বৃহস্পতিবার, ২০ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা
সংসদে প্রশ্নোত্তরে প্রধানমন্ত্রী

স্বাস্থ্যবীমা চালুর পরিকল্পনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্বাস্থ্যবীমা চালুর পরিকল্পনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারের স্বাস্থ্যবীমা চালুর পরিকল্পনা আছে। এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে টাঙ্গাইলের মধুপুর, ঘাটাইল ও কালিহাতীতে ইতিমধ্যে পরীক্ষামূলক স্বাস্থ্যবীমা কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। গতকাল জাতীয় সংসদে জাতীয় পার্টির সদস্য রুস্তম আলী ফরাজীর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা জানান। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকের শুরুতে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উপস্থাপিত হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার হেলথকেয়ার ফিন্যান্সিং স্ট্র্যাটেজি ২০১২-২০৩২ প্রণয়ন করেছে। প্রণীত স্ট্র্যাটেজির অধীন সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণে প্রাথমিকভাবে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের লক্ষ্যে স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি (এসএসকে) শীর্ষক পাইলট কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। একাধিক প্রশ্নের লিখিত জবাবে তিনি আরও বলেন, ধনী ও গরিবের মধ্যে বৈষম্য হ্রাস এবং প্রান্তিক জনগণের সুরক্ষায় আমরা ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করেছি। আমাদের উন্নয়ন ভাবনা হচ্ছে সবাইকে নিয়ে উন্নয়ন এবং সবার উন্নয়ন। উন্নয়ন ভাবনার এ আদর্শ সামনে রেখে দারিদ্র্য বিমোচন ও ধনী-গরিবের মধ্যে বৈষম্য কমানোর লক্ষ্যে জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্র, ২০১৫ প্রণয়ন করা হয়েছে। ভবিষ্যতে ৩০ লাখ গণশহীদকে চিহ্নিত করতে সরকারের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, একাত্তরের নয় মাসব্যাপী স্বাধীনতাযুদ্ধে সারা দেশে ৩০ লাখ গণশহীদকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। ভবিষ্যতে এ লক্ষ্যে কার্যক্রম চালানোর পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। তিনি জানান, বর্তমান সরকার মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সব বীর মুক্তিযোদ্ধার তথ্য সংগ্রহ করে ডাটাবেজ প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে। সরকারদলীয় সংসদ সদস্য অসীম কুমার উকিলের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী আরও জানান, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রকাশিত তালিকার বাইরে যদি কোনো মুক্তিযোদ্ধা থেকে থাকেন, তা শনাক্ত করে ওই তালিকায় প্রকাশ করা সম্ভব হবে। সংসদ নেতা জানান, ওই তালিকার অংশ হিসেবে বর্তমানে মোট ৫ হাজার ৭৯৫ জন শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম, ঠিকানাসংবলিত পূর্ণাঙ্গ তথ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। এর মধ্যে গেজেটভুক্ত বেসামরিক শহীদ ২ হাজার ৯২২, গেজেটভুক্ত সশস্ত্র বাহিনীর শহীদ ১ হাজার ৬২৮, গেজেটভুক্ত বিজিবি শহীদ ৮৩২ ও গেজেটভুক্ত শহীদ পুলিশ ৪২৪ জন। তিনি জানান, একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় সহযোগীদের হাতে নিহত জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিবিজড়িত গণকবরগুলো সংরক্ষণের বিষয়ে আমাদের সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে। সারা দেশে মুক্তিযুদ্ধকালীন বধ্যভূমি ও গণকবর শনাক্তকরণের লক্ষ্যে ব্যাপক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ৪৪২ কোটি ৪০ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ের গৃহীত একটি প্রকল্পের মাধ্যমে সারা দেশে ২৮১টি বধ্যভূমি সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করা হবে। সরকারদলীয় সংসদ সদস্য বেনজীর আহমেদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা অনুধাবন করেছিলেন যে, গ্রামীণ উন্নয়ন ছাড়া উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা সম্ভব নয়। জাতির পিতার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার লক্ষ্যে, পরিকল্পিত ও সুষম উন্নয়নের মাধ্যমে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত মধ্যম আয়ের বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমরা রূপকল্প-২০২১ ঘোষণা করি। রূপকল্প-২০২১-এর অন্যতম উদ্দেশ্য হলো গ্রামীণ দারিদ্র্য উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে আনা। তিনি বলেন, আমাদের নিবাচনী অঙ্গীকার হলো প্রতিটি গ্রামে আধুনিক শহরের সুবিধা সম্প্রসারণ। এ লক্ষ্যে আমরা গ্রামীণ সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত এক দশক ধরেই আওয়ামী লীগ সরকারের গৃহীত কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ফলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নে বেশ সফলতা অর্জন করেছে। গ্রামীণ জনগণের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে এবং আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়ন, শিক্ষার হার ও গড় আয়ু বৃদ্ধি এবং দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশ এখন সারা বিশ্বে এক অনন্য উদাহরণ। দেশের নগর উন্নয়নের পাশাপাশি গ্রামীণ সমাজের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার মাধ্যমে প্রতিটি গ্রামে নগর সুবিধা সম্প্রসারণের মাধ্যমে সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত করতে আমাদের সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। সরকারদলীয় সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দক্ষতা উন্নয়নে নির্বাচনী ইশতেহার ২০১৮, পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২০-২১ ও টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের আলোকে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার দক্ষ, সেবামুখী ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসন গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। জনপ্রশাসনকে আধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর করার লক্ষ্যে আমরা ই-নথি ব্যবস্থার প্রবর্তন করেছি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাধ্যমে জনপ্রশাসনে বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাকে ই-নথিসংক্রান্ত প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। এ ছাড়া গণমুখী প্রশাসনব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমরা জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল প্রণয়ন করেছি।

সর্বশেষ খবর