বৃহস্পতিবার, ৪ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

শেখ হাসিনার ট্রেনে গুলি, ৯ জনের ফাঁসি

যাবজ্জীবন ২৫ জনের, ১৩ জনকে ১০ বছর করে জেল

সৈকত আফরোজ আসাদ, পাবনা

শেখ হাসিনার ট্রেনে গুলি, ৯ জনের ফাঁসি

পাবনার ঈশ্বরদীতে ১৯৯৪ সালে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনে গুলি ও বোমা হামলার ঘটনায় করা মামলার রায়ে নয়জনকে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ২৫ জনকে যাবজ্জীবন ও ১৩ জনকে ১০ বছর করে কারাদ- দেওয়া হয়েছে। গতকাল পাবনার স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-৩-এর ভারপ্রাপ্ত বিচারক এবং অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. রুস্তম আলী এ আদেশ দেন।

আলোচিত এ মামলায় রায়ে মৃত্যুদন্ড পাওয়া নয়জনের প্রত্যেককে পাঁচ লাখ টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও তিন বছর করে সশ্রম কারাদ- দেওয়া হয়। যাবজ্জীবন দন্ড পাওয়া ২৫ জনের প্রত্যেককে তিন লাখ টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও দুই বছর করে সশ্রম কারাদ  দেয় আদালত। আর ১৩ জনের প্রত্যেককে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদ- ও এক লাখ টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছর করে সশ্রম কারাদ- দেওয়া হয়। মৃত্যুদন্ড প্রাপ্তরা হলেন জেলা বিএনপির মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক কে এম আখতারুজ্জামান, ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির (স্থগিত কমিটি) সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টু (পলাতক), কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক পৌর মেয়র মোকলেসুর রহমান ওরফে বাবলু, তার ভাই সাবেক ছাত্রদল নেতা রেজাউল করিম ওরফে শাহিন, অন্য ভাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক নেতা মাহবুবুর রহমান ওরফে পলাশ, বিএনপি নেতা মো. অটল, ঈশ্বরদী পৌর যুবদলের সভাপতি শ্যামল (নূরে মোস্তফা), স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আজিজুর রহমান ওরফে শাহীন ও বিএনপির সাবেক নেতা শামসুল আলম। যাবজ্জীবন দন্ড প্রাপ্ত আসামিরা হলেন বিএনপি নেতা আমিনুল ইসলাম (পলাতক), আজাদ হোসেন ওরফে খোকন, ইসমাইল হোসেন ওরফে জুয়েল, আলাউদ্দিন বিশ্বাস, শামসুর রহমান, আনিসুর রহমান (পলাতক), আক্কেল আলী, মোহাম্মদ রবি, মোহাম্মদ এনাম, আবুল কাশেম, কালা বাবু, মো. মামুন (পলাতক), মামুন-২ (পলাতক), সেলিম হোসেন, মো. কল্লোল, তুহিন, শাহ আলম ওরফে লিটন, আবদুল্লাহ আল মামুন, লাইজু (পলাতক), আবদুল জব্বার, পলাশ, আবদুল হাকিম, আলমগীর হোসেন, এ কে এম ফিরোজুল ইসলাম ওরফে পায়েল ও আবুল কালাম। ১০ বছর করে কারাদ প্রাপ্তরা হলেন বিএনপি নেতা ও ঈশ্বরদী উপজেলার শাহাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নেফাউর রহমান রাজু, আজমল হোসেন, সাবেক ছাত্রদল নেতা ও ঈশ্বরদী পৌরসভার বর্তমান কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন, ছাত্রদলের সাবেক নেতা মো. রনো (পলাতক), মো. বরকত, চাঁদ আলী (পলাতক), এনামুল কবির, মো. মোক্তার, হাফিজুর রহমান মুকুল, হুমায়ুন কবির ওরফে দুলাল (পলাতক), জামরুল (পলাতক), তুহিন বিন সিদ্দিক ও ফজলুর রহমান। সরকারপক্ষের আইনজীবী আকতারুজ্জামান মুক্তা বলেন, ১৯০৮ সালের বিস্ফোরক আইনের ৩ ধারা মোতাবেক আদালত মামলাটির রায় ঘোষণা করেছে। মামলার মোট ৫২ জন আসামির মধ্যে গত ২৫ বছরে পাঁচজন মারা গেছেন। বাকি ৪৭ জন দ প্রাপ্ত হলেন। এর মধ্যে রায় ঘোষণার সময় ৩২ জন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা খুলনা থেকে সৈয়দপুর যাওয়ার পথে ঈশ্বরদী স্টেশনে যাত্রাবিরতি ও পথসভা করার কথা ছিল। শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনটি ঈশ্বরদী স্টেশনে পৌঁছালে বিএনপি নেতা-কর্মীরা ট্রেন ও এর কামরা লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ ও বোমা নিক্ষেপ করেন। এ ঘটনায় তৎকালীন জিআরপি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে সাতজনের নামে একটি মামলা করেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর পুলিশ মামলাটি পুনঃ তদন্ত করে। তদন্ত শেষে নতুন করে ঈশ্বরদীর বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীসহ ৫২ জনকে এ মামলায় আসামি করা হয়। মামলা দায়েরের পরের বছর পুলিশ কোনো সাক্ষী না পেয়ে আদালতে চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করে। আদালত চূড়ান্ত রিপোর্ট গ্রহণ না করে অধিকতর তদন্তের জন্য মামলাটি সিআইডিতে স্থানান্তর করে। পরে সিআইডি তদন্ত শেষে ৫২ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করে। এদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী মাসুদ খন্দকার বলেন, ‘এটি একটি প্রহসনের রায়। এর বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করব।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর