সোমবার, ১ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা
হলি আর্টিজান হামলার তিন বছর

২১১ সাক্ষীর মধ্যে সাক্ষ্য শেষ ৬০ জনের

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর গুলশানের অভিজাত হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় নৃশংস জঙ্গি হামলার তিন বছর আজ। ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে হত্যা করে নব্য ধারার জঙ্গিরা। পরদিন সকালে কমান্ডো অভিযানে পাঁচ জঙ্গি ও এক সন্দেহভাজন নিহত হয়। ২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর আট আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার বিচার আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। হলি আর্টিজান মামলার ২১১ সাক্ষীর মধ্যে ৬০ জনের সাক্ষ্য শেষ হয়েছে। আগামীকাল মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করা হয়েছে। আদালত সূত্র জানায়, গুলশানের হলি আর্টিজান হামলার ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গুলশান থানায় মামলা করে পুলিশ। মামলার আসামিরা হলেন- জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী, রাকিবুল হাসান রিগান, রাশেদুল ইসলাম ওরফে র‌্যাশ, সোহেল মাহফুজ, মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, হাদিসুর রহমান সাগর, শরিফুল ইসলাম ও মামুনুর রশিদ। এ ছাড়া বিভিন্ন অভিযানে ১৩ জন নিহত হওয়ায় তাদের অব্যাহতির সুপারিশ করেন তদন্ত কর্মকর্তা। পরে মামলা থেকে তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়। এই মামলার ২১১ সাক্ষীর মধ্যে ৬০ জনের সাক্ষ্য শেষ হয়েছে। সর্বশেষ মঙ্গলবার মামলায় পাঁচ পুলিশ কর্মকর্তা সাক্ষ্য দেন। তারা হলেন এসপি আবদুল আহাদ, জসিম উদ্দিন, এডিসি ওবায়দুল হক, পরিদর্শক মাহাবুব আলম ও উপ-পরিদর্শক বিল্লাহ ভূঁইয়া।

সেদিন যা ঘটেছিল... ১ জুলাই শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকেই গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়কের অভিজাত সেই স্প্যানিশ রেস্তোরাঁয় ভিড় জমিয়েছিলেন দেশি-বিদেশি ভোজনরসিকরা। রাত পৌনে ৯টার দিকে ওই রেস্তোরাঁয় কয়েকজন যুবক অতর্কিতে হামলা চালায়। এ সময় তারা গুলিও ছোড়ে। তখন সেখানে পুলিশ গেলে তাদের সঙ্গে গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটে। শুরুতেই গুলিতে প্রদীপ ও আলমগীর নামের পুলিশের দুজন কনস্টেবল ও আবদুর রাজ্জাক নামের এক পথচারী আহত হন। চিকিৎসার জন্য তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ ওই এলাকা ঘেরাও করে ফেলে।

রাত ১০টার দিকে রেস্তোরাঁর ভেতর থেকে একের পর এক গুলি ও বোমার আওয়াজ ভেসে আসতে থাকে। রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে ভেতর থেকে অস্ত্রধারীরা পর পর দুটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় এবং বেশ কয়েকটি গুলি ছোড়ে। ডিএমপির সহকারী কমিশনার রবিউল করিম, বনানী থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহউদ্দিনসহ আহত কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা রবিউল ও সালাহউদ্দিনকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই দিন দিবাগত রাত দেড়টায় পাঁচ তরুণের ছবি প্রকাশ করে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)। জঙ্গিগোষ্ঠীর ইন্টারনেটভিত্তিক তৎপরতা নজরদারিতে যুক্ত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ এ তথ্য জানায়। পরিস্থিতির ভয়াবহতা বিবেচনা করে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির পাশাপাশি রাতেই সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীর কমান্ডোরা অভিযানে অংশ নেন। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র?্যাব, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সম্মিলিতভাবে ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়। নিরাপত্তার স্বার্থে ঘটনাস্থলের পাশ থেকে গণমাধ্যমকর্মীসহ সাধারণ মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে দেওয়া হয়।

সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে শুরু হওয়া ১২ থেকে ১৩ মিনিটের ওই অপারেশনে একজন জাপানি, দুজন শ্রীলঙ্কানসহ ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। ছয় হামলাকারী ঘটনাস্থলেই নিহত হয়।

সর্বশেষ খবর