বৃহস্পতিবার, ৪ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা
শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত

এরশাদের কবরের স্থান নিয়ে জাতীয় পার্টিতে আলোচনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

এরশাদের কবরের স্থান নিয়ে জাতীয় পার্টিতে আলোচনা

সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন জাতীয়  পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ চোখ মেলে তাকালেও তার অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। গতকাল বেলা ১১টায় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও এরশাদের ছোট ভাই জি এম কাদের এরশাদকে দেখতে গিয়ে তার হাত ধরেছিলেন। তখন তিনি চোখ মেলে তাকিয়েছেন। ভাব বিনিময় করলেও ডাক্তারের ভাষায় তার অবস্থা অপরিবর্তিত। এরশাদের স্বাস্থ্যের সর্বশেষ পরিস্থিতি জানাতে গতকাল বেলা ১টায় পার্টির বনানী অফিসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জি এম কাদের এসব কথা জানান। জি এম কাদের বলেন, এরশাদের ফুসফুসের ইনফেকশন কমেছে। কিডনির সমস্যার কারণে প্র¯্রাব বন্ধ ছিল, এখন ক্লিয়ার হয়েছে। সার্বিক বিবেচনায় তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। তবে শঙ্কামুক্ত নন। এরশাদ এখনো অক্সিজেন সাপোর্টে আছেন। দুই ঘণ্টা অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে আবার দুই ঘণ্টা আন্ডার প্রেশারে রাখা হচ্ছে। এটা আস্তে আস্তে কমানো হচ্ছে। এই ধারা আরও দুই-তিন দিন অব্যাহত থাকলে সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ সুস্থ হয়ে উঠবেন। এ সময় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা, কেন্দ্রীয় নেতা সুনীল শুভ রায়, মো. আজম খান, হাসিবুল ইসলাম জয় প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। কবর কোথায় হবে দীর্ঘ আলোচনা : এদিকে গতকাল বেলা ৩টা থেকে বনানীর কার্যালয়ে দীর্ঘ সাড়ে তিন ঘণ্টা পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও এমপিদের রুদ্ধদ্বার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে উপস্থিত দলের একাধিক প্রেসিডিয়াম সদস্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে নিশ্চিত করেছেন, এইচ এম এরশাদ মারা গেলে কবর কোথায় হবে এ নিয়ে এ সময় দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। প্রায় সবাই খোলা জায়গায় কবর দেওয়ার পক্ষে মত দেন, যেখানে কবরের পাশে মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা স্থাপন করা সম্ভব হয়, নেতা-কর্মীরা যেন কবর জিয়ারত করতে পারেন। দলীয় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি কমপ্লেক্সও থাকবে কবরের পাশে। সূত্র জানায়, বৈঠকের শুরুতেই জি এম কাদের এরশাদের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি এরশাদের সুস্থতা কামনায় সবার দোয়া এবং দল কীভাবে চলবে এ বিষয়ে সবার মতামত চান। সূত্র জানায়, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা ও সফিকুল ইসলাম সেন্টু রাজধানীর আদাবরে জায়গা কিনে কবরস্থান নির্মাণের প্রস্তাব দেন।

অ্যভডভোকেট কাজী ফিরোজ রশীদ আদাবরে না পাওয়া গেলে সাভারে নিজস্ব জায়গা থেকে দুই বিঘায় কবরস্থানের কথা বলেন।

আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী মামুনুর রশিদ বড় ও খোলা জায়গায় এরশাদের কবরস্থান করার দাবি জানিয়ে কবরস্থানের জন্য পাঁচ কোটি টাকা দেওয়ার ঘোষণা দেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের যাবতীয় খরচও বহন করবেন বলে জানান তিনি। এ টি ইউ তাজ রহমান বলেন, আজকের সভায় যারা উপস্থিত হননি তাদের জন্য পার্টি থেমে থাকতে পারে না। তরুণ প্রজন্ম জাতীয় পার্টিকে এগিয়ে নেবে। পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ এমপি আগামী শুক্রবার সারা দেশে এইচ এম এরশাদের সুস্থতা কামনায় দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের প্রস্তাব দেন। মেজর (অব.) খালেদ আখতার বলেন, বুধবার চিকিৎসকরা এরশাদের আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন। কিন্তু গতকালের অবস্থা দেখে চিকিৎসকরা আশাবাদী, দ্রুতই তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন। সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, এইচ এম এরশাদ ও বেগম রওশন এরশাদ দুজনের বয়স বিবেচনা করে জি এম কাদেরকে পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দিয়েছেন এরশাদ। রওশন এরশাদ এবং জি এম কাদের একই সূত্রে গাঁথা। সবাই মিলেই দলকে এগিয়ে নিতে হবে।

এ ছাড়া সভায় সাহিদুর রহমান টেপা, শেখ মুহাম্মাদ সিরাজুল ইসলাম, সুনীল শুভ রায়, হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, আজম খান, আতিকুর রহমান আতিক, লে. জে. (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, মো. মিজানুর রহমান, আলমগীর সিকদার লোটনসহ মোট ৩৮ জন প্রেসিডিয়াম ও সংসদ সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

মহাসচিবের সংবাদ সম্মেলন : জাপা মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, সিএমএইচ কর্তৃপক্ষ চাইলে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর থেকে চিকিৎসক আনার বিষয়ে বৈঠকে কথা হয়েছে। কিছুটা সুস্থ হলে সিঙ্গাপুরে নেওয়ার প্রস্তুতিও রয়েছে। আগামী শুক্রবার সারা দেশে এরশাদের সুস্থতায় দোয়া মাহফিল কর্মসূচি ঘোষণা করেন তিনি। অ্যাডভোকেট কাজী ফিরোজ রশীদকে আহ্বায়ক এবং সৈয়দ আবু হোসেন বাবলাকে সদস্যসচিব করে ৯ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি করা হয়েছে। এরশাদের পরিস্থিতির বিষয়ে সারা দেশের দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তারা যোগাযোগ রাখবেন।

সর্বশেষ খবর