রবিবার, ১৬ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

সংস্কার হবে আর্থিক খাত

জবাবদিহি ও সংস্কারে আসবে ব্যাংক, স্বেচ্ছা খেলাপিদের ব্যাংকিং সুবিধা সীমিত হবে

মানিক মুনতাসির

সংস্কার হবে আর্থিক খাত

দেশের ক্ষয়িষ্ণু ব্যাংক, শেয়ারবাজার, বীমাসহ সামগ্রিক আর্থিক খাতে জোরালো সংস্কার আনার ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। আর্থিক খাতের এসব সংস্কারের ঘোষণাকে অর্থনীতিবিদরা এবারের বাজেটের ইতিবাচক দিক হিসেবে অখ্যায়িত করেছেন। তবে এসব সিদ্ধান্ত বা ঘোষণা দ্রুত বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছেন তারা। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আর্থিক খাতের যেসব সংস্কারের কথা বলা হয়েছে। সেগুলোর দ্রুত বাস্তবায়ন করা জরুরি। প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংক খাতে স্থিতিশীলতা ফেরাতে একটি কমিশন গঠন ও ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন, অপেক্ষাকৃত দুর্বল ব্যাংকগুলোকে একীভূত করা, শেয়ারবাজারের জন্য প্রণোদনা প্রদান, গ্রামাঞ্চলের হাটবাজারগুলো অর্থনীতির পাওয়ার হাউস হিসেবে গড়ে তোলা, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া ও ব্যাংক ঋণের সুদের হার এক অঙ্ক বাস্তবায়নে কঠোর অবস্থানে থাকার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

বাজেটের ঘোষণা  অনুযায়ী ব্যাংকগুলোর মূলধন বাড়ানো হবে। এখন থেকে এক হাজার কোটি টাকা পরিশোধিক মূলধনের নিচে কেউ ব্যাংকের অনুমোদন পাবেন না। অপেক্ষাকৃত দুর্বল ব্যাংকগুলোকে একীভূত করা হবে। ব্যাংক খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে স্বেচ্ছা ঋণখেলাপিদের ক্ষেত্রে ব্যাংকিং সুবিধা সীমিত করা হবে। বৃহৎ ঋণগ্রহীতাদের তদারকি করতে ইতিমধ্যে সেন্ট্রাল ডাটাবেজ ফর লার্জ ক্রেডিট (সিডিএলসি) গঠন করা হয়েছে। এর কার্যক্রম আরও শক্তিশালী করা হবে। ক্রেডিট কার্ড ও ভোক্তা ঋণ ছাড়া অন্যান্য খাতে ঋণ ও আমানতের গড় ভারিত সুদ হারের ব্যবধান ৪ শতাংশের মধ্যে রাখার নির্দেশনা ইতিমধ্যে দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে বলা হয়েছে, পুনর্গঠন করে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা হবে পুজিবাজারে। এক্ষেত্রে শিল্প বিনিয়োগের দীর্ঘ মেয়াদি ঋণ সংগ্রহের আদর্শ মাধ্যম হিসেবে পুঁজিবাজারকে গড়ে তোলা হবে। ইতিমধ্যে পুজিবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের জন্য ৮৫৬ কোটি টাকার একটি ঘুর্ণায়মান তহবিল গঠন করা হয়েছে। সে তহবিলের অর্থ ছাড়ের নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। পুজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর জন্য ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত লভ্যাংশ আয় করমুক্ত রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। পুজিবাজারের রুগ্ন কোম্পানিকে অন্য কোনো কোম্পানি আত্মীকরণ করতে চাইলে সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা দেওয়া হবে। প্রয়োজনে দর কষাকষির মাধ্যমে কিছুটা বিনিয়োগ সুবিধা দিয়ে হলেও এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা গেলে পুজিবাজারের গভীরতা বাড়বে এবং স্থিতিশীলতা থাকবে বলে মনে করে সরকার। সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনায়ও কিছু সংস্কার এনে স্বচ্ছতা জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে। এর মধ্যে পেনশনভোগীদের দুর্ভোগ কমাতে পেনশন ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হবে। সবার আগে এ ব্যবস্থাকে ডিজিটালাইজ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থছাড় আগের চেয়ে অনেক সহজ করা হয়েছে। যা প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সময়ক্ষেপনের মতো বাধা দূর করবে। এ ছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ও সঞ্চয়পত্র ব্যবস্থাপনাকেও ডিজিটালাইজ করা হবে। সরকারি কর্মচারীদের গ্রুপ বীমার আওতায় আনার পাশাপাশি সবার জন্য একটি সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করা হবে এ বছরই। এজন্য একটি ইউনিভার্সেল পেনশন অথরিটি গঠনের প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। বাজেট পাসের পর সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে এজন্য একটি কমিটি গঠন করা হবে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া ব্যবসা ও বিনিয়োগ সহজ করার লক্ষ্যে বিনিয়োগ সংক্রান্ত অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সেবাগুলো দ্রুত এবং সহজলভ্য করতে ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করা হয়েছে। এরপর ৬৪ জেলায় ওয়ান স্টপের আদলে বিনিয়োগ সেবা তদারকি করা হবে।  বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ব্যাংকিং কমিশন গঠনের দাবি দীর্ঘদিনের। এখন যেহেতু বাজেটে ঘোষণা এসেছে। তাই এর দ্রুত বাস্তবায়ন দরকার। তবে তার চেয়ে বেশি দরকার বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর