রবিবার, ১৬ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা
কেমন হলো বাজেট

কী আছে ভ্যাট আইনে

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

নতুন ভ্যাট আইনে মোটা দাগে চার ধরনের করহার আরোপের প্রস্তাব করা হলেও এর বাইরে বিশেষ বিশেষ পণ্যে হ্রাসকৃত হার এবং কিছু পণ্যে সুনির্দিষ্ট করারোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। গত ১৩ জুন জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটে বহুল আলোচিত ভ্যাট আইন কার্যকর করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এর ফলে নতুন করবর্ষ অর্থাৎ আসছে ১ জুলাই থেকেই এটি কার্যকর হবে।

অর্থ আইন, ২০১৯-এ ভ্যাট আইনে যে চারটি করহার আরোপের কথা বলা হয়েছে এগুলো হচ্ছেÑ ৫, ৭.৫, ১০ এবং ১৫ শতাংশ। বেশিরভাগ পণ্যে এ চার ধরনের ভ্যাট আরোপ হবে। তবে এর বাইরেও পণ্যের সংবেদনশীলতা বিবেচনা করে ওষুধ ও পেট্রোলিয়ামজাত পণ্যের ক্ষেত্রে ২.৪ ও ২ শতাংশ মূসক অব্যাহত রাখা হয়েছে।

এ ছাড়াও ভূমি উন্নয়ন সংস্থার ক্ষেত্রে মূসক হার হবে ৩ শতাংশ, ফ্ল্যাট বিক্রি বা হস্তান্তরে নিয়োজিত নির্মাণ সংস্থার ক্ষেত্রে ভ্যাট ১ থেকে ১ হাজার ৬০০ বর্গফুটের জন্য ২ শতাংশ, ১ হাজার ৬০১ থেকে তার বেশি সাইজের ক্ষেত্রে সাড়ে চার শতাংশ এবং যে কোনো সাইজের পুনঃ রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে ২ শতাংশ হারে মূসক পরিশোধ করতে হবে। নতুন আইনে বেশকিছু পণ্যে সুনির্দিষ্ট কর আরোপ হয়েছে। এরমধ্যে নিউজপ্রিন্ট প্রতি মেট্রিক টনে ১ হাজার ৬০০ টাকা, যন্ত্রের সাহায্য ব্যতীত সাধারণ ইট প্রতি হাজারে ৪৫০ টাকা, যান্ত্রিক পদ্ধতিতে তৈরি ইট প্রতি হাজারে ৭০০ টাকা, আমদানি বা স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত মেলটেবল স্ক্র্যাপ থেকে প্রস্তুতকৃত এমএস পণ্য প্রতি মেট্রিক টনে ২ হাজার টাকা, বিলেট প্রতি মেট্রিক টনে ২ হাজার টাকা এবং সিম কার্ড সরবরাহকারী প্রতি সিমে ২০০ টাকা কর দিতে হবে।

ভ্যাট আইনে ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের বার্ষিক টার্নওভার ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখা হয়েছে। এর ফলে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক ব্যবসায়ীরা ভ্যাটের চাপ থেকে মুক্ত থাকবেন। এ ছাড়া বার্ষিক টার্নওভার ৫০ লাখ থেকে ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত ৪ শতাংশ হারে কর দেওয়ার সুযোগ পাবেন। এতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাত (এসএমই) সুবিধা পাবে। ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিতে মূসক নিবন্ধন সীমা ৮০ লাখ থেকে ৩ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। নতুন ভ্যাট আইন থেকে ব্যবসায়ীরা নানা সুযোগ-সুবিধা পেলেও মধ্যবিত্তের কেনাকাটায় ও সেবাগ্রহণে ভ্যাট বাড়বে। গৃহস্থালির জন্য প্রয়োজনীয় যেসব পণ্যে ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপ হবে সেগুলো হচ্ছেÑ গুঁড়া দুধ, গুঁড়া মরিচ, ধনিয়া, আদা, হলুদ-এ ধরনের সব গুঁড়া মসলা এবং সরিষার তেল ইত্যাদি। ননএসি হোটেল ও রেস্তোরাঁয় আগে খাওয়ার ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট ছিল, নতুন আইনে এটি বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে। দেশি ব্র্যান্ডের পোশাক কেনার ওপরও ভ্যাট বেড়ে সাড়ে ৭ শতাংশ হয়েছে। ফলে খাওয়া-দাওয়া ছাড়াও পোশাক কেনাকাটায় ভ্যাট বাড়বে। বর্তমানে মানুষের মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়া বা ইন্টানেটের মাধ্যমে কেনাকাটা বেড়েছে। সময় বাঁচানো ও যানজটের হাত থেকে রক্ষা পেতে এখন অনেকেই অনলাইনে কেনাকাটা করছেন। এতেও সাড়ে ৭ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। শিশুদের নিয়ে অ্যামিউজম্যান্ট পার্ক ও থিম পার্কে বেড়াতে গেলেও টিকিটের ওপর সাড়ে ৭ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হবে। এ ছাড়া নির্মাণ সংস্থা ও আসবাবপত্র উৎপাদকের ওপরও সাড়ে ৭ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপ হয়েছে। দেশের চলচ্চিত্র শিল্প সংকটে এবং একের পর এক সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেলেও এই শিল্পটিকে ভ্যাটের আওতায় রাখা হয়েছে। চলচ্চিত্র স্টুডিও, চলচ্চিত্র প্রদর্শক বা প্রেক্ষাগৃহ এবং চলচ্চিত্র পরিবেশক প্রত্যেককেই ১০ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হবে। এ ছাড়া খেলাধুল আয়োজন, লটারির টিকিট বিক্রয়কারী, এমন কি সামাজিক ও খেলাধুলা বিষয়ক ক্লাব বা সংগঠনগুলোকেও ১০ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হবে। একই হারে ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে টেইলার্স বা দর্জির দোকানের ওপরও। এ ছাড়া মোটরগাড়ির গ্যারেজ ও ওয়ার্কশপ, ডকইয়ার্ড, ছাপাখানা, নিলামকারী সংস্থা, যান্ত্রিক লন্ড্রি, মেরামত ও সার্ভিসিং, সিকিউরিটি সার্ভিস, স্বয়ংক্রিয় ও যন্ত্রচালিত করাতকল, পরিবহন ঠিকাদারদেরও ১০ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর