বৃহস্পতিবার, ৪ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

আটকা ৩২ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব

উচ্চ আদালতে ২২ হাজারের বেশি মামলা বিচারাধীন বেঞ্চ বাড়ানোর তাগিদ আইনজ্ঞদের

আরাফাত মুন্না

উচ্চ আদালতে ঝুলে আছে ২২ হাজারেরও বেশি রাজস্ব-সংক্রান্ত মামলা। আয়কর, ভ্যাট ও আমদানি শুল্কের ওইসব মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় ৩২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না। সংশ্লিষ্টরা জানান, বিচার বিভাগের চলমান দীর্ঘসূত্রতাকে কাজে লাগিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আটকে রেখেছে স্বার্থানেষী মহল। তারা মামলাকে রাজস্ব আটকানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। আইনজ্ঞরা বলেন, বর্তমানে রাজস্ব-সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তির জন্য হাই কোর্টে তিনটি বেঞ্চ নির্ধারিত থাকলেও তা পর্যাপ্ত নয়। বেঞ্চ বৃদ্ধির পাশাপাশি এসব মামলা নিষ্পত্তিতে দিতে হবে বিশেষ গুরুত্ব। এ জন্য অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের সঙ্গে এনবিআরকে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে বলেও মত তাদের।

জানা গেছে, এনবিআর যে কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে ভ্যাট দাবি করলে তার আইনি প্রক্রিয়ায় যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে যে-কেউ এনবিআরের অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালে আবেদন বা উচ্চ আদালতে রিট দায়ের করতে পারেন। উচ্চ আদালত রিট দায়ের করার পর আবেদন খারিজ করে এনবিআরে পাঠাতে পারেন। সে ক্ষেত্রে এনবিআরের অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালে আবেদন করতে হয়। এ জন্য দাবিকৃত অর্থের ১০ শতাংশ পরিশোধ করতে হয়। অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনাল প্রয়োজনীয় শুনানি শেষে রায় দেয়। এর পর বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান ফের উচ্চ আদালতে আপিল করে। এভাবে গড়িয়ে যায় বছরের পর বছর। গত বছর জুন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, হাই কোর্ট ও আপিল বিভাগে রাজস্ব-সংক্রান্ত ২২ হাজার ২৮২টি মামলা বিচারাধীন। এসব মামলায় সরকারের প্রায় ৩২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আটকে আছে। এদিকে বিষয়টি প্রধান বিচারপতির নজরে আনা এবং আলাদা বেঞ্চ গঠন করে এ মামলাগুলো নিষ্পত্তি করার অনুরোধ জানিয়ে গত বছর চিঠি দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। একই সঙ্গে মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ গ্রহণের জন্য অ্যাটর্নি জেনারেলকেও চিঠি দেয় প্রতিষ্ঠানটি। জানতে চাইলে রাজস্ব-সংক্রান্ত একটি হাই কোর্ট বেঞ্চের দায়িত্বে থাকা ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বর্তমানে তিনটি বেঞ্চে রাজস্ব-সংক্রান্ত মামলার শুনানি হচ্ছে। আমরা সব সময় চেষ্টা করে যাচ্ছি এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে।’ এনবিআরের সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর) পদ্ধতিতে কিছু মামলা নতুন করে নিষ্পত্তি করার চেষ্টা নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কমিশনারেটগুলো বড় যেসব করদাতা মামলায় আছেন, তারা এডিআরে যাতে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি করতে পারেন, সে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিছু ইঙ্গিত পাওয়া গেছে যে, অনেকে এডিআরে আসার চেষ্টা করছেন। রাজস্ব আয়ে এনবিআরের চেষ্টা বাড়ানো হচ্ছে। করদাতাদের উৎসাহিত করা হচ্ছে, যাতে তারা নিজের উদ্যোগে কর দেন। রাজস্ব-সংক্রান্ত বিপুলসংখ্যক মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির পথ জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক যে, সরকারের এত বিপুল পরিমাণ রাজস্ব মামলার কারণে আটকে আছে। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে হাই কোর্টে আলাদা বেঞ্চেই এসব মামলা শুনানি হচ্ছে। তবে আমি মনে করি মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য রাজস্ব মামলা-সংক্রান্ত আরও বেঞ্চ বাড়ানো প্রয়োজন। এ বিষয়ে হাই কোর্টের সাবেক বিচারপতি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার এ বি এম আলতাফ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশে যত সংখ্যক মামলার জট রয়েছে, তাতে সুযোগসন্ধানীরা তো সুযোগ নেবেই। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী মামলাকে রাজস্ব ফাঁকির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। তিনি বলেন, যেহেতু সরকার এখানে ক্ষতিগ্রস্ত তাই সরকারকেই এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য উদ্যোগ নিতে হবে। সাবেক এ বিচারপতি জানান, অনেক সময় দেখা যায়, বছরের পর বছর মামলা পড়ে থাকে কিন্তু শুনানির জন্য প্রস্তুত হয় না। আর প্রস্তুত না হলে বিশেষ বেঞ্চ করেও তো শুনানি করা সম্ভব হবে না। তাই অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের একটা টিম করে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে রাজস্ব-সংক্রান্ত মামলাগুলো নিয়ে কাজ করতে হবে। এ ছাড়া এসব মামলা নিষ্পত্তির জন্য হাই কোর্টে অন্তত পাঁচটি বেঞ্চ থাকা প্রয়োজন বলেও মনে করেন এই আইনজীবী।

সর্বশেষ খবর