ভরসা, ‘পরের ম্যাচে প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ওদের আন্দ্রে রাসেল খুবই ভয়ঙ্কর। তবে এই দলটিকে আমরা আয়ারল্যান্ডে হারিয়েছি।’

তবে মজার বিষয় হচ্ছে, বাউন্ডারি তুলনামূলক ছোট বলে যে ছক্কার বন্যা বইয়ে যায় তা কিন্তু নয়। এই বিশ্বকাপের যে দুটি ম্যাচ এখানে অনুষ্ঠিত হয়েছে তার প্রথমটিতে ছক্কা হয়েছে মাত্র দুটি। একটি হাঁকিয়েছেন আফগানিস্তান, আরেকটি নিউজিল্যান্ড। আর অস্ট্রেলিয়া-পাকিস্তান ম্যাচে ছক্কা সব মিলে ১৩টি। তাই ভয়ের কিছু নেই। প্রতিপক্ষ নয়, বাংলাদেশের ভয় তো এখন বৃষ্টিকে। কারণ গতকাল সকালে বৃষ্টি হয়েছে টনটনে। যদিও আবহাওয়ার পূর্বাভাসে, ১৭ জুন সকালেও হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। কিন্তু ম্যাচ পরিত্যক্ত হওয়ার  কোনো সম্ভাবনা নেই। মাশরাফিরাও নিজেকে  সেভাবেই প্রস্তুত করে রাখছেন। জয়ের জন্য মুখিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ!

সর্বশেষ খবর