শুক্রবার, ১৪ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

বাজেটের একাংশ পড়লেন প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাজেটের একাংশ পড়লেন প্রধানমন্ত্রী

জাতীয় সংসদে গতকাল ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন বক্তৃতার একাংশ পড়ে শোনান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের কোনো প্রধানমন্ত্রীর সংসদে বাজেট ভাষণ পাঠ এটাই প্রথম। এতে গড়া হয়ে গেল সংসদীয় নতুন ইতিহাস। গতকাল একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম ও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের ২০তম এবং দেশের ৪৮তম বাজেট উপস্থাপন করা হয়। বাজেটের প্রথম অংশ উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এটা ছিল অর্থমন্ত্রী হিসেবে তার উত্থাপিত প্রথম বাজেট। বাজেট বক্তৃতায় শেষাংশ পাঠের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদকে জানান, ‘অর্থমন্ত্রী অসুস্থ। চোখে অপারেশন হয়েছে। ১৫ মিনিট পরপর তাকে চোখে ড্রপ নিতে হয়। আমিও অসুস্থ। আমারও চোখে অপারেশন হয়েছে। ঠান্ডা লেগে গলার অবস্থাও ভালো না। কথা বলতে গেলে কাশি আসে। তার পরও আমি চেষ্টা করছি।’ এরপর তিনি বাজেট বক্তৃতা পাঠ শুরু করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কালো সুটকেস হাতে বিকাল পৌনে ৩টায় সংসদের অধিবেশন কক্ষে ঢোকেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অর্থমন্ত্রী বেশ অসুস্থ। তিনি হাসপাতাল থেকে সরাসরি সংসদ ভবনে আসেন। বিকাল ৩টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশন শুরু হয়। অধিবেশন কক্ষ তখন কানায় কানায় পূর্ণ। সরকারি দল আওয়ামী লীগ, সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, বিএনপি ও অন্য সংসদ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সংসদ গ্যালারি থেকে শুরু করে ভিআইপি লাউঞ্জ পর্যন্ত সর্বত্র ছিল উপচে পড়া ভিড়। অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল বিকাল ৩টা ১৩ মিনিটে সম্পূর্ণ ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিজের জীবনের প্রথম বাজেট প্রস্তাব পড়া শুরু করেন। অসুস্থ বলে স্পিকারের অনুমতি নিয়ে বসে বসেই বক্তৃতা দিতে থাকেন। প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় তিনি বলেন, বাজেটে এমন কোনো উপকরণ রাখা হয়নি যাতে দ্রব্যমূল্য বাড়তে পারে। ‘সমৃদ্ধির সোপানে বাংলাদেশ, সময় এখন আমাদের’ এই শিরোনামে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব উত্থাপনকালে অসুস্থ বোধ করলে স্পিকারের কাছে ৫ মিনিট বিরতি নেওয়ার অনুমতি চান। বিরতির পর অর্থমন্ত্রী স্পিকারের অনুমতি নিয়ে বাজেট বক্তৃতার অবশিষ্টাংশ উপস্থাপনের জন্য সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম প্রস্তাব করেন। এ সময় সদস্যরা জোরে জোরে টেবিল চাপড়িয়ে এ প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন জানান। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বাজেট বক্তৃতার বাকি অংশ উপস্থাপনের আহ্বান জানান স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।

বাজেট বক্তৃতার আগে সংসদ ভবনের ক্যাবিনেট কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন করা হয়। প্রতি বছর বাজেট উত্থাপনের আগে রেওয়াজ অনুযায়ী এ বৈঠকটি সংসদ ভবনে হয়। মন্ত্রিপরিষদে অনুমোদন পাওয়ার পর বাজেট বিলে স্বাক্ষর করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। উৎসবমুখর সংসদে বাজেট বক্তৃতা শুনতে আসেন রাষ্ট্রপতি। সংসদে নিজ কক্ষে বসে বাজেট উপস্থাপন প্রত্যক্ষ করেন তিনি। এর আগে রাষ্ট্রপতিকে সংসদ ভবনে স্বাগত জানান সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধান বিচারপতি, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, পিএসসি চেয়ারম্যান, তিন বাহিনীর প্রধান, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকসহ অন্যরা বাজেট বক্তৃতা প্রত্যক্ষ করেন।

কঠোর নিরাপত্তা : বাজেট পেশ উপলক্ষে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় নেওয়া হয়েছিল বাড়তি নিরাপত্তা। বৈধ পাস ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি সংসদ ভবন এলাকায়। এমনকি দর্শক গ্যালারিতে পাস ইস্যুতেও ছিল কড়াকড়ি। র‌্যাব-পুলিশসহ গোয়েন্দা সংস্থার বিপুলসংখ্যক সদস্য পুরো ভবনে নিরাপত্তা ঘেরাটোপ গড়ে তোলেন। বাজেট বক্তৃতার পর আমন্ত্রিত অতিথিরা যাতে নির্বিঘ্নে বের হতে পারেন সেজন্য সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার পিজিয়ন হলের গেটটিও খোলা রাখা হয়েছিল। আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য গাড়ি পার্কিংয়ের আলাদা ব্যবস্থাও করা হয়েছিল।

অর্থ বিল উত্থাপন : বাজেট বক্তৃতা শেষে অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল অর্থ বিল, ২০১৯ সংসদে উত্থাপন করেন। সরকারের আর্থিক প্রস্তাবাবলি কার্যকরণ ও কতিপয় আইন সংশোধনের লক্ষ্যে বিলটি উত্থাপন করা হয়। সংসদের কার্যউপদেষ্টা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিলটি ৩০ জুন পাস হবে। এর আগে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সরকার ও বিরোধী দলীয় সদস্যরা ৪৫ ঘণ্টা আলোচনা করবেন।

সর্বশেষ খবর