বৃহস্পতিবার, ২৭ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা
সংসদে প্রধানমন্ত্রী

রোহিঙ্গাদের কারণে নিরাপত্তা শঙ্কা আছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মিয়ানমারের ১১ লক্ষাধিক নাগরিকের জন্য অনির্দিষ্টকাল ধরে অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থানের সংস্থান করা আমাদের পক্ষে একটি দুরূহ ব্যাপার। মৌলিক অধিকার বঞ্চিত এসব বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা অধিবাসী স্বাভাবিকভাবেই অসন্তুষ্টিতে ভুগছে। তাদের রয়েছে অনেক অভাব-অভিযোগ। এদেরকে অতি দ্রুত ফেরত পাঠাতে না পারলে আমাদের নিরাপত্তা ও সুস্থিতি ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বাজেট অধিবেশনে গতকালের বৈঠকে নূর মোহাম্মদের (কিশোরগঞ্জ-২) লিখিত প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বসহ প্রশ্নোত্তর পর্ব টেবিলে উত্থাপিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে শুরু থেকেই একটি স্থায়ী সমাধানের জন্য আমরা কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে ‘এগ্রিমেন্ট অন রিটার্ন অব ডিসপ্লেসড পার্সনস ফরম রাখাইন স্টেট’ শীর্ষক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এ লক্ষ্যে দুই দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে যৌথ ওয়াকিং গ্রুপ গঠন করে তার টার্ম অব রেফারেন্স নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া চলতি বছর দুই দেশের মধ্যে ‘ফিজিক্যাল এগ্রিমেন্ট অন রিটার্ন’ স্বাক্ষরিত হয়েছে। চুক্তির বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী আশ্রিত জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনে সহযোগিতার জন্য জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার সঙ্গে চলতি বছর দুটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। সংসদে তিনি জাতিসংঘের ৭২তম অধিবেশনে গৃহীত বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর পাঁচ দফা প্রস্তাবনাসমূহ তুলে ধরেন। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারের এসব নাগরিক এখানে স্বেচ্ছায় আসেননি। সে দেশের সেনাবাহিনী তাদের জোর করে বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদ করেছে। নির্মম নির্যাতনের শিকার এসব মানুষের খাদ্য, বাসস্থান ও স্বাস্থ্যসেবাসহ মৌলিক মানবিক সহায়তা অত্যন্ত জরুরি ছিল। এ জন্য আমরা তাদের সাময়িকভাবে আশ্রয় দিয়েছি। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও স্থানীয় এনজিওর সঙ্গে সমন্বয় করে এই বিপুল সংখ্যক নাগরিকদের আমরা আশ্রয় ও মানবিক সহায়তা দিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার অপপ্রচার চালাচ্ছে উল্লেখ করে বলেন, রাখাইন রাজ্যে যথাযথ সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক মহল মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত রেখেছে। আমরা বারবার বিভিন্ন ফোরামে বলেছি যে, এসব বাস্তচ্যুত মিয়ানমার জনগণকে ফেরত নেওয়ার বিষয়টি মিয়ানমার সরকারের ওপর বর্তায় এবং তাদেরকেই উদ্যোগী ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য মিয়ানমার সরকারের অনড় অবস্থানের কারণে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। উপরন্তু, মিয়ানমার বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মহলে অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে এবং বলছে বাংলাদেশের অসহযোগিতার কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিলম্ব হচ্ছে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী জানান, বিশ্ব জনমত ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় অব্যাহতভাবে আমাদের সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। জাতিসংঘ এ বিষয়ে মানবাধিকার কমিশনে একটি রিপোর্ট পাঠিয়েছে। কিন্তু মিয়ানমার সরকার তাদেরকে এ বিষয়ে কাজ করতে দিচ্ছে না। মিয়ানমারের অসহযোগিতা সত্ত্বেও আমরা দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় দুটি পথই খোলা রেখেছি। তবে যে কোনো প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াই জটিল ও দীর্ঘমেয়াদি বলে উল্লেখ করেন তিনি। হাওয়া ভবনের লুটপাটে অগ্রযাত্রা থমকে যায় : সরকারদলীয় সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমানের (চট্টগ্রাম-৩) লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে দেশের অগ্রগতিকে রুদ্ধ করে দেওয়া হয়।

এরপর ২১ বছর চলে সামরিক ও স্বৈরশাসকের লুটপাটতন্ত্র। আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করে। দেশের অগ্রযাত্রা আবার শুরু হয়। আমরা দ্রুততার সঙ্গে দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাই। একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে সেই অগ্রযাত্রা থমকে দাঁড়ায়। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসে। আবার দুর্নীতিচক্রে নিপাতিত হয় দেশ। হাওয়া ভবনের নামে তারেক জিয়া চালাতে থাকে লুটপাট। শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদে দুই-তৃতীয়াংশের অধিক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে। আবার দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করার জন্য মনোনিবেশ করি। ২০০৯ সাল থেকে আমাদের অগ্রযাত্রা শুরু হয়। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বর্তমানে এক হাজার ৯০৯ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে, যা গত বছর ছিল এক হাজার ৭৫১ ডলার। ২০০৬ সালে মাথাপিছু আয় ছিল মাত্র ৫৪৩ ডলার অর্থাৎ এ সময়ে মাথাপিছু আয় বেড়েছে সাড়ে তিন গুণ।

কওমি মাদ্রাসা মূলধারার শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে এগিয়ে যেতে পারবে : গণফোরাম দলীয় সংসদ সদস্য মোকাব্বির খানের অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের বেশকিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী কওমি মাদ্রাসায় লেখাপড়া করছে। দেশের কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থাকে মূলধারার সঙ্গে যুক্ত, জাতীয় উন্নয়ন এবং এসব শিক্ষার্থীর ভবিষ্যতের কথা বিবেচনায় রেখেই পর্যায়ক্রমে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাকে মূলস্রোতধারায় আনতে কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। আশা করা যায় এ আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন এবং বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণের ফলে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষাব্যবস্থা মূলধারার শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে সমানতালে এগিয়ে যেতে পারবে।

বয়স্ক ভাতাভোগীর সংখ্যা ৪০ লাখ : অসীম কুমার উকিলের (নেত্রকোনা-৩) লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বয়স্ক ভাতাভোগীর সংখ্যা ৪০ লাখ জন। আগামী অর্থবছরে বয়স্ক ভাতা বৃদ্ধি করে ৪৪ লাখ জনে উন্নীত করা হবে। বয়স্ক ভাতা সহায়তার আওতা সম্প্রসারণ ও ভাতার পরিমাণ পর্যায়ক্রমে আরও বৃদ্ধি করা হবে। আওয়ামী লীগ সরকার সর্বপ্রথম ১৯৯৭-১৯৯৮ অর্থ বছরে বয়স্ক ভাতা চালু করে। তখন বয়স্কভাতার পরিমাণ ছিল জনপ্রতি মাসিক ১০০ টাকা এবং ভাতাভোগীর সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৩ হাজার। আমরা জনপ্রতি মাসিক ভাতার হার ৫০০ টাকায় বৃদ্ধি করেছি। তিনি আরও জানান, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্ত দুঃস্থ মহিলাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও সুরক্ষা বিধানের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ সরকার প্রথম ১৯৯৮-৯৯ অর্থ বছরে বিধাব, স্বামী পরিত্যক্ত, দুঃস্থ মহিলাদের জন্য ভাতা চালু করে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৪ লাখ বিধবা, স্বামী পরিত্যক্ত, দুঃস্থ মহিলাকে জনপ্রতি মাসে ৫০০ টাকা হারে মোট ৮৪০ কোটি টাকা ভাতা দেওয়া হবে। এ ছাড়া আমরা ২০ থেকে ৫০ বছর পর্যন্ত মহিলাদের দুঃস্থ উন্নয়ন (ভিজিডি) কর্মসূচির আওতায় অন্তর্ভুক্ত করেছি। ভিজিডি উপকারভোগী মহিলাদের মাসিক ৩০ কেজি প্যাকেটজাত খাদ্য (চাল) সহায়তা দেওয়া এবং চুক্তিবদ্ধ এনজিওর মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। চলমান ভিজিডি চক্রে দেশের ৪৯২টি উপজেলার ৪ হাজার ৫৬৩টি ইউনিয়নে ১০ লাখ ৪০ হাজার উপকারভোগী মহিলাকে খাদ্য (চাল) দেওয়া হচ্ছে। খাদ্য সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি উপকারভোগীদের মধ্যে প্রশিক্ষণ (আয়বর্ধক ও সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক) দেওয়ার জন্য এনজিও নির্বাচনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। চলতি অর্থ বছরে এ কর্মসূচির মোট বাজেট বরাদ্দ ১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর