শুক্রবার, ৫ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

চট্টগ্রামে শিক্ষক কেন লাঞ্ছিত

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি অব চিটাগাং (ইউএসটিসি)-এর ইংরেজি বিভাগের উপদেষ্টা অধ্যাপক মাসুদ মাহমুদকে শারীরিকসহ নানাভাবে লাঞ্ছিত করে ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত করার অপচেষ্টার অভিযোগ ওঠেছে। তার মতো একজন প্রবীণ দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষকের প্রতি প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়েই শরীরে কেরোসিন ঢেলে হত্যার চেষ্টা চালানো হয়েছে বলে জানা যায়। এ ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শিক্ষক সমিতি। তাছাড়া গত এপ্রিল মাসে তাঁকে হয়রানির প্রতিবাদের বিবৃতি দিয়েছিলেন দেশের বরেণ্য ৫০৭ বিশিষ্ট নাগরিক। এই ঘটনার আগেও ইংরেজি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক সদ্যপ্রয়াত শহীদুল্লাহকে নানাভাবে লাঞ্ছিত করে বিদায় দেওয়া হয়েছিল।  গত ২ জুন অধ্যাপক মাসুদ মাহমুদকে নিজ কক্ষ থেকে বের করে গায়ে কেরোসিন ঢেলে হত্যার চেষ্টা চালায় ইংরেজি বিভাগেরই কয়েকজন শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় খুলশী থানার পুলিশ ইউএসটিসির ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্স শ্রেণির ছাত্র মাহমুদুল হাসানকে (২২) গ্রেফতার করে। তাছাড়া ঘটনার দিন রাতেই ইউএসটিসির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার দিলীপ কুমার বড়ুয়া বাদী হয়ে খুলশী থানায় মামলা করেন। মামলার এজাহারে অধ্যাপক মাসুদ মাহমুদের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়। মাহমুদুল হাসান বর্তমানে দুই দিনের রিমান্ডে আছেন। খুলশী থানার ওসি প্রণব চৌধুরী বলেন, ‘গ্রেফতারকৃত ইউএসটিসির এক ছাত্র দুই দিনের রিমান্ডে আছে। শনিবার তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তার বিরুদ্ধে অধ্যাপক মাসুদ মাহমুদকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে।’ ইউএসটিসির উপ-উপাচার্য মুহাম্মদ নুরুল আবসার বলেন, ‘সম্প্রতি মৃত্যুবরণকারী ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক শহীদুল্লাহকেও নানাভাবে হেনস্তা করা হয়েছিল। এখন মাসুদ মাহমুদের সঙ্গেও করা হচ্ছে। দুজনই দক্ষ, মেধাবী এবং সিদ্ধান্তের প্রতি অটল থাকতেন। যা ঘটেছে তা কোনোভাবেই কাম্য নয়।’

সভ্য সমাজের জন্য লজ্জার : অধ্যাপক মাসুদ মাহমুদ বলেন, ‘একজন শিক্ষককে এভাবে অপমান করাটা সভ্য সমাজের জন্য লজ্জার। জাতি হিসেবে আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যের। কেবল আমি নই, এ বিভাগের সাবেক অধ্যাপক শহীদুল্লাহকেও একই কায়দায় অপমান-হেনস্তা করে ক্যাম্পাস থেকে একটি চিহ্নিত চক্র বিতাড়িত করেছিল। চক্রটি চায় না এ বিভাগে ভালো কোনো শিক্ষক থাকুক। তাই অতীতের মতো আমিও প্রতিহিংসার শিকার হলাম।’ তিনি বলেন, ‘৫০ বছর ধরে আগলে রেখে সংরক্ষণ করে আসছি ‘দ্য ইংলিশ ক্রিটিক্যাল টেক্সট’ নামের একটি বই। কিন্তু ওই দিন দুর্বৃত্তরা বইটি আমার হাত থেকে কেড়ে নিয়ে ছুড়ে মারে। এটি আমার অসম্ভব প্রিয় বই ছিল। বইটিতে আমার নানা তথ্য, এ জি স্টক নামের একজন শিক্ষিকার অটোগ্রাফ (যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি ও আমার বাবার শিক্ষক) এবং প্রয়াত স্যারদের লেখা কমেন্টস ছিল। আমি পুলিশকে বলেছি, সিসি ক্যামেরা দেখে হলেও আমার বইটি উদ্ধার করে দিতে।’

ঘটনার নেপথ্যে : ইউএসটিসির কিছু শিক্ষার্থীকে নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত না থাকায় পরীক্ষায় অংশ নিতে দেননি অধ্যাপক মাসুদ মাহমুদ। তাছাড়া এ প্রতিষ্ঠান থেকে কিছু শিক্ষক চাকরিচ্যুতও হয়েছিলেন। কিন্তু পরে পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারা শিক্ষার্থীরা এবং চাকরিচ্যুত কয়েকজন শিক্ষক এক হয়ে মাসুদ মাহমুদকে ফাঁসানোর তৎপরতায় নেমেছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে।

সর্বশেষ খবর