রবিবার, ৩০ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা
সামাজিক ব্যবসা সম্মেলন শেষ

চাকরির মোহ তরুণ সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে : ড. ইউনূস

রুকনুজ্জামান অঞ্জন, ব্যাংকক (থাইল্যান্ড) থেকে

চাকরির মোহ তরুণ সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে : ড. ইউনূস

থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে সকাল শুরু হয় কর্মজীবী মানুষের কর্মস্থলে যাওয়ার তাড়া দিয়ে। গলি থেকে রাজপথ সব খানেই ভিড়। গাড়ি কিংবা ট্যাক্সি, মেট্রোরেল অথবা ভাড়া করা বাইক-  যে যেভাবে পারছে কর্মস্থলে ছুটছে। সময়মতো যেতে হবে অফিসে। অথচ এই অফিসমুখী চাকরির ধারণাটাই বদলে দিতে বললেন এক ব্যতিক্রমী মানুষ। দুই দিনব্যাপী ‘নবম সামাজিক ব্যবসা দিবস সম্মেলন’-এর সমাপনী বক্তৃতায় শান্তিতে নোবেলজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বললেন, চাকরির মোহ তরুণ সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। যারা চাকরি করছে, তারা শুধু তাদের ঊর্ধ্বতনদের হুকুম পালন করছে। নিজের ভিতর যে সৃষ্টিশীলতা আছে, সেটিকে কোনো কাজে লাগাতে পারছে না। এই সৃষ্টিশীলতাকে কাজে লাগানোর জন্য চাকরি না করে তরুণদের উদ্যোক্তা হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। বাংলাদেশের ক্ষুদ্রঋণের প্রবক্তা ও গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর ইউনূস এ সময় বলেন, ‘চাকরি ছেড়ে উদ্যোক্তা হওয়ার বিষয়টি অনেক চ্যালেঞ্জিং। এই চ্যালেঞ্জ নেওয়ার মতো সাহস আমাদের তরুণদের রয়েছে। আর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ছাড়া জীবন অর্থহীন। আমরা এমন একটি জীবন চাই, যে জীবনে মানুষ ব্যক্তিকেন্দ্রিক চিন্তা না করে সমাজের কথা ভাববে।’ প্রখ্যাত এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘অর্থনীতিকে সামাজিক বিজ্ঞান বলা হয়। কিন্তু যে অর্থনীতিতে সমাজের কথা নেই, শুধু ব্যক্তির লাভ-লোকসানের হিসাব থাকে, সেটি আর যা-ই হোক সামাজিক বিজ্ঞান হতে পারে না। পুঁজিবাদের অর্থনীতি থেকে আমাদের এখন সামাজিক অর্থনীতির দিকে চোখ ফেরাতে হবে।’ প্রফেসর ইউনূস বলেন, ‘অর্থনীতিকে সামাজিকীকরণের কথা উচ্চারণ করায় অনেকে আমাকে ‘কমিউনিস্ট’ বলে সমালোচনা করতে পারেন। কিন্তু এটা তা নয়। মানুষ সামাজিক জীব। তাই তার মাধ্যমে পরিচালিত অর্থনীতিও হতে হবে সমাজমুখী। পুঁজিবাদী এই অর্থনীতির ধ্যানধারণা বদলে দিয়ে আমাদের এমন একটি সামাজিক ব্যবসানির্ভর অর্থনীতি গ্রহণ করতে হবে, যেখানে মুনাফা নয়, সমাজের সমস্যা সমাধান করাই হবে মূল লক্ষ্য।’ শান্তিতে নোবেলজয়ী এই ব্যক্তিত্ব বলেন, ‘আমাদের এই পৃথিবীতে অনেক সমস্যা রয়েছে। ব্যক্তিকেন্দ্রিক চিন্তা করে আমরা এটা ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিত পারি না। আমাদের পৃথিবী আমরাই বাঁচাব।’ প্রফেসর ইউনূস যখন সমাপনী ভাষণ শেষ করলেন তখন ব্যাংককের ব্যস্ততম এলাকা সেন্টারওয়ার্ল্ড কনভেনশন সেন্টারের ২২ তলা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী ৬০টি দেশের প্রায় দেড় হাজার প্রতিনিধি করতালি দিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে থাকেন। এর আগে সকালে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন সেশনে সামাজিক ব্যবসা প্রসারে সরকারের সহায়তা, সুশাসন, পরিবেশদূষণ, জলবায়ু পরিবর্তন, দুর্নীতি প্রতিরোধ ও জাতিসংঘ গৃহীত টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের (এসডিজি) চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা হয়। এসব সেশনে বক্তব্য রাখেন মেরিল্যান্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষক অ্যালেক্স কাউন্ট, প্যারিস ২০২৪-এর ইমপ্যাক্ট অ্যান্ড লিগ্যাল ডিরেক্টর মারিয়া বারসেক, প্যারা-অলিম্পিক স্বর্ণপদকজয়ী গে ইয়াং, পিচ অ্যান্ড স্পোর্টসের এমডি লরেন্ট ডুপন্ট, জার্মান ক্রিয়েটিভ ল্যাবের প্রতিষ্ঠাতা হ্যানস রিজ, সিপি গ্রুপের নোপাদল দেজ-উদো, জাপান অটোমেকানিক লিমিটেডের হিরাও সোনাকি, ইউনূস সোশ্যাল বিজনেস ব্রাজিলের লুসিয়ানো গারজেল, গ্রামীণ শক্তির এমডি সোহেল আহমেদ, গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্টের এমডি পারভীন মাহমুদা প্রমুখ।

ড. ইউনূসকে ল্যাম্প অব পিস (শান্তির আলোকবর্তিকা) পদক দেবেন ভ্যাটিকানের পোপ : বিশ্বশান্তির জন্য ভূমিকা রাখায় প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে শান্তি পদক দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ভ্যাটিকানের পোপ ফ্রান্সিস। সম্মেলনে ভ্যাটিক্যানের প্রতিনিধিত্বকারী দ্য হোলি কনভেন্ট পেপাল বাসিলিকা অব আসিসির মুখপাত্র এঞ্জো ফরতোনাতো এ তথ্য দেন। তিনি বলেন, ২০২০ সালের বসন্তে অনুষ্ঠেয় অর্থনৈতিক ফোরামে প্রফেসর ইউনূসের হাতে এই ‘ল্যাম্প অব পিস’ পদক তুলে দেবে ভ্যাটিকান।

সর্বশেষ খবর