বৃহস্পতিবার, ২৭ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

খেলাপি ঋণ মোকাবিলায় সর্বোচ্চ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত লাগবে

রুহুল আমিন রাসেল

খেলাপি ঋণ মোকাবিলায় সর্বোচ্চ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত লাগবে

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

খেলাপি ঋণ মোকাবিলায় সর্বোচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত লাগবে। এটা অর্থমন্ত্রী কিংবা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাজ নয় বলে মনে করেন ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। এ অর্থনীতিবিদ বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মাবলির বাইরে গিয়ে ৩ থেকে ৪ বার যারা ঋণ পুনঃতফসিল করেছে, তাদের নাম ঋণখেলাপিদের তালিকায় নেই। ফলে জাতীয় সংসদে উত্থাপিত এই তালিকায় খেলাপি ঋণ পরিস্থিতির পূর্ণ প্রকাশ হয় না।

সংসদে ঋণখেলাপিদের তালিকা প্রকাশ ও খেলাপি ঋণ পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ- সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। বিশিষ্ট এ অর্থনীতিবিদ বলেন, সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগীরা ঋণ নিয়মিত করেছে। তাই সংসদে অর্থমন্ত্রী উত্থাপিত ঋণখেলাপিদের এই তালিকায় পরিচিত নামগুলো নেই। তিনি বলেন, ঋণখেলাপিদের এই তালিকা টেকনিক্যালি ঠিক। কিন্তু সত্য উন্মোচনে এই তালিকা যথেষ্ট নয়। যারা ঋণসুবিধা নিয়েছে, তাদের নাম তালিকায় নেই। ঋণখেলাপিদের এই তালিকা প্রকাশ্য চিত্র প্রকাশ করে না। ড. দেবপ্রিয় বলেন, সংসদে ঋণখেলাপিদের যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, সেই তালিকা অনুযায়ী ঋণের অর্থ উদ্ধারের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত আছে কিনা, তা বোধগম্য হচ্ছে না। কী কারণে এই টাকা উদ্ধার হচ্ছে না, সেটাও বলা হচ্ছে না। এ জন্যই ব্যাংকিং কমিশন চেয়েছিলাম। এই অর্থনীতি বিশ্লেষক বলেন, আশান্বিত হওয়ার কিছু নেই। সরকার এক ধরনের চাপ অনুভব করার ফলে খেলাপি ঋণের এই তালিকা প্রকাশ করেছে। সরকারের ভিতর উপলব্ধি আছে। কিন্তু কার্যকর প্রতিকার নেই। আসলে খেলাপি ঋণ কমাতে স্বচ্ছতা দরকার। সর্বোচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত দরকার।

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক এই সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা জোর দিয়ে বলছি, সরকারের সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বাস্তবায়নে জোর দেওয়া উচিত। আবার এগুলো বাস্তবায়ন করলে, পরে যে পরিবর্তন আসবে, সেই পরিবর্তনের ফলে যারা আহত হবে, ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তারা এই পরিবর্তনগুলো করতে দেয় না। ব্যাংকিং খাত ও পুঁজিবাজারের ক্ষেত্রে এটা এত পরিষ্কার যে, যারা এটা থেকে অন্যায্য সুবিধা নিয়েছেন, তারা এই পরিবর্তনগুলো আনতে দিতে চান না। তারা স্বচ্ছতা চান না। ব্যাংকিং কমিশন হলে পড়ে তথ্য-উপাত্তের যে সমস্যাগুলো আছে, ও-গুলো প্রকাশিত হয়ে পড়বে, এই দুশ্চিন্তা থেকেই তো ব্যাংকিং কমিশন হচ্ছে না। শুধু স্বচ্ছতাকে ভয় পায় বলেই তো এগুলো করতে পারবে না। এই প্রজ্ঞাবান অর্থনীতিবিদ বলেন, ব্যাংকিং খাতের এ মুহূর্তের দুরবস্থার কোনো প্রকৃত চিত্র প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রীর বক্তৃতায় পাওয়া যায়নি। ব্যাংকের সবচেয়ে বড় সমস্যার মধ্যে রয়েছে অনাদায়ী ঋণ ও তারল্য সংকট। দেউলিয়া আইন ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনের মাধ্যমে এই সংকট সমাধান হবে না। এটি ব্যাংক খাতে সুশাসন নিশ্চিত করার সঙ্গে জড়িত। ব্যাংক কমিশন গঠনের বিষয়টিকে সিদ্ধান্ত হিসেবে না দিয়ে আলোচনার বিষয় বলাটা এক অর্থে ভালো সময় ক্ষেপণের আরেক বুদ্ধি। আমরা যে তিনটি বিষয়ে বলেছিলাম- রাজস্ব কাঠামো, বিনিময় হার এবং ব্যাংক খাতের সংস্কার, এই তিনটির প্রতিফলন বাজেটে কোথাও লক্ষ্য করিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর