মঙ্গলবার, ২৫ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় কালভার্ট ভেঙে ট্রেনের বগি খাদে

নিহত ৪, আহত ১৫০, তদন্ত কমিটি

সৈয়দ বয়তুল আলী, মৌলভীবাজার

নিহত ৪, আহত ১৫০, তদন্ত কমিটি

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় লাইনচ্যুত ট্রেনের বগি -এএফপি

সিলেট-ঢাকা রেলপথের কুলাউড়ার বরমচালের ট্রেন দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন চারজন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১৫০ জন। এ ঘটনায় পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে উদ্ধার  অভিযান অব্যাহত রয়েছে। নিহত চারজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। তারা হলেন মনোয়ারা পারভীন (৪৮), ফাহমিদা আক্তার (২০), সানজিদা আক্তার (২২) ও কাওছার আহমেদ। মনোয়ারা পারভীন মৌলভীবাজারের কুলাউড়া পৌরসভার টিটিডিসি এলাকার বাসিন্দা আবদুুল বারীর স্ত্রী। তিনি রবিবার রাতে সিলেটে মেয়ের বাসা থেকে উপবনযোগে কুলাউড়ায় নিজ বাসায় ফিরছিলেন। এ সময় তার মেয়ে ও বোনের মেয়ে সঙ্গে ছিলেন। দুর্ঘটনায় ট্রেনের জানালার কাচ ভেঙে তার মাথা, মুখ ও বুকে আঘাতপ্রাপ্ত হন। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। তবে তার সঙ্গে থাকা মেয়ে ও বোনের মেয়ে সামান্য আহত হন।

নিহত ফাহমিদা আক্তার সিলেটের মোগলাবাজার থানার আবদুল্লাহপুর এলাকার আবদুল বারীর মেয়ে। সানজিদা আক্তার বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলার আতজুরি ভানদরখোলা গ্রামের আকরাম মোল্লার মেয়ে। এ দুজন সিলেট নার্সিং কলেজের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী বলে জানান কলেজের অধ্যক্ষ ফয়সল আহমদ চৌধুরী। ফাহমিদার ভাই আবদুুল হামিদ কুলাউড়া হাসপাতালে বোনের লাশ শনাক্ত করেন। হামিদ জানান, নার্সিং ট্রেনিংয়ের জন্য সিলেট থেকে উপবনযোগে একটি দলের সঙ্গে ঢাকা যাচ্ছিলেন ফাহমিদা। আর নিহত কাওছার আহমেদের স্বজনরা হবিগঞ্জ থেকে তার লাশ নিতে কুলাউড়া সরকারি হাসপাতালে এসেছেন বলে জানা গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত রবিবার রাত ১১টায় বরমচাল এলাকায় সিলেট-ঢাকা রেলপথে বড়ছড়া ব্রিজে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ঢাকাগামী আন্তনগর উপবন ট্রেন। এ ঘটনায় ট্রেনের একটি বগি ছিটকে খাদে পড়ে যায়। আর অন্য পাঁচটি বগি লাইনচ্যুত হয়। বিকট শব্দে আশপাশ এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। পরে মাইকিং করে উদ্ধারকাজে যোগ দেওয়ার কথা বললে স্থানীয় এলাকার নারী-পুরুষ ছুটে যান ঘটনাস্থলে। এদিকে ৯৯৯ নম্বরে কল পেয়ে ছুটে আসে কুলাউড়া থানা পুলিশ। কুলাউড়া থানার ওসি ইয়ারদৌস হাসানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয়দের সঙ্গে উদ্ধারকাজে শামিল হয়। একে একে ছুটে আসে ফায়ার সার্ভিসের ১১টি ইউনিট, সঙ্গে যুক্ত হন র‌্যাব, বিজিবি ও স্কাউট টিমের শতাধিক সদস্য। ঘটনার পর থেকেই সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।

এদিকে হতাহতদের উদ্ধার করে দ্রুত অ্যাম্বুলেন্সযোগে কুলাউড়া সরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চারজন নিহতের কথা নিশ্চিত করেছে। আর ৬৪ জন ট্রেনযাত্রী কুলাউড়া হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। হাসপাতালের ডাক্তার নূরুল হক জানান, আহতদের সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। স্থানীয়দের সহযোগিতায় উদ্ধারকাজে ফায়ার সার্ভিসের ১১টি ইউনিটসহ পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবির সদস্যরা অংশ নেন। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। দুর্ঘটনার ব্যাপারে স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেছেন, একে তো সেতুটি অনেক আগে থেকেই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল, তার ওপর ট্রেনটির গতিও ছিল বেশ। এ ছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সরাইলের শাহবাজপুরে বেইলি ব্রিজ ভেঙে যাওয়ায় ঢাকা-সিলেট সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এ কারণে রাতে ট্রেনে যাত্রীসংখ্যা অন্য সময়ের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ ছিল। অন্য সময় ট্রেনটি ১৪টি বগি নিয়ে যাতায়াত করলেও এদিন ১৭টি বগি ছিল। এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত একটি বগি উদ্ধার করা হয়। বাকিগুলো উদ্ধারের কাজ চলছিল।

সর্বশেষ খবর