শুল্কমুক্ত বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধায় আমদানি করা কাগজ খোলাবাজারে বিক্রি হওয়ায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা। তারা বলেছেন, কিছু প্রতিষ্ঠান সরকারি নীতিমালা লঙ্ঘন করে নির্বিচারে কাগজ আমদানি করছে। এতে বন্ড সুবিধার ৩০ শতাংশ কাগজ খোলাবাজারে বিক্রি হচ্ছে। ফলে প্রতি বছর ২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। এ ছাড়া এতে অসুস্থ প্রতিযোগিতার শিকার হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তারা দেশীয় কাগজশিল্পের সুরক্ষা ও বিকাশ নিশ্চিত এবং বন্ড সুবিধার অপব্যবহার বন্ধে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ চান।
গতকাল রাজধানীর পল্টন টাওয়ারে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) কার্যালয়ে আয়োজিত ছয়টি সংগঠনের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া লিখিত বক্তব্যে এ দাবি উঠে এসেছে। এতে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পেপার ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. শফিকুল ইসলাম ভরসা, বাংলাদেশ মুদ্রণশিল্প সমিতির চেয়ারম্যান শহীদ সেরনিয়াবাত, বাংলাদেশ পেপার মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফজলুর রহমান পর্বত, বাংলাদেশ পাঠ্যপুস্তক মুদ্রক ও বিপণন সমিতির সভাপতি তোফায়েল খান, চট্টগ্রাম কাগজ ও সেলোফিন ব্যবসায়ী গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ বেলাল এবং মেট্রোপলিটান প্রেস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন খান উজ্জ্বল।
ওই সংগঠনগুলোর পক্ষে লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশ মুদ্রণশিল্প সমিতির চেয়ারম্যান শহীদ সেরনিয়াবাত বলেন, ‘আমরা একটি বিষয় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে চাই, বন্ড সুবিধার আওতায় আমদানির ক্ষেত্রে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আমদানি হওয়া কাগজপণ্য খোলাবাজারে বিক্রি হচ্ছে। ফলে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। এ খাতের ব্যবসায়ীরা অসুস্থ প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছেন। বন্ড সুবিধায় আমদানি হওয়া কাগজপণ্য ২০ থেকে ৩০ শতাংশ মুনাফা ধরে বাজারে বিক্রি হচ্ছে। এতে অবৈধ ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছেন। সরকার বড় অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে। প্রকৃত ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।তিনি বলেন, রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পের চাহিদার ভিত্তিতে শুধু ৩০০ গ্রাম ও তদূর্ধ্ব গ্রামের কাগজ ও বোর্ড বন্ড সুবিধায় আমদানি করার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিককালে বন্ড সুবিধা ভোগকারী কিছু প্রতিষ্ঠান সরকারি এ নীতিমালাও লঙ্ঘন করে নির্বিচারে বিভিন্ন গ্রামের কাগজ ও বোর্ড আমদানি করছে। বন্ড সুবিধার আওতায় শূন্য শুল্কে আমদানি করা ৩০০ গ্রামের চেয়ে কম ওজনের এসব কাগজ ও বোর্ড (যেমন- ডুপ্লেক্স বোর্ড, ফোল্ডিং বক্স বোর্ড ইত্যাদি) খোলাবাজারে বিক্রয় হচ্ছে। শহীদ সেরনিয়াবাত বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত উল্লেখ করে বলেন, বিগত ফেব্রুয়ারি ও মার্চে ঢাকা কাস্টম বন্ড ওয়্যারহাউসের আটক করা মোট পণ্যের প্রায় ৭০ শতাংশ ডুপ্লেক্স বোর্ড, আর্ট কার্ড, সেলফ কপি পেপার, মিডিয়াম পেপার, লাইনার পেপার, পেপার বোর্ড ইত্যাদি। পরিসংখ্যান থেকে এটা সুস্পষ্ট যে- বন্ড সুবিধায় আমদানি করা বিভিন্ন ধরনের পেপার ও বোর্ড আমদানি খাতে সরকার প্রতি বছর প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হতে বঞ্চিত হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ পেপার ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. শফিকুল ইসলাম ভরসা বলেন, ‘বন্ডের কাগজের চোরাচালানি ও চোরাকারবারির সঙ্গে জড়িতদের দায়দায়িত্ব আমরা নেব না। আমরা দেশীয় বিকাশমান কাগজশিল্পের সুরক্ষা চাই। তারা হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে দেশে কাগজের শিল্প গড়ে তুলেছেন। পাশাপাশি আমরা বন্ডের কাগজ আমদানি ও ব্যবহারের ওপর সরকারের কঠোর নজর দেখতে চাই।’ বন্ডের কাগজ কীভাবে বন্দর থেকে খালাস হয়ে খোলা বাজারে যাচ্ছে, তা মনিটরিংয়ের দায়িত্ব কাস্টমসের। তার মতে, প্রতি বছর পাঁচ লাখ টন কাগজ আমদানি হয়, যা মোট চাহিদার ১০ শতাংশ। আরেক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ পাঠ্যপুস্তক মুদ্রক ও বিপণন সমিতির সভাপতি তোফায়েল খান বলেন, ‘বন্ডের অবৈধ কাগজ ছাপাখানায় যাক এটা আমরা চাই না। আমরা বন্ডের অপব্যবহার বন্ধ চাই। খোলাবাজারে কাগজ বিক্রি বন্ধ করে ব্যবসায় ভারসাম্যপূর্ণ পরিবেশ দেখতে চাই।’