রবিবার, ৩০ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়ায় খুনিরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল ও বরগুনা প্রতিনিধি

প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়ায় খুনিরা

বরগুনায় স্ত্রীর সামনে প্রকাশ্যে খুন হওয়া ডিস ব্যবসায়ী শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফের খুনিরা গ্রেফতার হয়নি। প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়ায় তারা রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পুলিশের দাবি, তারা চেষ্টা চালাচ্ছে গ্রেফতারে। খুনিরা দেশ ত্যাগ করতে যেন না পারে, সে জন্য সীমান্ত এলাকায় কঠোর নজরদারি রাখা হয়েছে। পোর্টগুলোতে পাঠানো হয়েছে খুনিদের ছবি। এদিকে চার দিনেও গ্রেফতার না হওয়ায় পৌর শহরে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ এবং বিক্ষোভ মিছিল করেছে সাধারণ মানুষ। তারা হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতারসহ সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করেছে। মানববন্ধন, মিছিল ও সমাবেশে বরগুনার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার হাজার হাজার মানুষ অংশ নিয়ে রিফাত হত্যার প্রতিবাদ জানায়। হত্যার ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলেও পুলিশ তাদের খুঁজে পাচ্ছে না। স্থানীয়দের অভিযোগ, অভিযুক্তরা স্থানীয় দুই প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার ছত্রছায়ায় থাকায় পুলিশ তাদের কাছ পর্যন্ত পৌঁছতে পারছে না। এদিকে মূল আসামিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকলেও রিফাত হত্যায় জড়িত সন্দেহে পটুয়াখালীর এক ওয়ার্ড কাউন্সিলরের বাসা থেকে সাইমুন নামে এক যুবককে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। অপরদিকে নিহতের স্ত্রী মিন্নি গতকাল বিকালে তার পৈতৃক নিবাসে এক সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করেও শেষ মুহূর্তে অজ্ঞাত কারণে সম্মেলন বাতিল করেন। গত বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় বরগুনা শহরের কলেজ রোডে ডিস ব্যবসায়ী রিফাত শরীফকে তার স্ত্রী মিন্নির সামনে কুপিয়ে মুমূর্ষু আহত করে মাদক ও অস্ত্রসহ আট মামলার আসামি নয়ন ও তার সহযোগীরা। আহত রিফাতকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে বিকাল ৪টার দিকে মারা যায় সে। রিফাতকে কোপানোর দৃশ্য দূর থেকে অজ্ঞাত কেউ মুঠোফোনে ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দিলে দেশ-বিদেশে তোলপাড় হয়। নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। জানা গেছে, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঘটনা ঘটলেও পুলিশ তাৎক্ষণিক অভিযুক্তদের গ্রেফতার না করে লিখিত অভিযোগের আশায় বসে থাকে। অভিযোগ রয়েছে রিফাত হত্যায় অভিযুক্তরা বরগুনার দুই প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার ছত্রছায়ায় থাকায় ঘটনার পর পরই পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে বরং তাদের পালিয়ে যেতে প্রকারান্তরে সহায়তা করেছে। নিহত রিফাতের বন্ধু মঞ্জুরুল আলম জন বলেন, রিফাতকে কোপানের পরপরই পুলিশ তৎপর হলে কোনো আসামি পালাতে পারত না। বিকালে রিফাত মারা যাওয়ার পরও তারা অন্যান্য খুনের মতো অভিযোগের আশায় চেয়ে থাকে। কিন্তু বিকালেও তারা তৎপর হলে একজন আসামিও বরগুনা শহর ছেড়ে পালাতে পারত না। পুলিশের প্রাথমিক নিষ্ক্রিয়তার কারণেই মূল আসামিরা পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে অভিযোগ করেন জন। রিফাত হত্যায় মূল অভিযুক্তরা প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় না থাকলে পুলিশ অনেক আগেই তাদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হতো বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ। হত্যাকাে র পরদিন গত বৃহস্পতিবার নিহতের বাবা দুলাল শরীফ অভিযুক্ত নয়নসহ ১২ জনের নামোল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৫-৬ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করলে এবং রিফাতকে কোপানোর ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেলে নড়েচড়ে বসে পুলিশ। ওইদিন মান বাঁচাতে পুলিশ মামলার ৪ নম্বর আসামি চন্দন ও ৯ নম্বর আসামি হাসান এবং সন্দেহজনকভাবে নাজমুল আহসান নামে একজনকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করে। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. রাসেল প্রথমত দুই আসামির সাত দিন করে এবং নাজমুলের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এদিকে পটুয়াখালী পৌর শহরের আদালতপাড়ার গার্লস স্কুল রোডের বাসিন্দা পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আলালের বাসা থেকে গত শুক্রবার গভীর রাতে সাইমুন নামে বরগুনার এক যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ। সাইমুন রিফাত হত্যায় মূল অভিযুক্তদের সঙ্গে মুঠোফোনে কথপোকথন করেছে বলে পুলিশের কাছে তথ্য রয়েছে। এই সূত্র ধরে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। তবে তদন্তাধীন বিষয় বিস্তারিত জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন বরগুনার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন। তিনি বলেন, রিফাত হত্যাকারীরা পুলিশের নেটওয়ার্কের মধ্যেই আছে। তারা দূরে কোথাও পালাতে পারেনি। তাদের গ্রেফতারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। দ্রুত সময়ের মধ্যেই রিফাত হত্যাকারীরা গ্রেফতার হবে আশা করছেন পুলিশ সুপার।

সর্বশেষ খবর