সোমবার, ১ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট পাস

নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতীয় সংসদে আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট পাস হয়েছে। এটি আওয়ামী লীগ সরকারের টানা এগারতম এবং অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের প্রথম বাজেট। গতকাল সকালে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বাজেটের ওপর আলোচনায় বিরোধী দলের এমপিরা ৫২০টি ছাঁটাই প্রস্তাব এবং ৫৯টি দাবি উত্থাপন করেন। ১৩ জুন সংসদে বাজেট উপস্থাপনের পর ২৫৫ জন এমপি ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে ৫১ ঘণ্টা ৫২ মিনিট আলোচনা করেন। সরকারি দলের সদস্যদের কণ্ঠভোটে ছাঁটাই প্রস্তাবগুলো নাকচ হয়ে যায়। অবশ্য সম্পূরক বাজেট আলোচনায় আরও ১৪ জন সদস্য অংশ নেন। এরপর দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী বাজেট পাস করার জন্য উপস্থাপন করেন। পরে সংসদে কণ্ঠভোটে বাজেট পাস করা হয়। এ সময় সরকারদলীয় এমপিরা টেবিল চাপড়ে অর্থমন্ত্রীকে সমর্থন ও স্বাগত জানান। আজ ১ জুলাই থেকে নতুন এ বাজেট কার্যকর হবে।

পাস হওয়া ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য সংযুক্ত তহবিল থেকে ৬ লাখ ৪২ হাজার ৪৭৮ কোটি টাকার নির্দিষ্টকরণ বিল পাস হয়। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনের শুরুতেই মঞ্জুরি দাবিতে আলোচনা করার কথা জানান। সরকার, বিরোধী দল ও স্বতন্ত্র এমপিরা এসব দাবিতে আলোচনা করেন।

গত ১৩ জুন জাতীয় সংসদে ‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ, সময় এখন আমাদের : সময় এখন বাংলাদেশের’ শীর্ষক ২০১৯-২০ অর্থবছরের ৫,২৩,১৯০ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এতে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৩,৭৭,৮১০ কোটি টাকা। উন্নয়ন ব্যয় ২,১১,৬৮৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে মূল এডিপির পরিমাণ ২,০২,৭২১ কোটি টাকা। আর সরকারের পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে ৩,১০,২৬২ কোটি টাকা। বিশাল আকারের এই বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ১,৪৫,৩৮০ কোটি টাকা। নতুন এই অর্থবছরে মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ২ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতি লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ।

মঞ্জুরি দাবি ও ছাঁটাই প্রস্তাব : আগামী অর্থবছরের বাজেটের ওপর সংসদে উত্থাপিত বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ খাতের ৫৯টি মঞ্জুরি দাবির বিপরীতে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, বিএনপি ও স্বতন্ত্র এমপিরা ৫২০টি ছাঁটাই প্রস্তাব আনেন। এর মধ্যে ৪টি মন্ত্রণালয়ের বিপরীতে আসা দাবিগুলো আলোচনার জন্য গৃহীত এবং বাকি প্রস্তাবগুলো কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। বাজেট পাস হওয়ার পর অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এমপি ও সংশ্লিষ্টদের রবিবার সন্ধ্যায় বাজেটোত্তর নৈশভোজে যোগ দিতে আমন্ত্রণ জানান।

খাতওয়ারি বরাদ্দ : খাতওয়ারি বরাদ্দের মধ্যে অর্থ বিভাগের ব্যয় ২ লাখ ২৬ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা। ব্যয়ের দিক থেকে সবচেয়ে কম রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে, ২৪ কোটি টাকা। প্রতিরক্ষায় বরাদ্দ ৩২ হাজার ৫২০ কোটি টাকা এবং স্থানীয় সরকার বিভাগে ৩৪ হাজার ২৪১ কোটি টাকা। জাতীয় সংসদ খাতে ৩২৭ কোটি টাকা, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় খাতে ৩ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে ২৪১ কোটি টাকা, নির্বাচন কমিশনে ১ হাজার ৯২০ কোটি টাকা, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ২ হাজার ৯৪১ কোটি, সরকারি কর্মকমিশন খাতে ১০২ কোটি টাকা। অর্থ বিভাগ, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ে ২৩৮ কোটি, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে ২ হাজার ৮৯৯ কোটি, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে ৩ হাজার ৪১ কোটি, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ খাতে ১৬ হাজার ৩২ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। পাশাপাশি পরিকল্পনা বিভাগে ১ হাজার ২৩১ কোটি, বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগে ১৪৯ কোটি, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগে ৩৭৫ কোটি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ৬৩২ কোটি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ১ হাজার ৬২০ কোটি, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে ৩৮ কোটি, আইন ও বিচার বিভাগে ১ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়। জননিরাপত্তা বিভাগে বরাদ্দ ২১ হাজার ৯২৩ কোটি, লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগে ৩৫ কোটি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ২৪ হাজার ৪১ কোটি, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে ২৯ হাজার ৬২৪ কোটি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে ১৬ হাজার ৪৩৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে স্বাস্থ্যসেবা খাতে ১৯ হাজার ৯৪৪ কোটি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে ১ হাজার ৯৩০ কোটি, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে ৬ হাজার ৮৮১ কোটি, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ৩ হাজার ৭৮৪ কোটি, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে ৩১৩ কোটি, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে ৬ হাজার ৬০৩ কোটি, তথ্য মন্ত্রণালয়ে ৯৮৯ কোটি এবং সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৭৫ কোটি টাকা।

এ ছাড়া ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ১ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে ১ হাজার ৪৮৯ কোটি টাকা, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়ে ২ হাজার ৪৪৯ কোটি, শিল্প মন্ত্রণালয়ে ১ হাজার ৫৫৫ কোটি, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে ৮০০ কোটি, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগে ১ হাজার ৯৮৫ কোটি, কৃষি মন্ত্রণালয়ে ১৪ হাজার ৫৩ কোটি এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে ২ হাজার ৯৩২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে ১ হাজার ৪৯৬ কোটি, ভূমি মন্ত্রণালয়ে ১ হাজার ৯৪৩ কোটি, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে ৭ হাজার ৯৩২ কোটি, খাদ্য মন্ত্রণালয়ে ১৭ হাজার ১৫২ কোটি এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৯ হাজার ৮৭১ কোটি টাকা। এ ছাড়া সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে ২৯ হাজার ২৭৪ কোটি, রেলপথ মন্ত্রণালয়ে ১৬ হাজার ৩৫৭ কোটি, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে ৩ হাজার ৮৩২ কোটি, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে ৩ হাজার ৪২৬ কোটি, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে ৩ হাজার ৪৬০ কোটি, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ১ হাজার ১৯৪ কোটি, বিদ্যুৎ বিভাগ ২৬ হাজার ৬৪ কোটি, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ৪ হাজার ৫৫৩ কোটি, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে ৫৯০ কোটি, দুর্নীতি দমন কমিশনে ১৪০ কোটি এবং সেতু বিভাগে ৮ হাজার ৫৬৩ কোটি, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষায় ৭ হাজার ৪৫৩ কোটি, সুরক্ষা সেবা খাতে ৩ হাজার ৬৯৪ কোটি এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণে ৫ হাজার ৭৮৭ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে।

সর্বশেষ খবর